এটাই অনুমিত ছিল। যতই জাভিকে নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার স্বপ্ন গাঁথেন ভিক্তর ফন্ত, যতই ‘এমবাপ্পেকে কেনে দেব, হরলান্ডকে এনে দেব’ বলে টোপ ফেলেন টনি ফ্রেইক্সা, বার্সেলোনার সবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল মেসিকে ধরে রাখার উপায় খুঁজে বের করা। আর ক্লাব ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড়কে ধরে রাখার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো হোয়ান লাপোর্তাকে ক্লাব সভাপতি করে আনা। ক্লাব পরিচালনা নিয়ে অন্ধকার যুগে ঢুকে পড়া বার্সেলোনার সদস্যরা সেটাই করেছেন। দ্বিতীয়বারের মতো ক্লাব সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করেছেন লাপোর্তাকে।
২০০৩ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত বার্সেলোনার সভাপতি ছিলেন লাপোর্তা। এ সময়টাতেই বার্সেলোনার শ্রেষ্ঠ সময়ের শুরু। দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়, মেসির অভিষেক, জাভি-ইনিয়েস্তাদের আবির্ভাব এবং পেপ গার্দিওলার সুবাদে সর্বকালের অন্যতম সেরা এক দলে পরিণত হওয়া। সে দলই যখন দেউলিয়া হওয়ার দশা, ঠিক তখন আবার ক্লাবের দায়িত্ব নিতে আগ্রহী হয়ে ফিরেছেন লাপোর্তা। মৌসুমের শুরুতেই ক্লাব ছাড়তে চাওয়া মেসিকে ধরে রাখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। বার্সেলোনার বোর্ড সদস্যরা তাঁকেই বেছে নেবেন, এতে আর বিস্ময় কী!
বার্সেলোনার জন্য এবারের নির্বাচন কত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল, সেটা গতকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই টের পাওয়া গিয়েছে। লিওনেল মেসি থেকে সের্হিও বুসকেতস, জর্দি আলবা থেকে সের্হিও রবার্তো—সবাই ভোট দিতে হাজির ছিলেন। নিজেরা তো ভোট দিয়েছেনই, সে ভোট দেওয়ার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করে অন্যদেরও ভোট দিতেও উৎসাহিত করেছেন। প্রকাশ্যে কোনো প্রার্থীর হয়ে কোনো খেলোয়াড় কথা বলেননি। কিন্তু এটা তো বহু আগে থেকেই জানা, লাপোর্তা ছাড়া অন্য যেকেউ নির্বাচিত হলে মেসিকে আর আটকে রাখা যাবে না ক্যাম্প ন্যুতে।
বার্সেলোনার সদস্যরা সেটা জানতেন। আর জানতেন বলেই ৫৪.২৮ শতাংশ ভোট পেয়েছেন লাপোর্তা। ৩০ হাজার ১৮৪ ভোটে ছয় বছরের জন্য বার্সেলোনার দায়িত্ব বুঝে নিয়েছেন মেসিদের সভাপতি। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ফন্ত পেয়েছেন ১৬ হাজার ৬৭৯ ভোট। আর ক্লাবের আর্থিক দুঃসময়ে এমবাপ্পে-হরলান্ডের এনে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিটা যে শুভংকরের ফাঁকি, সেটা বার্সেলোনা সদস্যরা ঠিকই বুঝে ফেলেছিলেন। এ কারণেই ফ্রেইক্সার কপালে মাত্র ৪ হাজার ৭৬৯ ভোট জুটেছে।
লাপোর্তাকে ক্লাবের ১৪তম সভাপতি বানাতে প্রচুর মানুষ ভোট দিতে এসেছিলেন। গতকাল ৫৫ হাজার ৬১১ জন ভট দিতে এসেছিলেন, যা বার্সেলোনার সদস্যদের ৫০.৪২ ভাগ। বার্সা ইতিহাসে এর আগে শুধু একবারই এর চেয়ে বেশি ভোট দিতে দেখা গেছে। ২০১০ সালে যখন লাপোর্তার সময় শেষ হলে সান্দ্রো রোসেল নির্বাচিত হন ভোটে। পরবর্তী সময়ে আর্থিক অনিয়মে জেল খাটা এই সভাপতি ৩৫ হাজার ২১ ভোট পেয়েছিলেন। সেবার ৫৭ হাজার ৮৮ ভোটার ভোট দিয়েছিলেন। করোনা পরিস্থিতি না থাকলে এবার সে রেকর্ড নিশ্চিতভাবেই ভাঙত।
লাপোর্তার সামনে এখন কঠিন সময়। আর্থিকভাবে ভয়ংকর দুর্দশার মধ্যে থাকা ক্লাবটি তাদের স্টেডিয়াম নতুন করে পুনর্নির্মাণ করার পরিকল্পনা করেছে। এর মধ্যেই মেসির বেতন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ক্লাবের বর্তমান অবস্থায় মেসির বেতন না কমিয়ে বার্সেলোনা চলতে পারবে কি না, সে প্রশ্নও আছে। এর মধ্যেই আবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো দল গড়ার দায়িত্বও আছে লাপোর্তার। নির্বাচনে জেতার পর মেসিকে ঘিরেই যে তাঁর সব পরিকল্পনা, সেটা জানিয়ে দিয়েছেন সদ্য নির্বাচিত সভাপতি, ‘২০ বছর আগে এই দিনে বার্সেলোনার অনূর্ধ্ব-১২-১৩ দলের হয়ে লিওনেল মেসির অভিষেক হয়েছিল। বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়কে তার ছেলেকে নিয়ে ভোট দিতে আসাই আমরা কী বলছি তার উদাহরণ। লিও বার্সেলোনা ভালোবাসে। এটা তারই উদাহরণ। বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় বার্সেলোনাকে ভালোবাসে। আশা করি, এটা তাকে বার্সেলোনায় রেখে দেওয়ার ব্যাপারে সাহায্য করবে। আমরাও এটাই চাই।’