>২৭ অক্টোবর শুরু হতে যাচ্ছে নতুন ফুটবল মৌসুম। শিরোপার লড়াইয়ে থাকা দলগুলোর বিভাগভিত্তিক শক্তি বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে এ প্রতিবেদনে।
দেশের ফুটবলের বাজারে বিদেশি কোটায় আক্রমণভাগে বেশি জোর দেওয়া হলেও দেশীয় খেলোয়াড়দের মধ্যে রক্ষণভাগের কদর করা হয় বেশি। সাম্প্রতিক সময়ে স্থানীয়দের মধ্যে রক্ষণভাগের সেরা খেলোয়াড় তপু বর্মন। সাইফ স্পোর্টিং থেকে আবাহনী লিমিটেডে ফিরেছেন এই সেন্টারব্যাক। নতুন মৌসুমে খাতা-কলমের হিসাবে রক্ষণভাগে সেরা কোন দলগুলো, সেটা নিজেই জানাচ্ছেন তপু।
প্রিমিয়ার লিগের শক্তিমত্তা বিচার পরীক্ষার খাতার মতোই অঙ্ক কষে বের করা হবে। যেহেতু রক্ষণই শিরোপা জেতায় (ইতিহাসে অমর থাকবেন এমন এক কোচের মন্তব্য এটি), তাই সেটাই গুরুত্ব পাচ্ছে সবচেয়ে বেশি। মোট ১০০ মার্কের মধ্যে রক্ষণভাগ পাচ্ছে ৪০, মধ্যমাঠ ৩০, আক্রমণভাগ ৩০। রক্ষণের মধ্যে অনুমিতভাবেই থাকছে গোলরক্ষকের অন্তর্ভুক্তি। দেশের ফুটবল জায়ান্টদের শক্তির ধারণা দেওয়ার ধারাবাহিকে থাকবে মধ্যমাঠ ও আক্রমণভাগের কথা। ফলে অঙ্ক কষেই ধারণা নেওয়া যাবে কাদের হাতে উঠতে পারে পেশাদার প্রিমিয়ার লিগের ১১তম শিরোপা।
আবাহনী লিমিটেড
বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের রক্ষণভাগে ফিরে এসেছেন তপু বর্মন। পুরোনোদের মধ্যে আছেন মামুন মিয়া, ওয়ালি ফয়সাল, রায়হান হাসান ও মোহাম্মদ বাদশা। বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা রক্ষণভাগ বলা যায়। এ ছাড়া আফগান ডিফেন্ডার মাশি সাইগানি তো আছেনই।
আবাহনীর বর্তমান কোচ জাকারিয়া বাবু সাধারণত দলকে ৪-৩-৩ ফরমেশনে খেলান। এ ক্ষেত্রে একাদশে রক্ষণ লাইনআপ হতে পারে—রাইটব্যাকে রায়হান, লেফটব্যাকে ওয়ালি, সেন্টারে তপু বর্মনের সঙ্গে বাদশা অথবা সাইগানি। আবাহনীর দুই ফুলব্যাকই ওভার লেপিংয়ে পারদর্শী। আর গোলবারে আছে আবাহনীর দীর্ঘদিনের ভরসা দীর্ঘদেহী গোলরক্ষক শহিদুল আলম সোহেল। সব মিলিয়ে তপুর চোখে আবাহনীর রক্ষণভাগই অন্যতম সেরা। নিজের দলকে ৩০ মার্ক দিচ্ছেন তপু।
বসুন্ধরা কিংস
প্রিমিয়ার ফুটবলে নাম লিখিয়ে শুরুতেই হইচই ফেলে দিয়েছে বসুন্ধরা কিংস। দলের প্রতিটা বিভাগের মতো রক্ষণভাগেও চমক আছে তাদের। স্থানীয়দের মধ্যে অন্যতম সেরা ডিফেন্ডার নাসিরউদ্দীন চৌধুরীকে আবাহনী লিমিটেড থেকে দলে ভিড়িয়েছে তাঁরা। চট্টগ্রাম আবাহনী থেকে নিয়েছে নুরুল নাঈম ফয়সাল ও সুশান্ত ত্রিপুরাকে। সবচেয়ে বড় সাইনিং হলো স্প্যানিশ সেন্টারব্যাক জর্জ গোটর ব্লাশ। যিনি গত মৌসুমে খেলেছেন মালদ্বীপের নিউ রেডিয়ান্টে।
বসুন্ধরার স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজোনের পছন্দ ৪-৩-৩ ফরমেশন। এ ক্ষেত্রে একাদশে রক্ষণ লাইনআপ হতে পারে রাইটব্যাকে সুশান্ত, লেফটব্যাকে নুরুল নাঈম, সেন্টারে নাসিরউদ্দীনের সঙ্গে স্প্যানিশ জর্জ গোটর। আর গোলরক্ষক হিসেবে প্রথম পছন্দ হতে পারেন পরীক্ষিত মিতুল হোসেন। রিজার্ভ বেঞ্চটাও বেশ পোক্ত। অভিজ্ঞ রেজাউল রেজা, দিদারুল হক, সাদ্দাম হোসেন অ্যানি। সব মিলিয়ে বসুন্ধরাকেও ৩০ মার্ক দিচ্ছেন তপু।
