পেনাল্টি থেকে গোলের পর নেইমারের উদযাপন
পেনাল্টি থেকে গোলের পর নেইমারের উদযাপন

ব্রাজিল–জাপান প্রীতি ম্যাচ

মেসির ৫, রোনালদোর ২, এরপর নেইমারের ১

লিওনেল মেসি, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ও নেইমার—তর্কযোগ্যভাবে বর্তমান বিশ্বের তিন সেরা ফুটবলার। কাল বাংলাদেশ সময় রাতে মাঠে নেমেছিলেন মেসি ও রোনালদো। আজ বিকেলে নামলেন নেইমার। এই ত্রিরত্নের পারফরম্যান্সকে এখন এভাবেও বলা যায়—মেসির ৫, রোনালদোর ২ ও নেইমারের ১।

এস্তোনিয়ার বিপক্ষে একাই পাঁচ গোল করেন মেসি। সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে জোড়া গোল করেন রোনালদো। আর টোকিওতে আজ জাপানের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ ১-০ গোলে জিতেছে ব্রাজিল। ৭৭ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করেন নেইমার।

জয় পেলেও এই ম্যাচে কাতার বিশ্বকাপের প্রস্তুতিটা ভালো হয়নি তিতের দলের। নেইমার-রাফিনিয়া-পাকেতা এবং ভিনিসিয়ুস ফিনিশিংয়ের সমস্যায় ভুগেছেন।

দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে সর্বশেষ প্রীতি ম্যাচেই ৫-১ গোলের বড় জয় পেয়েছিল ব্রাজিল। কোপা আমেরিকা ফাইনালে হারের পর টানা পাঁচ ম্যাচ অপরাজিত থাকা তিতের দল আজও জয় পেলেও চোখ ধাঁধানো ফুটবল উপহার দিতে পারেনি। জাপান এমনিতেই নেইমারের প্রিয় প্রতিপক্ষ (চার ম্যাচে ৮ গোল), তারপর ব্রাজিলের ২০০২ কোরিয়া-জাপান বিশ্বকাপ জয়ের দুই দশক পূর্তিও বলা যায় এই ম্যাচ।

টোকিওতে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে ফিনিশিং ভালো হলে পেনাল্টির ওই গোল ছাড়াই আরও দু-তিনটি গোল পেতে পারত ব্রাজিল। গোটা ম্যাচে ২১ বার গোলের চেষ্টা চালিয়ে ৫টি শট জাপানের গোলপোস্টে রাখতে পেরেছে ব্রাজিল। জাপান ৭ বার চেষ্টা করেও ব্রাজিলের গোলপোস্টে বল রাখতে পারেনি। ব্রাজিল খেলেছে ৪৫৫ পাস, জাপানও একেবারে কম যায়নি, ৩৯৬ পাস খেলেছে স্বাগতিকরা।

পেনাল্টি থেকে গোল করছেন নেইমার

ম্যাচে ৭০ মিনিটের পর থেকেই দলীয় সমন্বয়ে বেশ কয়েকটি ভালো আক্রমণ করে তিতের দল। এরই ধারাবাহিকতায় ৭৫ মিনিটে বক্সের মধ্য থেকে নেইমারের দারুণ শট রুখে দেন জাপানের গোলকিপার সুইচি গোন্দা। ফিরতি বল পোস্টে মারেন রিচার্লিসন। নেইমার তখন বক্সে এবং তাঁকে জাপানের ডিফেন্ডার এন্দো অবৈধভাবে ফেলে দিলে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। কুশলীভাবে একটু থেমে একটু দৌড়ে নেওয়া শটে গোল করেন পিএসজি তারকা। ব্রাজিলের জার্সিতে এ নিয়ে ৭৪ গোল হয়ে গেল তাঁর। আর চার গোল করলেই পেলেকে টপকে ব্রাজিলের সর্বোচ্চ গোলদাতার রেকর্ড গড়বেন নেইমার।

বিরতির পর ৫৩ মিনিটে গোল করার বেশ ভালো সুযোগ পেয়েছিল ব্রাজিল। ডান প্রান্তে রাফিনিয়া ও ফ্রেডের গড়া আক্রমণ থেকে বক্সের মধ্যে পাস পান পাকেতা। তাঁর ব্যাক হিল নেইমার পেলেও বক্সের মধ্যে জাপানের ডিফেন্ডাররা শট নেওয়ার জায়গা ছোট করে আনায় কিছুই করতে পারেননি পিএসজি তারকা। আরেকটু দ্রুত শট নিলে হয়তো বিপদ হতে পারত জাপানের।

গোলের সুযোগ পেয়েছে জাপানও

চার মিনিট পর নেইমারের দূরদর্শী দূরপাল্লার পাসে ডান প্রান্তে আলভেজ বল পেয়ে ফিরতি পাস দেন সুবিধাজনক অবস্থানে দাঁড়ানো রাফিনিয়াকে। ভালো শট নিতে পারায় লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় বল। পরের মিনিটেই ব্রাজিলের বক্সে বল পেয়ে যান জুনাইয়া ইতো। গেঙ্কের এই উইঙ্গার শট নিতে পারলে বিপদে পড়তে পারতেন ব্রাজিল গোলকিপার আলিসন।

গোল পেতে মরিয়া ব্রাজিল কোচ তিতে ৬৩ মিনিটে জোড়া পরিবর্তন আনেন। ভিনিসিয়ুসকে তুলে গ্যাব্রিয়েল মার্তিনেল্লি এবং রাফিনিয়াকে তুলে গ্যাব্রিয়েল জেসুসকে মাঠে নামান। দুই মিনিট পরই বক্সের মধ্যে গোল করার দারুণ সুযোগ পান মার্তিনেল্লি। আর্সেনাল ফরোয়ার্ড বলে শটই নিতে পারেননি!

দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচের দল থেকে চার পরিবর্তন এনে একাদশ সাজান ব্রাজিল কোচ তিতে। তাঁর ছক দেখে এমনিতে ৪-২-২-২ মনে হলেও সেন্টারব্যাক পজিশনে এদের মিলিতাওয়ের সঙ্গে নিচে খেলেন মারকিনিওস। তাঁদের সামনে লেফটব্যাক গিলেম আরানা এবং রাইটব্যাক হিসেবে খেলেন অভিজ্ঞতায় পরিপুষ্ট ৩৯ বছর বয়সী দানি আলভেজ।

দুই মিডফিল্ডার কাসেমিরো ও ফ্রেডকে সামনে রেখে আক্রমণভাগে মূলত চার খেলোয়াড় খেলান তিতে। উইং পজিশনে দুই প্রান্তে ভিনিসিয়ুস ও রাফিনিয়া এবং তাঁদের সামনে নেইমার ও লুকাস পাকেতা। লিঁও তারকা পাকেতা ব্রাজিলকে এগিয়ে দিতে পারতেন ম্যাচের দুই মিনিটেই।

ফিনিশিংয়ের সমস্যায় ভুগেছেন নেইমার ও রিচার্লিসন

বক্সের ভেতর ভিনিসিয়ুসের কাছ থেকে পাস পেয়ে কুশলী ব্যাক হিল করেন নেইমার। পাকেতা সুবিধাজনক পজিশনে থেকেও শট নিতে দেরি করায় তাঁকে রুখে দিতে সমর্থ হন জাপানের গোলকিপার সুইচি গোন্দা। প্রথমার্ধে ব্রাজিলের তিনটি আক্রমণ দারুণভাবে রুখে দেন জে-লিগের দল সিমিজু এস-পালসের এই গোলকিপার। ম্যাচের ২৭ ও ৩৯ মিনিটে ডান প্রান্ত থেকে রাফিনিয়া ও নেইমারের দুটি ভালো শট রুখে দেন গন্ডা। প্রথমার্ধে তিনটি ফ্রি-কিক পেয়েও কাজে লাগাতে পারেনি ব্রাজিল। ফ্রি-কিক থেকে রাফিনহার শট জাপানের গোলপোস্ট ঘেঁষে যায়। ফ্রি কিকে আগের দুটি শটে হতাশ করেন নেইমার।

ম্যাচের শুরুতে আক্রমণভাগের সামনে থাকলেও ধীরে ধীরে একটু নিচে নেমে এসে বল দখল করে খেলা তৈরির চেষ্টা করেন নেইমার। তখন রাফিনিয়া উঠে গিয়ে আক্রমণভাগে নেইমারের শূন্যতা পূরণ করেন। তবে এই কৌশল থেকে লাভবান হতে পারেনি ব্রাজিল।

মাঝমাঠ থেকে নেইমার কিংবা বাঁ প্রান্তে একটু নিচ থেকে ভিনি বল পেয়ে টান দেওয়ার চেষ্টা করলেও বক্স পর্যন্ত পৌঁছানোর আগেই জাপানের দুই ডিফেন্ডার ইউতা নাকায়ামা ও ইউতো নাগামুতোর সঙ্গে পারেননি। ট্যাকলে পড়ে যান কয়েক দফা। প্রথমার্ধে জাপানের ১৪৪ পাসের বিপরীতে ব্রাজিল ২৬৭ পাস খেললেও দেখার মতো কোনো আক্রমণ করতে পারেননি। দুই উইং ব্যবহার করে ক্রস করার চেষ্টা করলেও ভালো হেড নিতে পারেননি কেউ।

ম্যাচের শুরুতে গোলের দারুণ সুযোগ নষ্ট করেন ব্রাজিলের লুকাস পাকেতা

জাপানের কোচ হাজিমে মোরিইয়াসু ৪-৩-৩ ছকে দল সাজিয়ে মূলত রক্ষণাত্মক খেলার চেষ্টা করেন। প্রথমার্ধে অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার তাকুমি মিনামিনো একটি ভালো হেড করলেও তা পোস্টের পাশের জালে লেগে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। জাপানের বিপক্ষে ব্রাজিল কখনো হারেনি। এশিয়ার দলটির বিপক্ষে এ নিয়ে ১৩ ম্যাচে ১১ জয় ২ ড্র করল ব্রাজিল।