চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মাঠে গিয়ে ৫-০ গোলের জয় নিয়ে আসা, এসি মিলান, আতলেতিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে দাপট দেখিয়ে জেতা—দুর্দান্ত ফর্মেই ছিল লিভারপুল। ইউরোপের একমাত্র দল হিসেবে এখনো অপরাজিত ছিল ইয়ুর্গেন ক্লপের দল।
ছিল বলতে হচ্ছে, কারণ সে রেকর্ড গত রাতে কাটা পড়েছে অপ্রত্যাশিত এক প্রতিদ্বন্দ্বীর হাতে। ওয়েস্ট হ্যামের মাঠে গিয়ে গত রাতে লিগ ম্যাচে ৩-২ গোলে হেরে এসেছে লিভারপুল। ওয়েস্ট হ্যামের হয়ে গোল করেছেন স্প্যানিশ মিডফিল্ডার পাবলো ফোরনালস ও ফরাসি ডিফেন্ডার কুর্ত জুমা। প্রথম গোলটা লিভারপুলের গোলকিপার আলিসনের আত্মঘাতী।
লিভারপুলের হয়ে ২ গোল করেছেন রাইটব্যাক ট্রেন্ট অ্যালেক্সান্ডার আরনল্ড ও স্ট্রাইকার দিভক অরিগি। তারকা ত্রয়ী মোহাম্মদ সালাহ, সাদিও মানে ও দিওগো জোতা ছিলেন নিষ্প্রভ। এর আগে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে টানা ২৫ ম্যাচ অপরাজিত ছিল লিভারপুল। মৌসুমের এমন এক সময়ে তারা রেকর্ডটা হারাল, যখন জয়টা বড্ড দরকারি ছিল ওপরে থাকা চেলসি ও ম্যানচেস্টার সিটির সঙ্গে টেক্কা দেওয়ার জন্য।
ম্যাচের শুরুতেই এগিয়ে যায় ওয়েস্ট হ্যাম। ম্যাচের চার মিনিটেই স্প্যানিশ মিডফিল্ডার পাবলো ফোরনালসের বেঁকে আসা কর্নার আটকাতে না পেরে উল্টো নিজেদের জালে ঢুকিয়ে দেন লিভারপুলের গোলকিপার আলিসন বেকার।
তবে গোলটা নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে বেশ। বলা হচ্ছে, ফোরনালসের কর্নার থেকে আসা বল ধরার সময় ফাউলের শিকার হয়েছিলেন আলিসন। ওয়েস্ট হ্যামের ইতালিয়ান ডিফেন্ডার আনহেলো ওগবোন্না আলিসনের সামনে ঝাঁপিয়ে নিজের হাত দিয়ে আলিসনের হাতে ধাক্কা দিয়েছিলেন, এ কারণে আলিসনের হাত বিচ্যুত হয়ে যায়। যে হাতের বল ধরার কথা ছিল, বিচ্যুত হওয়ার কারণে হাতে বল লেগে উল্টো জালে ঢুকে যায়।
রেফারির এ সিদ্ধান্তে বেশ খেপেছেন ক্লপ। ম্যাচের শেষে স্কাই স্পোর্টস আর বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ নিয়ে নিজের বিরক্তি প্রকাশ করেছেন, ‘ম্যাচের কিছু কিছু সিদ্ধান্ত ভিন্ন হলেও পারত। প্রথমে ওরা আমাদের গোলকিপারের ওপর ফাউল করে গোল আদায় করে নিল। সেই খেলোয়াড়ের হাতের সঙ্গে আলিসনের হাত ধাক্কা খেল। এ অবস্থায় সে কীভাবে উড়ন্ত বল ধরবে? এর কোনো মানেই হয় না। এ ক্ষেত্রে আলিসনের আর কী করার ছিল? এ কারণে গোলকিপারদের দেখে রাখতে হয় ম্যাচের মধ্যে, কোনো খেলোয়াড় যেন গোলকিপারের হাতে ওভাবে ধাক্কা না দেয়। হাত একজন গোলকিপারের শরীরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা অঙ্গ। রেফারিকে স্বাভাবিক সিদ্ধান্ত নিতে হতো, তিনি সেটা করেননি। আমরা ফাউলটা দেখেছি আবার। ওগবোন্নার হাত আলিসনের হাতের সঙ্গে ধাক্কা খেল। যে কারণে আলিসনের হাত নড়ে গেল আর ওই নড়ে যাওয়া হাতে বল লেগে জালে ঢুকে গেল।’
পরে এই গোলের জন্য ভিএআরের সাহায্য নেওয়া হলেও লাভ হয়নি লিভারপুলের। প্রথমার্ধের শেষ দিকে রাইটব্যাক ট্রেন্ট আলেক্সান্ডার আরনল্ডের দুর্দান্ত বাঁকানো এক ফ্রি-কিকে সমতায় ফেরে অল রেডরা। দ্বিতীয়ার্ধে আবারও লিভারপুলকে চেপে ধরে ওয়েস্টহ্যাম।
৬৭ মিনিটে লিভারপুলের মিডফিল্ডের ফর্মহীনতার সুযোগ নিয়ে দুর্দান্তভাবে বল নিয়ে লিভারপুলের রক্ষণভাগে ঢুকে যান ইংলিশ উইঙ্গার জ্যারড বাওয়েন। সেখান থেকে পাশে থাকা ফোরনালসকে পাস দিয়ে গোল নিশ্চিত করেন। তবে আলিসন চাইলে সে শট আটকাতে পারতেন। তাঁর হাতের লাগার পরেও বল জড়ায় জালে।
সাত মিনিট পর আবারও কর্নার-যন্ত্রণা। বাওয়েনের কর্নারে মাথা ছুঁইয়ে দলকে আরও এগিয়ে দেন সদ্যই চেলসি থেকে ওয়েস্ট হ্যামে যাওয়া জুমা। ৮৩ মিনিটে ট্রেন্টের সহায়তায় বিকল্প স্ট্রাইকার দিভক অরিগি গোল করলেও ৩ পয়েন্ট এনে দিতে পারেননি। শেষ দিকে গোল করার সহজ দুটি সুযোগ নষ্ট করেন দিওগো জোতা ও সাদিও মানে। ওয়েস্ট হ্যাম জিতে যায় ৩-২ গোলে।
এই জয় নিয়ে পয়েন্ট তালিকায় লিভারপুলকে টপকে তিনে উঠে গেছে ওয়েস্ট হ্যাম। শীর্ষ দুই স্থানে যথাক্রমে চেলসি ও ম্যানচেস্টার সিটি।