>কে জিতবে বিশ্বকাপ? কার পক্ষে ধরতে চান বাজি? প্রথম আলো অনলাইনের নতুন ধারাবাহিক : যে ৫ কারণে। প্রথম পর্বে থাকছে, যে ৫ কারণে বিশ্বকাপ জিতবে ব্রাজিল। লিখেছেন হাসান জামিলুর রহমান
বিশ্বকাপ আর ব্রাজিল সমার্থক বললেও খুব একটা ভুল বলা হবে না। যদিও নিজেদের জেতা পাঁচ বিশ্বকাপের শেষটি তাঁরা জিতেছে ২০০২ সালে। পরের তিনটি বিশ্বকাপে প্রত্যাশামতো ফলাফল করতে পারেনি। নিজেদের আঙিনায় হওয়া ২০১৪ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে জার্মানির কাছে বিধ্বস্ত হয়েছিল ৭-১ গোলে। যার ক্ষত ভোলার জন্য এবার আটঘাট বেঁধেই নেমেছে সাম্বা ফুটবলের দেশটি। অনেকের মতে, এবারের সবচেয়ে ফেবারিট দলটির নাম ব্রাজিল। যে পাঁচটি কারণে এবার বিশ্বকাপ জিততে পারে নেইমারের দল :
১. দুর্দান্ত স্কোয়াড
২০০২ সালের বিশ্বকাপের পর ব্রাজিলের এবারের বিশ্বকাপ স্কোয়াডই সম্ভবত সবচেয়ে মানসম্পন্ন খেলোয়াড়ে পরিপূর্ণ। গোলকিপিং থেকে শুরু করে ডিফেন্স, মিডফিল্ড, ফরওয়ার্ড লাইন—সব ক্ষেত্রেই বিশ্বসেরা খেলোয়াড়দের উপস্থিতি। বিশ্বকাপ জিততে যেটি অনেক বড় প্রভাবক হিসেবে কাজ করে, সেটি হলো শক্তিশালী বেঞ্চ। এখানেও দুর্বলতা নেই ব্রাজিলের। ব্রাজিলের বেঞ্চ দিয়েই আরেকটি একাদশ গড়ে ফেলা সম্ভব। ইউরোপের শীর্ষ ক্লাবগুলোর ভরসা এমন অনেক খেলোয়াড় ব্রাজিলের প্রথম একাদশে জায়গা পাবেন না। সেই তালিকায় থাকতে পারেন এডারসন, ফিরমিনহো, ফার্নান্দিনহো, উইলিয়ান, ডগলাস কস্তার মতো তারকারও। ফলে প্রথম একাদশে যাঁরা খেলবেন, তাঁরাও নিজেদের উজাড় করে দিতে চাইবেন। প্রতিটি জায়গার জন্য একটা দলে যখন তীব্র লড়াই হয় বেঞ্চ বনাম মূল একাদশের সঙ্গে, সেটি একটি দলের ভেতর থেকে বের করে আনে সেরাটা।
২. খেলোয়াড়দের ফর্ম
দীর্ঘ ফুটবল মৌসুম শেষে বিভিন্ন ক্লাবে খেলা খেলোয়াড়দের ফর্মের ওপর দলের পারফরম্যান্স নির্ভর করে। যেখানে ব্রাজিলের মূল একাদশের খেলোয়াড়েরা আছেন উড়ন্ত ফর্মে। প্রত্যেকেই নিজেদের ক্লাবের হয়ে দেখিয়েছেন দারুণ নৈপুণ্য। চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতে এসেছেন কাসেমিরো, মার্সেলোরা। রানার্সআপ হয়েছেন ফিরমিনহো। ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ জিতেছেন জেসুস, ফার্নান্দিনহো, দানিলো, এডারসনরা। বার্সেলোনাকে জোড়া শিরোপা জিতিয়েছেন ফিলিপে কুতিনহো, পাউলিনহো। নেইমার তো পিএসজিতে গিয়ে কী আলোটাই ছড়ালেন। এই ক্লাবেই খেলেন মারকুইনহোস, থিয়াগো সিলভা। দানি আলভেজ অবশ্য চোট নিয়ে ছিটকে গেছেন।
৩. খেলার ধরন
