>একই বছরে বিশ্বকাপ ও চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার কীর্তি মাত্র নয়জনের। যদি চ্যাম্পিয়নস লিগ নামটাতে জোড় দেওয়া হয় তবে সেটা নেমে আসবে মাত্র তিনে! জেনে নেওয়া যাক তাঁদের কথা
স্পেনের এই সর্বনাশ না করলেও পারত রিয়াল মাদ্রিদ!
কী সর্বনাশ? এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছে লস ব্লাঙ্কোরা। ইউরোপিয়ান ফুটবলে স্পেনের শ্রেষ্ঠত্ব আরও একবার প্রমাণ করল রিয়াল। গত পাঁচটি চ্যাম্পিয়নস লিগই যে গেছে স্পেনে। কিন্তু অন্যান্য বছরে চ্যাম্পিয়নস লিগ জয় আনন্দ দিলেও বিশ্বকাপের বছর বলেই তো শঙ্কা। চ্যাম্পিয়নস লিগ বিজয়ী ক্লাবের দেশের কপালে যে বিশ্বকাপ থাকে না!
২০১৪ সালে চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছিল রিয়াল। সেবার অন্যতম ফেবারিট হয়েও প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নেয় স্পেন। ২০১০ সালে আবার ফেবারিট তকমা নিয়েও চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতা হয়নি বার্সেলোনার। এতে লাভ হয়েছিল স্পেনেরই। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জিতেছিল ‘লা রোহা’রা।
এমন ঘটনা কিন্তু অনেক দিন ধরেই চলছে। যে বছর কোনো দল চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতে, সেবারই কপাল পোড়ে ওই দেশের। ১৯৯৪ সালে ইতালির রানার্সআপ হওয়ার কারণ? ওই যে এসি মিলান পরেছিল ইউরোপ সেরার মুকুট! ১৯৫৫ সালে প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার পর থেকে চ্যাম্পিয়নস লিগের এই অভিশাপ কাটাতে পেরেছে মাত্র একটি দল—জার্মানি। ১৯৭৪ চ্যাম্পিয়নস লিগ (তখনকার ইউরোপিয়ান লিগ) জিতেছিল বায়ার্ন মিউনিখ। সেবার সবাইকে চমকে দিয়ে বিশ্বকাপ জিতেছিল পশ্চিম জার্মানি।
ওই শিরোপাটা জিতেই অনন্য এক অর্জনে নাম লিখিয়েছিলেন সেপ মেয়ার, পল ব্রেইটনার, হানস-জর্জ শার্জেনবেগ, ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার, জার্ড মুলার, উলি হোয়েনেস। একই বছরে বিশ্বকাপ ও ইউরোপীয় ক্লাব প্রতিযোগিতা জেতার প্রথম কীর্তি এঁদের। এই ছয়জনের পর এমন কীর্তি আর খুব বেশি খেলোয়াড় করে দেখাতে পারেননি।
১৯৯৮ সালের আগে এমন কিছু আর দেখা যায়নি। সেবার রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছিলেন মিডফিল্ডার ক্রিস্টিয়ান কারেম্বু। সেবার ফ্রান্সের হয়েও বিশ্বকাপ জিতেছিলেন কারেম্বু। পরের বিশ্বকাপেও রিয়ালের আরেক খেলোয়াড় এমন কীর্তি গড়েছেন। ২০০২ সালে জিনেদিন জিদানের ওয়ান্ডার গোলে চ্যাম্পিয়নস লিগের স্বাদ পেয়েছিলেন রবার্তো কার্লোস। পরে ব্রাজিলের জার্সিতে বিশ্বকাপও জেতেন তিনি। এরপর এমন কিছু দেখতে এক যুগের অপেক্ষা। এবারও রিয়ালের নামটা জড়িয়ে আছে। ২০১৪ সালে বিশ্বকাপজয়ী জার্মান দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন রিয়াল মিডফিল্ডার স্যামি খেদিরা।
এবারও রিয়াল ইউরোপ-সেরা। সে কথা মাথায় রাখলে আশাবাদী হয়ে উঠতেই পারেন কাসেমিরো ও মার্সেলো। ফ্রান্সকে আরেকটি বিশ্বকাপ এনে দেওয়ার চিন্তাটাও আসতে আরে রাফায়েল ভারানের মাথায়। বিশ্বকাপ জেতা জার্মানির সর্বকালের সেরা একাদশে জায়গা করে টনি ক্রুসই-বা কেন আশা ছাড়বেন? একটু দূরের আশা হলেও ক্রোয়েশিয়াকে নিয়ে লুকা মডরিচ ও পর্তুগালকে নিয়ে বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্ন দেখতে পারেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোও। কেইলর নাভাসের কোস্টারিকা কিংবা আশরাফ হাকিমির মরক্কো বিশ্বকাপ জিতবে, এমন স্বপ্ন বোধহয় নাভাস-হাকিমিরাও দেখেন না।
১৯৭৪’র সেই জার্মানির মতো যদি অভিশাপ কাটিয়ে উঠতে পারে স্পেন, তবে সার্জিও রামোস, ইসকো, মার্কো এসেনসিও, দানি কারভাহাল, নাচোরাও ইতিহাসের অংশ হয়ে যাবেন।