১৯৮৬ বিশ্বকাপের আর্জেন্টিনা-ইংল্যান্ডের কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচটির কথা মনে আছে? ভুলে যাওয়ার কথা নয়। ম্যাচটি নিয়ে এখনো দারুণ তোলপাড় হয় সবার মাঝে। মূলত তর্কটা ম্যারাডোনার হাত দিয়ে গোল করা নিয়ে। অবশ্য ম্যারাডোনা কিন্তু মানতে রাজি নন যে তিনি হাত দিয়ে গোল করেছেন, তাঁর দাবি ওটি ঈশ্বরের হাত ছিল। রেফারি ম্যারাডোনার করা হ্যান্ডবল বুঝতে না পারায় ইংল্যান্ডকেও শেষমেশ ২-১ গোলে হারতে হয়েছিল।
এ তো গেল ১৯৮৬ সালের কথা, ২০১০ বিশ্বকাপেও কিন্তু এমন বড় একটি ভুল হয়েছিল। সে ম্যাচেও রেফারির ভুল সিদ্ধান্তে কপাল পুড়েছিল ইংল্যান্ডের। দ্বিতীয় পর্বের সে ম্যাচে সেবার ইংল্যান্ডের প্রতিপক্ষ ছিল জার্মানি।
ম্যাচে জার্মানি তখন ২-১ গোলে এগিয়ে। ইংল্যান্ডের ফরোয়ার্ড ফ্র্যাংক ল্যাম্পার্ডের নেওয়া একটি শট বারে আঘাত হানে। তবে, বারে লাগলেও শেষপর্যন্ত বলটি কিন্তু গোল লাইনের ভেতরেই পরেছিল। কিন্তু রেফারি জর্জ ল্যারিওনডা তা বুঝতে পারেননি। গোলটি হলে কিন্তু ২-২ সমতায় ফিরতে পারত ইংল্যান্ড দল। অথচ সেই ম্যাচটিই ৪-১ গোলে হারতে হয়েছিল ইংলিশদের।
রেফারির ভুলে যে পুরো ম্যাচের ফলাফলই পালটে যেতে পারে তা ইতিহাস অনেকবার দেখেছে। তবে এবারের বিশ্বকাপে এমন কোনো ভুল হবে না তা কিন্তু আশা করাই যেতে পারে। ৮৮ বছরের বিশ্বকাপ ফুটবল ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এবার ভিএআর (ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি) সিস্টেম চালু হতে চলেছে।
অফসাইড, লাল কার্ড, গোল এবং পেনাল্টি—এই চারটি বিষয়কে সামনে রেখে রাশিয়া বিশ্বকাপে ভিএআর পরিচালিত হবে। পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে এবার ১৩ জন অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি ম্যাচ পরিচালনার কাজে যুক্ত থাকবেন। ম্যাচে বিতর্কিত কোনো মুহূর্তের সৃষ্টি হলেই রেফারি চাইলে ভিএআরের সহযোগিতা নিতে পারবেন। রেফারির যদি কখনো মনে হয় তার সিদ্ধান্তটি ভুল হলেও হতে পারে তবেই কেবল রেফারি নিজেই অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারির শরণাপন্ন হবেন। অনেকটা ক্রিকেটের থার্ড আম্পায়ারের মতো। তবে ক্রিকেটের মতো ফুটবলে কিন্তু খেলোয়াড়রা রিভিউ নেওয়ার স্বাধীনতা পাবেন না।
ফুটবলকে আরও নিখুঁত করতেই ফিফার এমন সিদ্ধান্ত। ইউরোপের বেশ কিছু লিগে এর মাঝেই চালু হয়েছে ভিএআর। সেসব সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক যে হয়নি, সেটাও নয়। ফলে বিতর্ক কমাতে গিয়ে উল্টো বিতর্ক বাড়িয়েও দিতে পারে এ পদ্ধতি। এবারের বিশ্বকাপটি অন্যান্য বিশ্বকাপ থেকে একটু আলাদাই বটে।