কয়েক বছর ধরেই ব্রাজিল সমর্থকদের অভিযোগ ছিল, সেই চিরচেনা সাম্বা ছন্দের ফুটবল খেলা ব্রাজিলকে দেখা যাচ্ছে না। যে ঘরানার ফুটবল খেলে ব্রাজিল বিশ্বকে জয় করেছে, সেই ছন্দটাই যেন হারিয়ে গিয়েছিল। আশার কথা হলো, বর্তমান কোচ তিতের ফুটবল দর্শন ক্ল্যাসিক্যাল ব্রাজিলীয় ঘরানার। বাছাইপর্বে দুর্দান্ত খেলে বিশ্বকাপে এসেছে ব্রাজিল। খেলেছে দুর্দান্ত আক্রমণাত্মক ফুটবল। ১৮ ম্যাচের দীর্ঘ বাছাইপর্বে যেখানে প্রতিটি ধাপে ধুঁকেছে আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল হেরেছে এক ম্যাচে। বাছাইপর্বে ৪১ গোল করেছে ব্রাজিল। ১১ গোল খেয়েছে, ১১ ম্যাচে দল কোনো গোল খায়নি। তিতে দলের দায়িত্ব নিয়েছিলেন মাঝপথে। তিনি আসার পর ১১ ম্যাচে একটিতেও হারেনি দল। এর আগে ৭ ম্যাচে ৬টিতে জিততে পারেনি ব্রাজিল। তিতে আসার পর ব্রাজিল বাছাই পর্বে গোলই খেয়েছে মাত্র তিনটি। কী আক্রমণ, কী মাঝমাঠ, কী রক্ষণ! একই সঙ্গে তিতে ব্রাজিলের ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশিয়েছেন আধুনিকতা। প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করছেন। তাঁকে অনেকে বলে ল্যাপটপ কোচও।
৪. স্কোয়াডের অভিজ্ঞতা
গত বিশ্বকাপের দলটিই রয়ে গেছে ব্রাজিলের। দু-একটি পরিবর্তন ছাড়া কোনো বড় পরিবর্তন আসেনি দলে। যার অর্থ, গত বিশ্বকাপের পর আরও চার বছরের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে দলটি। যেই অভিজ্ঞতার অভাবই গতবার ডুবিয়েছিল তাদের। এবারের দলে অভিজ্ঞতা, তারুণ্য কিংবা দলীয় রসায়ন বা বোঝাপড়া, অভাব নেই কোনো কিছুরই। এই দল আরও পরিণত, প্রতিজ্ঞ। ক্লাব ফুটবলে নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়ে আসা। এই দলটাই বাছাইপর্বের বেশির ভাগ ম্যাচ খেলেছে। বাকি দলগুলো যেখানে প্রাথমিক স্কোয়াড দিতেই হিমশিম, ব্রাজিল কোচ তিতে সবার আগে ঘোষণা করে দিয়েছেন বিশ্বকাপের ২৩ জনের চূড়ান্ত স্কোয়াড়! লক্ষ্য কতটা পরিষ্কার!
৫. এবং একজন নেইমার
যে দলে একজন নেইমার খেলেন, সেই দল অন্যদের থেকে এমনিতেই এগিয়ে থাকে। তবে নেইমার একা নন, বিশ্বকাপ জিততে হলে পুরো ব্রাজিল দলকেই জ্বলে উঠতে হবে। যদি যোগ্য সমর্থন নেইমার পান, তাহলে ব্রাজিলের তুরুপের তাস তিনিই হতে যাচ্ছেন। পেলে, গারিঞ্চা, রোমারিও, রোনালদো, রোনালদিনহোদের উত্তরসূরি হিসেবে নিজের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখানোর জন্য এটিই নেইমারের সবচেয়ে ভালো সুযোগ। গত বিশ্বকাপের দুঃখ মুছতেও নেইমার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আর যে ব্যালন ডি’অর নামের সোনার হরিণের পিছে ছুটছেন, এ-ই তো সেরা সুযোগ!