>আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের হয়ে ১৩ ম্যাচ খেললেও এখন পর্যন্ত মাত্র তিনটি ম্যাচে লিওনেল মেসির সঙ্গে শুরু থেকে খেলেছেন পাওলো দিবালা। বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে কেবল ২৬ মিনিট খেলার সুযোগ পেয়েছেন। নাইজেরিয়ার বিপক্ষেও একাদশে থাকছেন না তিনি। মেসি-দিবালা জুটিকে একসঙ্গে না খেলানোর কারণ কী?
লিওনেল মেসির পাশে খেলার স্বপ্ন থাকে কত শত ফুটবলারের। হাতের সামনে সেই সুযোগটা থাকার পরও সেটি নিতে পারছেন না পাওলো দিবালা। নিজেই বলেছিলেন, মেসির পাশে খেলা তাঁর জন্য কঠিন কাজ। কেন কঠিন সেই ব্যাখ্যাও দিবালা দিয়েছিলেন, ‘আমার আর মেসির খেলার ধরনের মিল রয়েছে। একই স্টাইলে খেলার কারণে দুজনের একসঙ্গে খেলা কঠিন।’
সেই কঠিন কাজটাকেই সহজ করার জন্য দিবালা কম পরিশ্রম করছেন না। তবু সুযোগ মিলছে না তাঁর। হোর্হে সাম্পাওলির মতে দিবালা মেসির পাশাপাশি খেলার জন্য এখনো পুরোপুরি প্রস্তুত নন, ‘পাওলো আর লিওর একসঙ্গে খেলার উপায় আমরা বের করার চেষ্টা করছি। দিবালা সেগুলোর সঙ্গে মানিয়েও নিচ্ছে। কিন্তু এখনো কিছু জিনিস বাকি, সঠিক সময়টি আসেনি।’
প্রশ্ন উঠছে, এখনো যদি সঠিক সময় না হয়ে থাকে, তাহলে কখন? আদৌ কি সেই সময় আসবে? আর্জেন্টিনা যদি গ্রুপ পর্বের বাধা টপকাতেই না পারে, তাহলে মেসি-দিবালাকে একসঙ্গে এখন না খেলানোর পেছনে যুক্তি কী?
আর্জেন্টিনার আক্রমণভাগ যে খুব একটা ভালো করছে তা-ও নয়। সার্জিও আগুয়েরো, গঞ্জালো হিগুয়েইনরা প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছেন না। এ সময়ে এঁদের জায়গায় খেলতে পারতেন যিনি, সেই মাউরো ইকার্দিকে তো দলেই নেননি সাম্পাওলি। স্ট্রাইকারদের ব্যর্থতার পরও দিবালার সুযোগ না পাওয়াটা অবাক করার মতো বিষয়।
নাইজেরিয়ার বিপক্ষে আগের ম্যাচের একাদশ থেকে ৫টি পরিবর্তন করবেন সাম্পাওলি। সেই পাঁচজনের মধ্যে নেই দিবালা। অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়া বাজে পারফর্ম করেও সুযোগ পাচ্ছেন। সেখানে দিবালাকে নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগও দেওয়া হচ্ছে না।
সুযোগ না পাওয়ার পেছনে দিবালার যে একেবারেই দোষ নেই সেটিও নয়। এখন পর্যন্ত আর্জেন্টিনার হয়ে খেলা ১৩ ম্যাচে কোনো গোল করতে পারেননি, গোল বানিয়ে দিয়েছেন মাত্র একটি। সিরি ‘আ’ তে সর্বশেষ তিন মৌসুমে যাঁর প্রতি দুই ম্যাচে একটি করে গোল করার রেকর্ড আছে (৯৮ ম্যাচে ৫২ গোল), তাঁর সঙ্গে এই পরিসংখ্যান বেমানান।
