মেসির সঙ্গে এক দলে খেলার ইচ্ছে নেইমারের আজকের নয়। ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা—দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দেশের মূল খেলোয়াড় দুজন, কিন্তু তাঁদের বন্ধুত্ব দেখে কে বলবে ও কথা? মেসির পাশে বার্সেলোনায় ২০১৩ সাল থেকে চার বছর খেলেছিলেন নেইমার, কিন্তু আরেকবার খেলার ইচ্ছে তাঁর আছে। আর নিজের ওই ইচ্ছাপূরণের জন্য বড় স্বার্থত্যাগ করতেও রাজি ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড।
নেইমার যখনই শুনেছেন মেসির বার্সা-বিচ্ছেদের কথা, তখন থেকেই উঠেপড়ে লেগেছেন প্রিয় বন্ধুকে নিজের ক্লাব পিএসজিতে আনার জন্য। মেসিকে পাশে পেতে নেইমার এতটাই উদগ্রীব যে দরকার হলে পিএসজিতে নিজের ১০ নম্বর জার্সিটাও বন্ধুকে দিয়ে দিতে রাজি তিনি।
তবে মেসিও নিজের জন্য নেইমারের এই স্বার্থত্যাগ হতে দিতে চাইছেন না। নতুন খবর, মেসির চাওয়া, পিএসজিতে ১০ নম্বর জার্সিটা নেইমারেরই থাকুক, তিনি ১৯ নম্বর জার্সিই পরবেন।
ফুটবলের হাজারো অলিখিত নিয়মের মতো এটাও একটা নিয়ম যে, দলের সবচেয়ে ভালো, আক্রমণভাগের সবচেয়ে সৃষ্টিশীল খেলোয়াড়ের দখলে থাকে ১০ নম্বর জার্সি। বার্সায় এতকাল যা ছিল মেসির দখলে। মেসির আগে যে জার্সি পরে ক্যাম্প ন্যু মাতিয়েছেন রোনালদিনিও। ডিয়েগো ম্যারাডোনা, পেলে, রিভালদো, রবার্তো বাজ্জো, দেল পিয়েরো, টট্টি—নিজ নিজ ক্লাব ও জাতীয় দলের হয়ে অধিকাংশ সময়ে সবাই ১০ নম্বর জার্সিই পরেছেন। রিয়াল মাদ্রিদে এখন যে জার্সি লুকা মদরিচের দখলে। একই কারণে পিএসজির ১০ নম্বর জার্সিটা নেইমারের দখলে।
কিন্তু মেসি যদি পিএসজিতে যান, নেইমার কীভাবে ওই জার্সির দখল ধরে রাখতে পারেন? রোনালদিনিও যাওয়ার পর ২০০৮ সাল থেকে বার্সায় ১০ নম্বর জার্সি পরেছেন মেসি। একই অবস্থা আর্জেন্টিনা দলেও, ২০০৮-০৯ মৌসুম থেকে এই জার্সিটা মেসির নিত্যসঙ্গী। ব্যাপারটা নেইমার নিজেও বোঝেন। বোঝেন বলেই প্রিয় বন্ধুর জন্য ১০ নম্বর জার্সিটার মায়া ছেড়ে দিচ্ছেন।
মেসির তুলনায় নেইমারের সঙ্গে ১০ নম্বর জার্সির সখ্য অত বেশি দিনের নয়। বার্সা ছেড়ে পিএসজিতে আসার পরেই কেবল ১০ নম্বর জার্সির স্বাদ পেয়েছিলেন নেইমার। পিএসজির আগে সান্তোস, বার্সেলোনায় পরতেন ১১ নম্বর জার্সি। জাতীয় দলেও ১০ নম্বর জার্সি পেয়েছেন ২০১২-১৩ মৌসুমের পর।
