আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের বাইরে অপেক্ষায় এক ম্যারাডোনা–ভক্ত। চোখে তাঁর জল।
আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের বাইরে অপেক্ষায় এক ম্যারাডোনা–ভক্ত। চোখে তাঁর জল।

ম্যারাডোনার চিকিৎসকদের দিকে আঙুল উঠছে

প্রায় তিন কিলোমিটার লম্বা লাইন লেগেছে মানুষের। সবাই ডিয়েগো ম্যারাডোনাকে শেষ একনজর দেখতে চান!

সর্বসাধারণের শেষ শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানোর উদ্দেশ্যে আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্টের বাসভবন কাসা রোসাদায় রাখা হয়েছে ম্যারাডোনার দেহ। তাঁকে দেখতেই কাসা রোসাদার সামনে তিন কিলোমিটার লম্বা লাইন, একেক লাইনে আবার গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে চার-পাঁচজন। বিশৃঙ্খলা হচ্ছে একটু-আধটু, পুলিশকেও তৎপর হতে হচ্ছে মাঝেমধ্যে। এরই মধ্যে আর্জেন্টাইন কিংবদন্তির মৃত্যুর জন্য তাঁর চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত কর্মীদের দিকে আঙুল তুলেছেন তাঁর আইনজীবী মাতিয়াস মোরলা।

তাঁর অভিযোগ, ম্যারাডোনার মৃত্যুর আগে ১২ ঘণ্টায় নাকি তাঁর কাছে যাননি কোনো চিকিৎসক, অ্যাম্বুলেন্স আসতেও আধা ঘণ্টার মতো দেরি হয়েছে। সবকিছুর তদন্তের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন মোরলা।

নাপোলির স্টেডিয়ামের বাইরে প্রিয় তারকাকে শ্রদ্ধা জানাতে ম্যারাডোনা–ভক্তদের ভিড়।

৩ নভেম্বর মস্তিষ্কে রক্তজমাট বাঁধায় ম্যারাডোনার একবার অস্ত্রোপচার হয়েছিল। সেখান থেকে সেরে ওঠার পর ম্যারাডোনার মাদকের নেশা কাটাতে ও সার্বিক দেখভালের জন্য তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় বুয়েনস এইরেসের সান আন্দ্রেসে এক ব্যক্তিগত ক্লিনিকে। সেখানে ম্যারাডোনার দু-তিনজন আত্মীয় আর চিকিৎসক-নার্সরাই ছিলেন শেষ কয়েক দিনে ম্যারাডোনার সার্বক্ষণিক সঙ্গী। কিন্তু সেই চিকিৎসকেরাই পরশু ম্যারাডোনাকে ‘একা’ রেখেছেন বলে অভিযোগ মোরলার।

‘আজ দিনটা অনেক কষ্ট, ব্যথা আর স্মৃতিকাতরতার। আমার বন্ধুর বিদায়ের কষ্টটা অনুভব করছি আমি, শেষ দিন পর্যন্ত যাঁর প্রতি আমার সমর্থন ও বিশ্বস্ততা অটুট ছিল’—বিবৃতিটা এভাবেই শুরু করেছেন মোরলা। এরপরই তাঁর অভিযোগ, ‘...এটা অবিশ্বাস্য যে ১২ ঘণ্টা আমার বন্ধুকে কেউ দেখতে যায়নি, কিংবা কোনো স্বাস্থ্য কর্মকর্তা তাঁর আশপাশে ছিল না। অ্যাম্বুলেন্স আসতেও আধা ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছে, যেটা শাস্তিযোগ্য নির্বুদ্ধিতা।’

আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের বাইরে ম্যারাডোনা–ভক্তদের আহাজারি।

এ নিয়ে তদন্তের ডাকও দিয়েছেন মোরলা, ‘এই দিকটা অগ্রাহ্য করা উচিত হবে না। আমি কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করব শেষ পর্যন্ত এটার তদন্ত করার জন্য। ডিয়েগো আমাকে যেমনটা বলতেন, ‘‘বন্ধু, অন্যায়ে দয়া দেখাবে না।”

অবশ্য এই মোরলা নিজেও বিতর্কের কেন্দ্রে। ২০১৮ সালে ম্যারাডোনার সাবেক স্ত্রী ক্লদিয়া ভিয়াফোন ও দুই মেয়ে দালমা ও জিয়ান্নিনার বিরুদ্ধে ম্যারাডোনার সম্পত্তি চুরির অভিযোগ এনেছিলেন এই মোরলা। তখন থেকেই ম্যারাডোনার সেই স্ত্রী ও দুই মেয়ের সঙ্গে বনিবনা নেই এই আইনজীবীর। আজ প্রেসিডেন্টের বাসভবনে ম্যারাডোনাকে শেষ দর্শনে এসে এক দর্শক ‘মোরলা হত্যাকারী’ বলে বেশ কয়েকবার চিৎকার করে ওঠেন বলে জানাচ্ছে আর্জেন্টাইন সংবাদমাধ্যম টিওয়াইসি স্পোর্টস। সে সময় অন্য প্রান্ত থেকে হাততালির আওয়াজও নাকি শোনা গেছে!