শেখ জামাল ধানমন্ডি
তারকানির্ভর নয়, পারফরম্যান্সের বিচারে দল গড়েছে শেখ জামাল। রক্ষণে পুরোনো মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, মোহাম্মদ মামুন, শ্যামল মিয়া ও শওকত রাসেল আছেন। নতুনে মোহামেডান থেকে যোগ দিয়েছেন শেষ লিগের অন্যতম পারফরমার মনজুর রহমান মানিক। গোলরক্ষক হিসেবে প্রথম পছন্দ হতে পারে পুরোনো সামিউল ইসলাম মাসুম। কোচ আপুসি জোসেফের দলের রক্ষণভাগও ৩০ পাচ্ছে তপুর কাছ থেকে।
শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র
অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যের মিশ্রণে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের রক্ষণভাগও শক্তিশালী। পুরোনোদের মধ্যে আছেন বিশ্বনাথ ঘোষ ও রাশেদুল আলম মনি। নতুনে এসেছেন ইয়াসিন খান ও আরিফুল ইসলাম। এ ছাড়া বিদেশি কোটায় নাইজেরিয়ান সেন্টারব্যাক এলিসন উদোকা। আর গোলপোস্টের নিচে দেশের সেরা গোলরক্ষক আশরাফুল রানা। অনেকের চোখেই সেরা রক্ষণ হতে পারে এটি। যেকোনো দলের জন্যই এই বাধা টপকে গোলের রাস্তা খুঁজে পাওয়া বেশ কষ্টকর হবে।
আর কোচ সাইফুল বারি টিটুর ট্যাকটিকসের খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ জমাট রক্ষণ নিশ্চিত করা। ৪-৩-৩ ফরমেশনে তাঁর রক্ষণ লাইনআপ হতে পারে রাইটব্যাক বিশ্বনাথ, লেফটব্যাক খালেকুজ্জামান সবুজ, সেন্টারব্যাক এলিসনের সঙ্গে ইয়াসিন। ২০১২-১৩ মৌসুমের ট্রেবল জয়ীদের এই রক্ষণভাগকেও ৩০ দিচ্ছেন তপু।
সাইফ স্পোর্টিং
তারকার পেছনে না ছুটে, তরুণদের ওপরেই আস্থা রেখেছে সাইফ। পুরোনোদের মধ্যে তরুণ রহমত মিয়া, রিয়াদুল হাসান ও কলম্বিয়ান ড্যানিয়ের কর্দোবা। নতুন এসেছেন রাইটব্যাক নাসিরুল ইসলাম ও আসাদুজ্জামান বাবলু। রক্ষণভাগে তারুণ্যের প্রাধান্য দেখা গেলেও প্রাক্–মৌসুমে ভারতে অনুশীলন ম্যাচ ও টুর্নামেন্টে দলটি বেশ ছন্দে ছিল। হেভিওয়েট কোচ স্টুয়ার্ট হলও ৪-৩-৩ ফরমেশনে খেলাতে পছন্দ করেন। এই কৌশলে পরিবর্তন না আসলে প্রথম পছন্দ হতে পারেন লেফটব্যাক রহমত, রাইটব্যাক নাসিরুল, সেন্টারব্যাক ড্যানিয়েরের সঙ্গে রিয়াদুল। দুশ্চিন্তার বিষয় হতে পারে রিজার্ভ বেঞ্চে পরীক্ষিত ফুটবলার না থাকা। সাবেক দলকে ২৫ দিচ্ছেন তপু।
চট্টগ্রাম আবাহনী
কিরগিজস্তান জাতীয় দলের সেন্টারব্যাক ডেনিয়েল তাঁকে দলে ভিড়িয়েছে চট্টগ্রামের ক্লাবটি। সঙ্গে আছেন আরেক বিদেশি সেন্টারব্যাক নাইজেরিয়ান মুফতা আউয়াল। সুতরাং সেন্টারব্যাক নিয়ে তাদের দুশ্চিন্তা না করলেও চলছে। সাইড ব্যাকরাও মানসম্মত। রাইটব্যাকে আছেন অরূপ বৈদ্য, লেফটব্যাকে খালেকুজ্জামান সবুজ। এই দলের রক্ষণভাগকে ২৫ দিচ্ছেন তপু।
ঢাকা মোহামেডান নিজেরাই শিরোপা লড়াইয়ে থাকবে না বলে স্বীকার করে নেওয়ায়, শক্তিমত্তার বিচারে তাদের আনা হয়নি।