মেসি, মেসি আর মেসি। মস্কোর একাডেমিসেস্কায়া মেট্রো স্টেশন থেকে কোতেলনিকি স্টেশনে আসতে ট্রেন বদলাতে হলো দুবার। সেখান থেকে ১ ঘণ্টার বাসযাত্রার পর পাওয়া গেল ব্রোনিৎসি শহর। আর ওখান থেকে আরও ১৫ মিনিট হেঁটে পাওয়া তবেই আর্জেন্টিনা দলের ডেরা। আর্জেন্টিনা দল না বলে মেসিদের ডেরাই বলা ভালো।
কারণ, মেসি ছাড়া ফুটবলের একটা বড় পৃথিবী যেমন কিছু বোঝেনা। এখানে এই গহিন অরণ্যের কাছাকাছি ব্রোনিৎসি এলাকার লোকজন মেসি ছাড়া কিছু বোঝে না। জায়গাটা একেবারে নিসর্গ। চারদিকে প্রাকৃতিক হ্রদ, সবুজ বনানী। একটি নিশুতি পরিবেশ। রাস্তা দিয়ে হাঁটতে গিয়েই বোঝা গেল ব্রোনিৎসির পরিবেশ মেসিময় হয়ে উঠেছে। থেকে থেকেই জনতার হাঁক উঠছে—মেসি, মেসি।
পাঁচটি নিরাপত্তা চৌকি পেরিয়ে তবেই পা রাখা গেল ব্রোনিৎসির সাইজুইয়েস্কিন স্পোর্টস স্কুলের মাঠে। তৃতীয় নিরাপত্তা চৌকির সামনে এক দঙ্গল আর্জেন্টাইন সমর্থক আকাশি-নীল জার্সি গায়ে মেসি মেসি বলে চিৎকার করছে। পুলিশ কিছুতেই তাদের ঢুকতে দেবে না, কারণ টিকিট নেই। এই অনুশীলন সেশন দেখার জন্যও টিকিট ছেড়েছে স্থানীয় আয়োজক কমিটি।
বিকেল সাড়ে পাঁচটায় অনুশীলন শুরু। ১০ মিনিট আগে আগুয়েরো ও বিগলিয়াকে নিয়ে মাঠে ঢুকলেন মাচেরানো। সবার শেষে মেসি, তাঁর সঙ্গে রোহো ও ডি মারিয়া।
দাঁড়ি নতুন করে ছেটে, চুলে নতুন ছাট দিয়ে মেসি মাঠে নামতেই হাজার তিনেক ফুটবল জনতার হর্ষধ্বনি: মেসি, মেসি। সেই ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হলো কাছের সবুজ বনে।
কোচ হোর্হে সাম্পাওলি দূরে দাঁড়িয়ে স্প্রাইট (পানীয়র বোতলটা সবুজ) খাচ্ছেন। মাঠে দেখা গেল মেসি নির্দেশদাতা কিংবা পর্যবেক্ষক। খুব একটা গা লাগিয়ে খেলতে তাঁকে দেখা গেল না। মাঝে মাঝেই দুহাত থাকল কোমর পেঁচিয়ে। তবে যে দুএকবার নড়াচড়া করলেন তাতেই নিখুঁত পাস। আর তা থেকে প্রথমে গোল করলেন দিবালা। পরে আগুয়েরো। কয়েকটা বল উড়িয়ে মারলেন হিগুয়েইন। এসে পড়ল গ্যালারিতে। একদম শেষ পর্বে তিন গোলকিপারকে নিয়ে শুটিং পর্বেও মেসি শান্ত-সমাহিত থাকলেন। সবকিছু দেখছেন ধ্যানস্থ ঋষির মতো।
দলটি আর্জেন্টিনার, দলটি সাম্পাওলির। তবে ব্রোনিৎসু কাল ( সোমবার) দেখল দলটি আসলে মেসির। মেসিই সবকিছু চালাবেন।
বিশ্বকাপে একাদশটা কী হবে তা কিন্তু এই অনুশীলনে বোঝা গেল না। খোদ আর্জেন্টাইন সাংবাদিকেরাই মাথা চুলকে বেড়াচ্ছেন। যেমন লা ন্যাসিওনের প্রতিনিধি আন্দ্রেস এসেকুয়েল এলিসেসেও রয়েছেন ধন্দে। তবে একটি বিষয় নাকি তাঁর কাছে পরিষ্কার ঠেকেছে, কাবায়েরোই হবেন গোলবারের নিচে রোমেরোর বিকল্প।
এলিসেসে আর কী বলবেন, এই বিশ্বকাপ তো জেনে বসেই আছে, এই দলটি মেসিরই দল।
সোমবারের অনুশীলন সেসনে সেটির প্রমাণ মিলল আরেকবার। আর্জেন্টিনা দলটি মেসিময়। বিশ্বকাপটা মেসিময় হবে কি না, সেই প্রশ্নের উত্তর অবশ্য জানে ভবিষ্যৎ।