তবে বন্ধু বললেন, আর মেসিও সঙ্গে সঙ্গেই ১০ নম্বর জার্সি নিয়ে নিলেন, তা কি হয়? নিজের জন্য নেইমারের এভাবে স্বার্থত্যাগ চান না মেসি। বন্ধুর প্রস্তাব তাই শ্রদ্ধাভরেই প্রত্যাখ্যান করেছেন ৩৪ বছর বয়সী আর্জেন্টাইন। জানা গেছে, পিএসজিতে নাম লেখালে প্রথমে ১৯ নম্বর জার্সিটাই নেবেন মেসি, রোনালদিনিও যাওয়ার আগে বার্সায় যে জার্সিটা পরতেন তিনি। সে ক্ষেত্রে পিএসজিতে ১৯ নম্বর জার্সির মায়া ছাড়তে হবে স্প্যানিশ উইঙ্গার পাবলো সারাবিয়াকে।
তবে মেসি চাইলেই কী আর ১০ নম্বর জার্সি না নিয়ে থাকতে পারেন? বা নেইমার চাইলেই ১০ নম্বর জার্সি ছাড়তে পারবেন? সিদ্ধান্তটা হয়তো ঠিক করে দেবে স্পনসরদের চাপ। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর ‘সিআর সেভেন’-এর মতো মেসির ‘এলএম টেন’-ও বড় একটা ব্র্যান্ড! যে কারণে রিয়াল মাদ্রিদে নাম লেখানোর পর ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো রাউলের জন্য প্রথম বছর ৯ নম্বর জার্সি পরলেও পরের বছরই ৭ নম্বর জার্সি নিয়ে নিয়েছিলেন।
সময়ের সেরাদের একজন নেইমারের ‘এনজে১০’-ও তো বাজারমূল্যে কম যায় না! দুজনের বয়স, কাকে ১০ নম্বর জার্সি দিলে ব্র্যান্ড হিসেবে সবচেয়ে ভালো হবে, সেসব ভেবেই হয়তো চূড়ান্ত হবে জার্সি নম্বর। আগামী বছর কাতারে বিশ্বকাপ আয়োজিত হতে যাচ্ছে, মেসি শেষ পর্যন্ত পিএসজিতে গেলে তাঁকে এই সময়টায় নিজেদের অন্যতম শুভেচ্ছাদূত হিসেবে গড়ে তুলবে পিএসজির কাতারি মালিকপক্ষ। সেসব বিষয়ও হয়তো মাথায় থাকবে তাঁর জার্সি নম্বর নির্ধারণে।
রিয়াল মাদ্রিদে রোনালদোর সুবিধা ছিল, তাঁর ক্যারিয়ার তখন মধ্যগগনে। রিয়ালে যে অনেক দিন থাকার জন্যই এসেছেন পর্তুগিজ যুবরাজ, এটা সবাই জানতেন। ওদিকে রাউলের ক্যারিয়ার ছিল অস্তাচলে। ফলে রাউলের জন্য এক মৌসুম ৭ নম্বর জার্সির মায়া ত্যাগ করতে সমস্যা হয়নি রোনালদো বা তাঁর স্পনসরদের কারওই। মেসির ক্ষেত্রে ব্যাপারটা তেমন নয়।
গুঞ্জন সত্যি হলে, পিএসজিতে মেসি যাচ্ছেন মূলত দুই বছরের জন্য, দুই পক্ষ রাজি থাকলে চুক্তি আরও এক বছর বাড়ানোর শর্ত রাখা আছে। গত জুনে ৩৪তম জন্মদিন পালন করা মেসি তিন বছরের বেশি পিএসজিতে থাকবেন না, এটা জানা কথা। ওদিকে নেইমারের বয়স ২৯, পিএসজিতে কদিন আগেই চুক্তি নবায়ন করেছেন চার বছরের জন্য। এই হিসেবটাও হয়তো মাথায় রেখে ঠিক হবে, ১০ নম্বর জার্সি কার হবে।