যে ক্লাবের নুন খেয়েছেন, এখন তাদেরই হার কামনা!

সময়ের চাকা ঘুরে দুজনেরই দল বদলেছে। ছবি: টুইটার
সময়ের চাকা ঘুরে দুজনেরই দল বদলেছে। ছবি: টুইটার
একসময় কোর্তোয়া ছিলেন অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের অন্যতম বড় তারকা। মোরাতাও ছিলেন রিয়াল মাদ্রিদের। অথচ আজ দুজন মাঠে নামবেন সাবেক দলের বিপক্ষে


আজ রাতে ওয়ান্ডা মেট্রোপলিটনের পরিস্থিতি অদ্ভুত হওয়াই স্বাভাবিক। নগর প্রতিপক্ষ রিয়াল মাদ্রিদ যাচ্ছে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের মাঠে। প্রতিবছরই অন্তত দুবার করে দেখা হয় দুই দলের। আজ রাতে অবশ্য অন্য রকম অভিজ্ঞতা হবে দুই দলের দুই তারকার। আজ থেকে কয়েক বছর আগেও যে দুজন ঠিক বিপরীত দলের জার্সিতে মাঠে নেমেছেন। সময়ের ব্যবধানে সেই তাঁরা-ই আজ মাঠে নামবেন সাবেক দলের হার কামনায়। আলভারো মোরাতা আর থিবো কোর্তোয়ার জন্য এই ‘মাদ্রিদ ডার্বি’ সত্যিই অন্য রকম।

কোর্তোয়া আর মোরাতা শেষবার একে অপরের মুখোমুখি হয়েছিলেন পাঁচ বছর আগে, লিসবনে। ২০১৪ চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল দুজন উদ্‌যাপন করেছিলেন ভিন্নভাবে। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের গোলরক্ষক ছিলেন থিবো কোর্তোয়া। আর মোরাতা ছিলেন রিয়াল মাদ্রিদের উঠতি তারকা। বেঞ্চ থেকে মাঠে নেমেছিলেন ৮১ মিনিটে, যখন অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের সব দর্শকের বুকে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের আশা। আর মোরাতা তখন মাঠে নেমেছেন দলকে একটু সাহায্য করার আশায়, নিজের ট্রফি ক্যাবিনেটে আরেকটি শিরোপা যোগ করবার আশায়। শিরোপা উঠেছিল মোরাতার হাতেই। কোর্তোয়াকে দেখতে হয়েছিল সার্জিও রামোসের অসাধারণ সেই হেড, যে হেডে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের শিরোপা–স্বপ্ন হয়ে যায় ধূলিসাৎ। এরপর আরও তিনটি গোল রিয়াল মাদ্রিদের হাতে তুলে দেয় দশম চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা।

কোর্তোয়া তখন অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদে খেলছেন চেলসি থেকে ধারে এসে। দুই বছর ধারে থাকতে তিনি কী জেতেননি! অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় হয়ে উঠেছিলেন। শিরোপা নিয়ে চারবার উদ্‌যাপন করেছেন ফরচুন অব নেপচুনে। কোচ সিমিওনের প্রিয় পাত্র কোর্তোয়া স্পেন থেকে ইউরোপ—সব জায়গাতেই রেখেছিলেন নিজের শিরোপা জয়ের প্রভাব। ইউরোপা লিগ, লা লিগা, কোপা দেল রে, ইউরোপিয়ান সুপার কাপ; এক চ্যাম্পিয়নস লিগ বাদে সবই জেতা হয়েছে তাঁর। স্পেনের সময়টা তাই তাঁর জন্য ছিল স্বপ্নের মতোই। তিন মৌসুমেই হয়ে উঠেছিলেন অ্যাটলেটিকোর ‘দেয়াল’। টানা দুই মৌসুম জিতেছেন ‘জামোরা ট্রফি’-ও।

