>বার্সেলোনার রাস্তায় হাঁটতে বেরিয়ে হঠাৎ মেসি ও সুয়ারেজের সঙ্গে দেখা বাংলাদেশের যুবকের।এরপর যা ঘটে, তরুণের বেলাতেও তাই।
রাত ১১টায় বাসায় ফেরার জন্য রাস্তায় গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন ইকবাল হৃদয়। সময় যেন কাটছিলই না! বাসায় ফিরে রান্না করে খেতে হবে। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে ফের ছুটতে হবে কাজে। আর দশটা প্রবাসীর মতোই তাঁর সারা দিনের রুটিন। দিনমান কাজ করে ফেরার সময় ঘিরে ধরেছে ক্লান্তিও। শরীরটা একটু এলিয়ে আসছে। হঠাৎ যেন বিদ্যুতে শক খেলেন। গা ঝাড়া দিয়ে উঠল। আরে, ওনারা লিওনেল মেসি আর লুইস সুয়ারেজ না! সত্যিই তো!
গত বৃহস্পতিবার রাতে বার্সেলোনার রাস্তায় এমনই এক অভিজ্ঞতা হয়েছে বাংলাদেশের তরুণ ইকবাল হৃদয়ের। বার্সেলোনা বিমানবন্দরের কোলঘেঁষা কাস্তিলদাফেলস সৈকতসংলগ্ন রাস্তায় গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন হৃদয়। এরপরই চর্মচক্ষু সার্থক করার ঘটনাটি ঘটল। রাস্তার পাশের বেঞ্চে বসে থাকতে থাকতেই প্রথমে চোখে পড়ল ল্যাম্পপোস্টের নিচে খেলা করছে মেসির ছেলে। ভার্চ্যুয়াল জগতে বহুবার দেখার সুবাদে চেনা মনে হলে এগিয়ে যান চট্টগ্রামের তরুণ।
কাছে গিয়ে তো আরও অবাক। ছোট ছেলেকে বেবি সিটে বসিয়ে স্ত্রীকে নিয়ে হাঁটছেন সুয়ারেজ। ছবি তোলার আগ্রহ প্রকাশ করলে সুয়ারেজ স্বেচ্ছায় চলে আসেন সেলফি তোলার মুডে। সেই অভিজ্ঞতা জানিয়ে হৃদয় বলেছেন, ‘সুয়ারেজের সঙ্গে ওর বান্ধবী না স্ত্রী, তা নিশ্চিত ছিলাম না। সঙ্গে বেবি সিটে বসানো একটা বাচ্চা ছিল। আমি ছবি তুলতে চাইলে খুব আনন্দ নিয়েই আমার সঙ্গে ছবি তুললেন। হাই-হ্যালো হলো। আমি চ্যাম্পিয়নস লিগের পরবর্তী ম্যাচের জন্য শুভকামনা জানালাম। জবাবে সে আমাকে ধন্যবাদ জানাল।’
হৃদয় তখনো জানতেন না, তাঁর জন্য অপেক্ষা করছে আরও বড় চমক। সুয়ারেজের সঙ্গে কথা শেষ করে মাথা ঘোরাতেই দেখেন মেসি! আর্জেন্টাইন খুদে জাদুকরও বেরিয়েছেন স্ত্রীর সঙ্গে হাঁটতে। বিশ্বের সেরা ফুটবলারকে সামনে পেয়ে হৃদয়ের হৃৎপিণ্ডই খাঁচা ছেড়ে বেরিয়ে আসার মতো অবস্থা। কোনোমতে নিজেকে সামলে করমর্দন করার জন্য হাত এগিয়ে দিলে মেসিও সানন্দে হাত মেলান। এরপর সেলফি তো থাকবেই।
হৃদয় বলছিলেন, ‘সুয়ারেজকে দেখার পর মেসিকেও দেখব, এটা তো কল্পনাতেও ছিল না। মেসির সঙ্গে হাত মেলানোর সময় আমার হাত কাঁপছিল। ছবি তুলতে চাইলে সাধারণ এক মানুষের মতোই ছবি তুললেন। আমি তখনো উত্তেজনায় কাঁপছি। মুখ দিয়ে কথাই যেন বের হচ্ছিল না। কোথায় যাচ্ছেন জিজ্ঞাসা করলে বললেন, সকালে বাচ্চাদের স্কুলে দিতে হবে। তাই ঘরে ফেরার তাড়া। বলে বিদায় নিলেন।’
দেড় বছর ধরে স্পেনে পাড়ি জমানো হৃদয় মনে মনে অনেকবারই আশা করেছেন, কোনো না কোনো দিন মেসির সঙ্গে দেখা যদি হয়! কিন্তু দেখা হয়ে যাওয়ার পর যেন ঘটনার আকস্মিকতায় নিজেই ঘোরের মধ্যে চলে গেলেন! চরম উত্তেজনায় পার করা মিনিটের মধ্যে একবারের জন্য হলেও বাংলাদেশের কথা মেসিকে বলা হলো না! মেসি কি জানেন, তাঁর প্রতি আবেগ আর ভালোবাসার উত্তুঙ্গ তুফান কখনো কখনো আর্জেন্টিনাকেও ছাড়িয়ে যায় এই বাংলাদেশে! মেসি কি মনে রেখেছেন, তাঁর ক্যারিয়ারের সেরা গোলগুলোর একটির জন্ম হতে হতেও হয়নি এই বাংলাদেশের মাটিতেই!