>মেসি নেই চোটে, রোনালদো তো চলে গেছেন জুভেন্টাসে। আজ ১১ বছর পর মেসি-রোনালদোকে ছাড়াই মাঠে গড়াচ্ছে এল ক্লাসিকো। রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার এই লড়াই এত দিন চলে গিয়েছিল এই দুই মহাতারকার দ্যুতির নেপথ্যে। আজ অনেক বছর পর সত্যিকারের ‘এল ক্লাসিকো’ ফিরছে মাঠে। যে লড়াইয়ে মেসি-রোনালদো নেই ঠিকই, কিন্তু দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর দ্বৈরথের আগুনটা ঠিকই থাকছে।
মেসি নেই, নেই রোনালদো—এই ক্লাসিকো দেখে কী হবে?
এমন প্রশ্ন মাথায় আসতেই পারে। না, বার্সেলোনা কিংবা রিয়াল মাদ্রিদের কোনো সমর্থকের মাথায় এ প্রশ্ন ভুলেও আসবে না। সত্যিকারের ফুটবল ভক্তের মাথায়ও আসবে না এমন চিন্তা। হতে পারে চোট লিওনেল মেসিকে কেড়ে নিয়েছে। নমনীয় কর কর্তৃপক্ষ আর উচ্চ বেতন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে টেনে নিয়ে গেছে জুভেন্টাসে। কিন্তু ফুটবল যারা ভালোবাসে, যাদের কাছে মাঠের লড়াইটাই মুখ্য, তারা আজ রাত ৯ টার পর (বাংলাদেশ সময়) যে কোনোভাবেই হোক টিভিতে চোখ রাখবেন।
তাহলে প্রশ্নটা কাদের মাথায় আসবে? ওই যে তারা, যারা তারকার মোহেই ফুটবল দেখতে আসেন। যাদের কাছে একটি ক্লাবের জন্য সমর্থন কিংবা চায়ের কাপে ঝড় তোলাটা গুরুত্ব পায় না। এদের কাছে মহাতারকারাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। গলা ফুলিয়ে যারা মেসি ভালো না রোনালদো—এই তর্কে নিজেদের ব্যস্ত রাখতে চায়। সেখানে এ দুজন নেই, এ দুজনের মধ্যে সেরা কে সে তর্কের আবাহন নেই, এমন ম্যাচ তাদের আসলেই টানে না।
এতে অবশ্য ফুটবলের কোনো ক্ষতি হচ্ছে না। বরং এটাই হয়তো সবদিক দিয়ে ভালো। অবশেষে ইউরোপিয়ান ফুটবলের সবচেয়ে মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের সব আলো ঠিক জায়গাতেই থাকছে, ম্যাচে! গত এক দশক ধরেই যে আলোটা থাকত একটু ভুল জায়গায়—মেসি আর রোনালদো।
না, ভুল ভাববেন না। পাদপ্রদীপের সবটুকু আলো মেসি-রোনালদোর প্রাপ্য। এ দুজনে মিলে ফুটবলে যা করেছেন, একই যুগে দুজন ফুটবলার এভাবে আর কখনো তা করতে পারবেন না। এ দুজনের মধ্যে কে সেরা এ তর্ক, এখনো চলছে। এ তর্কের কোনো সমাধান নেই, মিলবেও না। কিন্তু এমন তর্ক ফুটবলকে বাড়তি রং দেয়। কিন্তু বাড়তি রংটাই মূল বিষয়কে আড়াল করে দিচ্ছিল এত গুলো বছর। গত নয় মৌসুম জুড়েই এল ক্লাসিকো মানে ইতিহাস টেনে আনা, প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা বলা , দল দুটির অর্জনের প্রসঙ্গ টানা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আলোচনাটা রূপ নিত রোনালদো-মেসি দ্বৈরথে। আজ কার দিন? কে আজ কাকে আড়াল করবেন?
আজও এ দুজনকে নিয়ে কথা হচ্ছে। মেসি-রোনালদো নেই, তাঁদের নিয়ে কথা হবেই। তারকাদ্যুতি তো হারাচ্ছেই এ ম্যাচ। কিন্তু এক দশক পর এবারের এল ক্লাসিকো অন্তত ম্যাচের সময়টায় এ দুজনকে নিয়ে ব্যস্ত থাকবে না। এই প্রথম দুটি দল দল হিসেবে খেলতে নামবে। ম্যাচ অ্যানালাইসিসে দুই কোচ ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পনা করবেন। এ ম্যাচে কোন মহাতারকা কাকে আড়াল করবেন, সেটা নিয়ে অন্তত ভাবতে হবে না সমর্থকদের। স্প্যানিশ ফুটবলের সেরা ম্যাচের ইতিহাস, দ্বৈরথ, শ্রেণি বৈষম্য আর বিতর্কগুলো আবারও প্রাণ পাবে।
মেসি বা রোনালদোকে দোষ দেওয়া হচ্ছে না। যুগের সেরা ফুটবলার হওয়া কিংবা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকাটা কখনোই দোষের কিছু না। নিজেদের গুনেই এটা অর্জন করেছেন তারা। কিন্তু এল ক্লাসিকোর মতো একটি ম্যাচ এদের আড়ালে চলে যাচ্ছিল এত দিন। এ দুই ক্লাবের হয়ে আরও অসংখ্য তারকা খেলেছেন, অনেকেই ইতিহাসের সর্বকালের সেরাদের অন্যতম। অনেক ফুটবলারই অবিশ্বাস্য সব গল্প লিখেছেন সাদা কিংবা খয়েরি-নীল জার্সিতে। এ ম্যাচ অনেকের ক্যারিয়ার গড়ে দিয়েছে, কারও শেষ করেছে। কিন্তু সেসব গল্প ভুলে যাচ্ছিল ফুটবল, হারিয়ে যাচ্ছিল দুই তারকার দ্যুতিতে। সে দায় থেকে অন্তত এই ক্লাসিকোটা মুক্তি পাচ্ছে আরও একবার।
আজ তাই অনেক দিন পর আবার এল ক্লাসিকো দেখবে ফুটবল, সত্যিকারের এল ক্লাসিকো!