>লা লিগায় মায়োর্কার বিপক্ষে ৫-২ গোলের জয় পেয়েছে বার্সেলোনা। বার্সেলোনার হয়ে হ্যাটট্রিক করেছেন মেসি। একটি করে গোল করেছেন সুয়ারেজ ও গ্রিজমান। মায়োর্কার হয়ে দুটি গোলই করেন আন্তে বুদিমির।
মেসির তিনটি গোলই ছিল চোখে লেগে থাকার মতো। আর সুয়ারেজের ‘ব্যাক-হিল’ করা গোলটি! ফুটবল ইতিহাসের সেরা গোলগুলোর একটি হয়ে থাকবে নিশ্চিত। লিগে মৌসুমের সর্বোচ্চ গোলদাতা এখন মেসি (১২টি)। আর লা লিগায় রোনালদোকে (৩৪টি) পেছনে ফেলে সবচেয়ে বেশি হ্যাটট্রিকের মালিকও এখন আর্জেন্টাইন এই ফুটবল জাদুকর (৩৫টি)। আরও এক জায়গায় রোনালদোকে পেছনে ফেলেছেন মেসি—বক্সের বাইরে থেকে এখন সবচেয়ে বেশি গোল রেকর্ড ষষ্ঠবারের মতো ব্যালন ডি’অর জয়ী এই তারকার দখলে। ন্যু ক্যাম্পের প্রতিটি ঘাসের ডগার সঙ্গেই সখ্য আছে গ্রহের অন্যতম সেরা এই ফুটবলারের। চেনা মাঠ, চেনা পরিবেশ, নিজের সাম্রাজ্য—উদ্যাপনের জন্য আর কি চাই! আর তাই ষষ্ঠবারের মতো ব্যালন ডি অ’র জয়ের উদ্যাপনটা রঙিন-ই হলো মেসির।
শুরুটা অবশ্য করেছেন গ্রিজমান। তাও আবার বার্সেলোনা গোলরক্ষক মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগানের বুদ্ধিদীপ্ত লম্বা ক্রসে। মায়োর্কার কর্নার কিক বেপথু হলে কোনোমতে বল বসিয়ে তড়িঘড়ি শট নেন টের স্টেগান। তবে প্রস্তুত ছিলেন গ্রিজমান। বার্সেলোনার ফরাসি তারকা বল পেয়েই ভোঁ দৌড়। সামনে মায়োর্কার গোলরক্ষক রেইনা একা, অসহায়। নিজের কাজটা সহজেই সারলেন গ্রিজমান। সপ্তম মিনিটে গ্রিজমানের গোলের পর তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে ন্যু ক্যাম্পে আতিথ্য নিতে আসা মায়োর্কার ডিফেন্স।
মিনিট দশেক পর গোল উৎসবে যোগ দেন মেসি। এবার মেসিকে বলের যোগান দেন গ্রিজমান। বক্সের বাইরে থেকে মেসির বাঁ পায়ের শট বাতাসে খানিকটা দোল খেয়ে অতিথিদের জালে জড়ায়। ৩৫তম মিনিটে বুদিমির ফাঁকি দেন বার্সার রক্ষণকে, ফাঁকি দেন টের স্টেগানকেও। তবে জবাব দিতে খুব বেশি দেরি হয়নি ভালভার্দের। এবারও তাঁর প্রিয় শিষ্য মেসিই গোলদাতা। এবারও বাঁ পায়ের শট। ৪১ মিনিটে রাকিটিচের বাড়ানো বল কোনাকুনি শটে জালে জড়ান মেসি।
মিনিট দু-এক পর সুয়ারেজ যা করলেন...বলা যায় পয়সাউসুল! ডি বক্সের ভেতর সুয়ারেজকে বল বাড়িয়ে জায়গা করে নিচ্ছিলেন ডি জং। তাঁকে মার্ক করতে সুয়ারেজ অনেকটা একা হয়ে যান। সুযোগ কাজে লাগি ‘ব্যাক-হিল’ করে নিখুঁতভাবে বল জালে জড়ান মেসিকে সঙ্গ দেওয়া বার্সেলোনার উরুগুইয়ান এই স্ট্রাইকার। প্রথমার্ধেই প্রতিপক্ষের জালে এক হালি গোল দিয়ে মাঠ ছাড়ে স্বাগতিকেরা।
দ্বিতীয়ার্ধে বার্সেলোনার খেলায় খানিকটা ছন্দপতন ঘটে। অন্তত ২০-২৫ মিনিট লাগে নিজেদের ফিরে পেতে। মায়োর্কার জালে বল জড়াতে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলেন গ্রিজমান-সুয়ারেজরা। ম্যাচের ৫২ মিনিটে গোলরক্ষককে একা পেয়েও সুযোগ হাতছাড়া করেন গ্রিজমান। এরপর এমন আরও বেশ কয়বার সুযোগ হাতছাড়া করে উল্টো গোল হজম করে বসে কাতালানরা। ৬৪ মিনিটে বুদিমির দ্বিতীয় গোলে ব্যবধান কমিয়ে ৪-২ স্কোরলাইন লিখে ফেলে টেবিলের ১৭ নম্বরে থাকা দলটি। তবে সমর্থকদের আশঙ্কা শেষতক সত্যি হতে দেননি মেসি। নির্ধারিত সময়ের খেলা শেষ হওয়ার মিনিট সাতেক আগে নিজের হ্যাটট্রিক পূরণ করেন এবং দলকে জয় উপহার দিয়েই মাঠ ছাড়েন এই ফুটবল জাদুকর।
বার্সেলোনা-মায়োর্কার ম্যাচের আগে হয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ-এসপানিওল ম্যাচ। ঘরের মাঠে এসপানিওলকে ২-০ গোলে হারিয়ে লিগের শীর্ষে চলে গিয়েছিল জিদান শিষ্যরা। তবে মায়োর্কাকে উড়িয়ে ফের শীর্ষস্থান দখলে নেয় কাতালানরা। সময়ের হিসেবে মাদ্রিদের ক্লাবটি টেবিলের শীর্ষে ছিল মাত্র ৬ ঘণ্টা। যদিও লিগে দুই চির প্রতিদ্বন্দ্বীর সংগ্রহই সমান ৩৪ পয়েন্ট। গোল ব্যবধানে বার্সেলোনা রিয়ালের চেয়ে এগিয়ে থাকায় শীর্ষস্থান এখন ক্যাম্প ন্যু-এর সেনাদের দখলে।