মেসির পাশে খেলা কঠিন বলার পর দিবালার সমালোচনার ঝড় উঠেছিল গণমাধ্যমে। স্বয়ং লিওনেল মেসিই সেই ঝড় থামিয়েছেন, ‘পাওলোর সঙ্গে আমি কথা বলেছি। সে যা বলেছে, সম্পূর্ণ ঠিক। জুভেন্টাসে সে ডান দিকে খেলে অভ্যস্ত। আর্জেন্টিনায় যেখানে আমি খেলি। বাঁ পাশে খেলা পাওলোর জন্য কঠিন। কারণ, ডান দিকে খেললে আমরা পুরো মাঠে স্বাধীনভাবে বিচরণ করতে পারি, যেটা বাঁ দিক থেকে করা সম্ভব নয়।’
মেসি দিবালার পাশে দাঁড়ালেও হোর্হে সাম্পাওলির ভূমিকা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে। আর্জেন্টিনার কোচ হিসেবে নিজের প্রথম ম্যাচে ব্রাজিলের বিপক্ষে ৩-৪-২-১ পদ্ধতিতে মেসি-দিবালাকে একসঙ্গে খেলিয়েছেন তিনি। সে ম্যাচে আর্জেন্টিনা ১-০ গোলে জেতে। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে উরুগুয়ে ও ভেনেজুয়েলার সঙ্গে ড্র করার পর সেই পদ্ধতি থেকে সরে এসে মিডফিল্ডের ওপর জোর দেন সাম্পাওলি। এরপর থেকেই মেসি-দিবালাকে কোনো ম্যাচে একসঙ্গে শুরু থেকে দেখা যায়নি।
সেটি যে আর্জেন্টিনার জন্য খুব ভালো ফল বয়ে আনেনি, তার প্রমাণ বাছাইপর্বে খোঁড়াতে খোঁড়াতে বিশ্বকাপে সুযোগ পাওয়া। পেরু ও ইকুয়েডরের সঙ্গে মহাগুরুত্বপূর্ণ দুই ম্যাচেও বেঞ্চে বসিয়ে রাখা হয় দিবালাকে। মেসির জাদুতে ইকুয়েডরকে হারিয়ে বিশ্বকাপে সুযোগ পেলেও সাম্পাওলি কেন মেসি-দিবালাকে একসঙ্গে খেলানোর সেরা উপায় বের করতে পারছেন না, সেই প্রশ্ন থেমে থাকেনি।
মার্চের শুরুর দিকে গুঞ্জন উঠেছিল, দিবালাকে বিশ্বকাপ দলেও নেবেন না সাম্পাওলি। এর কারণ হিসেবে দিবালার বাজে পারফরম্যান্সের অজুহাত দেন সাম্পাওলি, ‘আমাদের কৌশলের সঙ্গে দিবালা মানিয়ে নিতে পারছে না। তার পারফরম্যান্সে উন্নতির ছাপ দেখা যাচ্ছে না, বিশ্বকাপে আমাদের সেরা দলটাই নিয়ে যেতে হবে। তবে দিবালার পারফরম্যান্সের উন্নতির জন্য আমরা তাঁর সঙ্গে কাজ করব।’
শেষ পর্যন্ত দিবালাকে রেখেই বিশ্বকাপ দল ঘোষণা করেন সাম্পাওলি। কিন্তু দলে থেকেও যেন নেই আর্জেন্টিনা ফুটবলে ‘দ্য জুয়েল’ নামে পরিচিত পাওলো দিবালা। কদিন আগে মেসির সঙ্গে খেলা প্রসঙ্গে নিজের মতামত দেন তিনি, ‘বার্সেলোনা কিংবা আর্জেন্টিনায় মেসির জায়গা পূরণ করার মতো কোনো খেলোয়াড় নেই। আমি মেসির অভাব পূরণের জন্য আসিনি। আমরা অবশ্যই একসঙ্গে খেলতে পারি, শুধু সেরা উপায়টা খুঁজে বের করতে হবে।’
সেই উপায় বের করার কাজটা মেসি কিংবা দিবালার নয়। সাম্পাওলি যত দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করতে পারবেন, আর্জেন্টিনা ও দিবালা দুই পক্ষের জন্যই তত ভালো।