লিওনেল মেসি তখনো বার্সেলোনা ছাড়েননি। তাঁকে ক্লাবে ধরে রাখা যাবে কি যাবে না—এমন দোলাচলের মধ্যে হঠাৎ স্প্যানিশ এক পত্রিকা গোপন নথি ফাঁস করে দেয়। দাবি করা হয়, নথিটি বার্সেলোনার সঙ্গে মেসির সর্বশেষ চুক্তির। সেখানে লেখা ছিল, ৪ বছরের চুক্তিতে শর্ত সাপেক্ষে ৫৫ কোটি ৫০ লাখ ইউরো পাওয়ার সুযোগ ছিল মেসির। অর্থাৎ বেতন ও বোনাস মিলিয়ে বছরে প্রায় ১৪ কোটি ইউরো মেসির পেছনে খরচ করত বার্সেলোনা।
বিশ্ব ফুটবলে সবচেয়ে বেশি বেতন দেওয়া ক্লাব বার্সেলোনা। ২০১৯ মৌসুমে বার্সেলোনার বেতন বাবদ খরচ ছিল ৭০ কোটি ইউরোর বেশি। ২০২১ সালে এই বেতনকাঠামোই সর্বনাশ করেছে ক্লাবটির। আয়ের চেয়ে মাত্রাতিরিক্ত বেতন ব্যয় থাকায় মেসিকে নতুন চুক্তিতে ক্লাবে ধরে রাখতে পারেনি বার্সেলোনা।
ভুল থেকে শিক্ষা নিচ্ছে বার্সেলোনা। নতুন সভাপতি হোয়ান লাপোর্তা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, ক্লাবে কোনো খেলোয়াড়কেই বছরে ১ কোটি ইউরোর বেশি বেতন দেবে না বার্সেলোনা।
ক্লাবের আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হওয়ার পেছনে খেলোয়াড়দের অতিরিক্ত বেতন দেওয়াটাই ভূমিকা রেখেছে বার্সেলোনায়। গত দুই বছরে করোনার ধাক্কায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ক্লাবটি বেতন কমিয়ে আনার চেষ্টা করেছে নানাভাবে। ক্লাবের সবচেয়ে বেতনভোগী খেলোয়াড়দের একজন লুইস সুয়ারেজকে প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাব আতলেতিকো মাদ্রিদের কাছে ছেড়ে দিয়েছে। এ মৌসুমে মেসিকে ধরে রাখতে ব্যর্থ বার্সা পরে দ্বিতীয় ও তৃতীয় সর্বোচ্চ বেতনধারী আঁতোয়ান গ্রিজমান ও ফিলিপ কুতিনিওকেও ছেড়ে দিয়েছে।
কিন্তু এতেও সমস্যার পুরোপুরি সমাধান হয়নি। ক্লাবের জন্য খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নন, কিন্তু অনেক বেতন পান—এমন খেলোয়াড় বার্সেলোনায় এখনো অনেক। ক্লাব সভাপতি হোয়ান লাপোর্তা ও নতুন ক্রীড়া পরিচালক মাতেও আলেমানিকে অনেক কৌশল ব্যবহার করে নতুন খেলোয়াড় দলে টানতে হচ্ছে। কাতালান পত্রিকা স্পোর্ত জানিয়েছে, ভবিষ্যতে এমন ঝামেলা যাতে পোহাতে না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে চাইছেন লাপোর্তা। সে উদ্দেশ্যে বার্সেলোনায় বেতনের উচ্চসীমা নির্ধারণ করে দেওয়ার পরিকল্পনা তাঁর।
স্পোর্ত জানিয়েছে, আগামী জুনের পর থেকে দলে যে খেলোয়াড়কেই আনা হোক না কেন, তাঁদের বছরে সর্বোচ্চ ১ কোটি ইউরো দেওয়া হবে। এ শর্ত মানতে রাজি হলেই সে খেলোয়াড়কে দলে নেবে বার্সেলোনা।
মেসি তো বটেই, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, নেইমার, কিলিয়ান এমবাপ্পেদের মতো ফুটবলারদের বেতন বার্সেলোনার নির্দিষ্ট করে দেওয়া এই সীমার দ্বিগুণের বেশি। এই অবস্থায় বেতনের সীমা নির্দিষ্ট করে দিলে ভবিষ্যতে বড় তারকাদের কীভাবে টানবে বার্সেলোনা, এ ভাবনায় বার্সা সমর্থকদের কপালে ভাঁজ পড়তে পারে। বিশেষ করে আগামী জুনেই যেখানে বরুসিয়া ডর্টমুন্ড থেকে নরওয়েজিয়ান সেনসেশন আর্লিং হরলান্ডকে টানতে বার্সেলোনার আগ্রহের কথা বেশ বাজার পাচ্ছে!
স্পোর্ত জানাচ্ছে, সে ক্ষেত্রে বার্সেলোনা বোনাসের পথে হাঁটবে। যেহেতু আর্থিক সংগতির নীতি (এফএফপি) ও লা লিগার নিয়মে বেতন নিয়ে সর্বোচ্চ মাত্রা দেওয়া আছে, কিন্তু পারফরম্যান্সভিত্তিক বোনাসের ক্ষেত্রে এমন কোনো সীমা নেই। বড় তারকাদের বোনাস দিয়েই তাই আকৃষ্ট করার চিন্তা করছে বার্সেলোনা।
জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে বার্সেলোনার বেতন নিয়ে আবার আলোচনা উঠেছিল। স্প্যানিশ এক সাংবাদিক লুইস কানুত দাবি করেছিলেন, মেসি-সুয়ারেজরা চলে যাওয়ার পর এখন বার্সেলোনার ড্রেসিংরুমের সবচেয়ে বড় ‘নেতা’ জেরার্ড পিকে নাকি বার্ষিক ২ কোটি ৮০ লাখ ইউরো পান।
এ ছাড়া ডিফেন্ডার স্যামুয়েল উমতিতি ২ কোটি ইউরো পান বলেও দাবি করা হয়েছিল। প্রতিবেদনে প্রকাশিত অঙ্ক অনুযায়ী, ফিলিপ কুতিনিও (১ কোটি ৬০ লাখ), মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগেন (১ কোটি ৪০ লাখ), উসমান দেম্বেলে (১ কোটি ২০ লাখ) ও সের্হি রবার্তোর (১ কোটি ২০ লাখ) মতো খেলোয়াড়দের বেতনও চোখ কপালে তুলে দিচ্ছিল।
এর জবাব পিকে অবশ্য টুইটারেই দিয়েছেন। নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হওয়া ছয় মাসের বেতনের রশিদটা সরাসরি টুইটারে দেখিয়ে দিয়েছেন। সে অনুযায়ী কর বাদে পিকে বছরে ৪৬ লাখ ইউরোর মতো আয় করেন।
তবে এটাও ঠিক, এই মৌসুমে নিজের বেতন অর্ধেক করতে রাজি হয়েছেন পিকে। সে হিসাবে মৌসুমের শুরুতে কর বাদে পিকের বেতন ৯০ লাখ ইউরোর বেশি ছিল। সঙ্গে বার্সেলোনার বিখ্যাত বোনাস প্রথা তো আছেই।