চেলসিতে এক সময় ছিলেন বন্ধু। ছবি: টুইটার

মোরাতার বেড়ে ওঠা ছিল অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের ঘরেই। কিন্তু যুব দলে থাকতেই গেটাফে ঘুরে মোরাতার জায়গা হয় রিয়াল মাদ্রিদ যুব দলে। এরপর মরিনহোর আমলে রিয়াল মাদ্রিদে ডাক পাওয়া। মাঠে তেমন দেখা না গেলেও শিরোপায় ভরে উঠছিল ভান্ডার। লা লিগা, চ্যাম্পিয়নস লিগ, কোপা দেল রে সব শিরোপাই একে একে জিতেছেন মোরাতা। রিয়াল মাদ্রিদের জার্সিতে চার মৌসুম খেলে ঘুরে এসেছেন জুভেন্টাস। সেখানে রিয়াল মাদ্রিদকে উপহার দিয়েছিলেন ভয়াবহ এক দুঃস্বপ্ন। সেমিফাইনালে এক গোল করে রিয়াল মাদ্রিদের চ্যাম্পিয়নস লিগ স্বপ্নে বাধা দিয়েছিলেন তিনি-ই। সেই মোরাতা দুই মৌসুম পর রিয়াল মাদ্রিদে ফেরত এসে জিতেছেন ডাবল! এক মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগ ও লা লিগা শিরোপা। এক মৌসুম খেলেই রিয়াল মাদ্রিদ ছাড়েন মোরাতা।

রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে এই স্প্যানিশ পাড়ি জমালেন চেলসিতে। আর চেলসি ফেরত নেয় কোর্তোয়াকে। দুজনে একসঙ্গে জুটি করে খেলেছেন মাত্র এক মৌসুম। তার মধ্যেই জিতেছেন এফএ কাপ। কোর্তোয়া ফিরে গিয়েছিলেন ২০১৪-১৫ মৌসুমেই। পিওতর চেকের পর চেলসির গোলবারের নিচে ভরসার পাত্র হয়ে ওঠেন এই বেলজিয়ান। ভরসার প্রতিদানও দিয়েছেন সময়ে সময়ে। মরিনহো থেকে কন্তে, সব সময়ই ভরসার পাত্র হয়ে ছিলেন কোর্তোয়া। জিতেছেন দুটি লিগ শিরোপা। লিগ কাপ এমনকি এফএ কাপও। অন্যদিকে আন্তোনিও কন্তে চেলসিতে আসার পর নিয়ে আসেন মোরাতাকে। যদিও সময়টা ভালো কাটেনি তাঁর, তবে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ভালো একটা অভিজ্ঞতা হয়েছে তাঁর।

এ মৌসুমেই দুই সতীর্থের পথ বেঁকে গেল দুই দিকে। মৌসুম শুরুর আগেই রিয়াল মাদ্রিদের পথ ধরেছেন কোর্তোয়া। আর শীতকালীন দলবদলের মৌসুমে অ্যাটলেটিকোর পথ ধরেছেন মোরাতা। দুজনেরই নাকি আজন্ম স্বপ্ন ছিল এই জার্সিতে মাঠে নামার। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দলের দুই তারকার গল্পটা বদলাতে সময় লেগেছে মাত্র ৫ বছর। ৬ বছর আগে রিয়াল মাদ্রিদকে হারিয়ে কোপা দেল রে জেতার পর মাদ্রিদের রাস্তায় ‘মাদ্রিদিস্তা’দের অপমান করতে করতে ‘উইনিং প্যারেড’ করেছিলেন কোর্তোয়ারা। আর চ্যাম্পিয়নস লিগে দু্ই বছর আগে অ্যাটলেটিকোকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা নিয়ে মোরাতা আনন্দ করেছিলেন ‘সিবলেস স্কয়ার-এ।

একসময় দুজন খেলতেন দুই দলের জার্সিতে। ছবি: টুইটার

দুই দলে খেলা খেলোয়াড়ের নাম মনে করতে বেশি দূর যেতে হবে না। রিয়াল মাদ্রিদ ডাগ আউটে বসে থাকা কোচ সান্তিয়াগো সোলারি নিজেই গায়ে চড়িয়েছেন দুই দলের জার্সি। এ তালিকায় নাম আছে হুগো সানচেজ, এন্তোনিও রেয়েস, হুয়ানফ্রান, এমনকি রাউলেরও। ‘মাদ্রিদ ডার্বি’ কে অবশ্য স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছেন কোর্তোয়া, ‘প্রতিপক্ষ দলের দিকে জিনিসপত্র ছুড়ে মারা, দুঃখজনকভাবে এটা ফুটবলের অংশ হয়ে গিয়েছে। এটাকে মেনেই সামনে এগোতে হবে।’

মাঠে এরই মধ্যে দুয়ো শুনতে হয়েছে মোরাতাকে। আজন্ম শত্রু থাকা খেলোয়াড়কে কোনো সমর্থকই স্বাভাবিকভাবে নেননি। কোর্তোয়াকেও আদর করে বরণ করবেন না অ্যাটলেটিকো সমর্থকেরা। পাঁচ বছরের ব্যবধানে পুরো উল্টো চিত্রের মুখোমুখি হতে হচ্ছে দুজনকে আজ বাংলাদেশ সময় রাত ৯.১৫ মিনিটে—মাদ্রিদ ডার্বি!