মেসি বনাম গ্রিজমান। সংবাদমাধ্যম গত কিছুদিনে এটাই চলছে। বার্সেলোনায় যোগ দেওয়ার পর থেকেই ফর্ম হারিয়ে ফেলেছেন আঁতোয়ান গ্রিজমান। মাঠে লিওনেল মেসির জায়গাতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। খেলতে চান নাম্বার টেন হয়ে। কিন্তু মেসি থাকতে কোনো কোচের পক্ষেই মেসির জায়গায় অন্য কাউকে এ দায়িত্ব দেওয়া সম্ভব নয়। ফলে নিজের ছায়া হয়েই বার্সা ক্যারিয়ার কাটাচ্ছেন গ্রিজমান। গত এক মৌসুমে তাই আতলেতিকো মাদ্রিদের সেই গ্রিজমানকে দেখছেন না কেউ।
এত দিন সমস্যাটা শুধু গ্রিজমানের ছিল। তাঁর পারফরম্যান্সের দায় কারও ঘাড়েই তোলা হয়নি। কিন্তু এ মৌসুমে মেসি একটু অনুজ্জ্বল। এখনো দলের সেরা খেলোয়াড় হলেও পেনাল্টি ছাড়া গোল করেছেন মাত্র একটি। আর সে কারণেই হয়তো সমালোচকেরা একটু নড়েচড়ে বসছেন। কদিন আগেই গ্রিজমানের সাবেক এজেন্ট ফরাসি তারকার পারফরম্যান্সে মেসির ওপর দায় চাপিয়েছেন। গ্রিজমানের মামাও মেসিকে ‘স্বৈরাচারী’ বলেছেন। বলেছেন, মেসিই নাকি অন্যদের প্রভাবিত করছেন যেন গ্রিজমান ভালো করতে না পারেন! এমন প্রশ্নের উত্তরে সরাসরি বিরক্তি প্রকাশ করেছেন মেসি। এত শোরগোলের মধ্যে গ্রিজমানও আর চুপ করে থাকতে পারলেন না।
গ্রিজমান ও বার্সেলোনা অধ্যায়টা ২০১৯ নয়, ২০১৮ সালেই শুরু হতে পারত। ফ্রেঞ্চ ফরোয়ার্ডকে সেবারই নেওয়ার কথা ছিল বার্সেলোনার। গ্রিজমানের জন্য বাই আউট ক্লজের পুরোটাই দিয়ে তাঁকে আতলেতিকো থেকে টেনে নেওয়ার কথা পাকা ছিল। কিন্তু আচমকা এক তথ্যচিত্র বানিয়ে আতলেতিকোতেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলেন গ্রিজমান। জানিয়েছিলেন, বার্সেলোনায় যোগ দেওয়ার ইচ্ছা নেই তাঁর। মজার ব্যাপার এক বছর পরই আবারে সেই বার্সেলোনাতেই গেছেন এই ফরোয়ার্ড।
ইউনিভার্সো ভালদানো নামের এক অনুষ্ঠানে গিয়ে মেসির সঙ্গে নিজের সম্পর্কের ব্যাপারে বিস্তারিত বলেছেন গ্রিজমান। সেখানেই উঠে এসেছে তাঁর বার্সেলোনায় যোগদানসংক্রান্ত সে নাটকীয় সময়টার কথা। সে সময় মেসি যে তাঁর ওপর কিছুটা হলেও রেগেছিলেন, সেটা জানিয়েছেন গ্রিজমান, ‘আমি যখন এ ক্লাবে যোগ দিয়েছিলাম, তখন দলবদল পিছিয়ে দেওয়া এবং বার্সেলোনায় যোগ দেব না—এটা বলার জন্য ক্ষমা চেয়েছি। আমি মেসিকে বলেছি, এ ক্লাবের জন্য মাঠে আমার সর্বোচ্চ দেব। যখন প্রথম এসেছি, তখনই মেসির সঙ্গে কথা বলেছি। তখন আমাকে মেসি বলেছিলেন, যখন প্রথমবার আমি ক্লাবে যোগ দিইনি, তখন উনি বেশ বিপদে পড়েছিলেন। কারণ, প্রকাশ্যেই আমার দলবদলের ব্যাপারে কথা বলেছিলেন। কিন্তু তিনি আমার পক্ষেই আছেন (দলবদল হওয়ার পর) এবং সেটা প্রতিদিনই টের পাই।’
বার্সেলোনা ক্যারিয়ারটা এমনিতেই অনেক ঝড়ঝাপটার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে গ্রিজমানের। এর মধ্যেই জলটা ঘোলা করে দিয়েছে তাঁর সাবেক এজেন্ট এলিক ওলহাটস এবং মামা এমানুয়েল লোপেজ। মেসির সঙ্গে নাকি গ্রিজমানের সম্পর্ক ভালো না—এমনটাই দাবি এ দুজনের। যে আলোচনা শুনে মেসি কড়া প্রতিক্রিয়াই জানিয়েছেন, বার্সেলোনার সব সমস্যার কারণ হতে হতে ক্লান্ত আমি। এ অবস্থায় নিজের অবস্থান পরিষ্কার করা জরুরি হয়ে উঠেছিল ফরাসি ফরোয়ার্ডের জন্য।
সাক্ষাৎকারে গ্রিজমান বলছেন, সাবেক এজেন্টের সঙ্গে বহুদিন ধরেই তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই। ফলে ওলহাটস কী বললেন, তাতে কিছু যায়–আসে না, ‘সে আমার জীবনে একসময় খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন। কিন্তু তাঁর সঙ্গে আমার আর কোনো সম্পর্ক নেই। যেদিন বিয়ে করেছি, সেদিন থেকেই তাঁর সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। আমার বিয়েতে তাঁকে নিমন্ত্রণ পাঠিয়েছিলাম কিন্তু আসেননি। এ কারণেই তাঁর সঙ্গে আর কোনো সম্পর্ক নেই আমার। আমার মা–বাবাও এরিকের সঙ্গে কথা বলেন না। তাহলে তাঁর সঙ্গে কে কথা বলতে যাবেন? তিনি অনেক ক্ষতি করতে পারেন, ড্রেসিংরুমে অনেক ঝামেলা সৃষ্টি করতে পারেন।’
শুধু ওলহাটস নন, মেসির সঙ্গে গ্রিজমানের নেতিবাচক সম্পর্কের কথা তাঁর মামা এমানুয়েল লোপেজও বলেছেন। আত্মীয় তো আর গ্রিজমানের ক্ষতি চাইবেন না। কিন্তু এই ফরোয়ার্ডের দাবি, তাঁর মামাকেও এ ক্ষেত্রে বিশ্বাস করা ঠিক হবে না, ‘আমার মামা জানেই না ফুটবলে কী হয়। আর সাংবাদিকেরা তাঁর কাছ থেকে কথা বের করেছে, আমি মেসিকে বলেছি এদের সঙ্গে আমার কথা হয় না, আমার কাছে তো আমার মামার নম্বরও নেই!’
মেসি গ্রিজমানের যুক্তি মেনেছেন কি না কে জানে!