ম্যারাদোনার মৃত্যুর ধরন নিয়ে প্রশ্ন আছে ভক্তদের মনে।
ম্যারাদোনার মৃত্যুর ধরন নিয়ে প্রশ্ন আছে ভক্তদের মনে।

মৃত্যুর আগে ৬-৮ ঘণ্টা তীব্র যন্ত্রণায় ভুগেছেন ম্যারাডোনা

ডিয়েগো ম্যারাডোনা অন্য লোকে পাড়ি জমিয়েছেন গত মাসে। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর রেশ এখনো কাটেনি। ফুটবল বিশ্ব একদিকে যেমন শোক কাটিয়ে উঠতে পারেনি, তেমনি বিতর্কও উঠেছে তাঁর মৃত্যুর কারণ ঘিরে।

আর্জেন্টাইন কিংবদন্তির চিকিৎসায় কি কোনো অবহেলা হয়েছে? এমন প্রশ্ন এর আগে স্বয়ং ম্যারাডোনার মেয়েরাই তুলেছিলেন। এবার ম্যারাডোনার দেহের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর বিতর্কটা নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। ’৮৬ বিশ্বকাপ কিংবদন্তি কি তাহলে সত্যি সত্যিই অবেহলার শিকার হয়ে মরেছেন?

অন্তত আজ আর্জেন্টিনার সরকারি কৌঁসুলির পেশ করা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেখে তেমন মনে হতেই পারে।

ম্যারাডোনার মৃত্যুর ধাক্কা এখনো কাটিয়ে উঠছে না আর্জেন্টিনা।

ম্যারাডোনা দীর্ঘদিন মাদকাসক্ত ছিলেন। মৃত্যুর আগে সর্বশেষ চিকিৎসায় তাঁর শরীরে এই আসক্তির চরম মাত্রায় উপস্থিতিও ধরা পড়েছিল। কিন্তু মৃত্যুর পর তাঁর এই সর্বশেষ ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন বলছে, শেষনিশ্বাস ফেলার আগে ম্যারাডোনার শরীরে কোনো মাদকের অস্তিত্ব মেলেনি। এমনকি অ্যালকোহলের অস্তিত্বও ধরা পড়েনি। প্রাথমিক প্রতিবেদনে জানা গিয়েছিল, হৃদরোগে ভুগে ম্যারাডোনা ঘুমের মধ্যে মারা গেছেন।
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে আরও ধরা পড়েছে, ম্যারাডোনার হৃদযন্ত্রের গতি স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছিল। তাঁর ফুসফুস, কিডনি ও যকৃৎ পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।

৬০ বছর বয়সে না ফেরার দেশে পাড়ি জমানো ম্যারাডোনাকে মৃত্যুর আগে মানসিক নানা সমস্যার চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। উদ্বেগ, হতাশা ছাড়াও অন্যান্য মানসিক ব্যাধির জন্য সাত রকম ওষুধ খাচ্ছিলেন তিনি, জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম। কিন্তু আর্জেন্টিনার বিচার বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছে, ‘অবৈধ কোনো ড্রাগের অস্তিত্ব’ তাঁর শরীরে পাওয়া যায়নি। বুয়েনস এইরেস বৈজ্ঞানিক পুলিশের অফিস থেকে এ ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

যন্ত্রণাকাতর নয়, ম্যারাডোনার এমন চেহারাই ভক্তদের স্মৃতিতে থাকবে।

আর্জেন্টিনার সংবাদ সংস্থা তেলাম প্রেস এজেন্সিকে এক তদন্তকারী বলেছেন, ‘পরীক্ষাগারের বিশ্লেষণে যে ফল বেরিয়ে এসেছে, তা গুরুত্বপূর্ণ। ম্যারাডোনাকে মানসিক সমস্যার ওষুধ দেওয়া হচ্ছিল, কিন্তু হৃদরোগের কোনো ওষুধ দেওয়া হয়নি।’
ম্যারাডোনার দীর্ঘদিনের চিকিৎসক লিওপোলদো লুক এবং মনোবিদ অগাস্তিনা কোসাচভ এখন তদন্তের অধীন রয়েছেন। গত নভেম্বরে ম্যারাডোনার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বন্ধে অস্ত্রোপচার করানো হয়। তখন থেকেই লুকের চিকিৎসা দলের সঙ্গে কাজ করছিলেন কোসাচভ। এর কিছুদিন পর মারা যান সর্বকালের অন্যতম সেরা এই ফুটবলার। সংবাদমাধ্যম জানায়, ম্যারাডোনার চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ গঠনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন কৌঁসুলিরা।

ম্যারাডোনার মেয়ে জিয়ান্নিনা এর আগে তাঁর বাবার আইনজীবী মাতিয়াস মোরলার বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি করেছিলেন। বাবার মৃত্যুর পরপরই চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ তুলেছিলেন জিয়ান্নিনা। গত ২৫ নভেম্বর মৃত্যুর আগে কয়েক বছর ম্যারাডোনা যে পরিবেশে ছিলেন, তা নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন না ম্যারাডোনার দুই মেয়ে দালমা ও জিয়ান্নিনা। বরাবরই তাঁরা অভিযোগের আঙুল তুলেছেন মোরলার দিকে।

এক মাস হয়ে গেছেন, বিদায় নিয়েছেন কিংবদন্তি।

এদিকে ম্যারাডোনার আইনজীবী মোরলাও তখন চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ তুলেছিলেন। অ্যাম্বুলেন্স ঠিক সময়মতো না পৌঁছানো এবং মৃত্যুর বেশ কয়েক ঘণ্টা আগে কোনো চিকিৎসক তাঁর মক্কেলকে দেখেননি বলে অভিযোগ তুলেছিলেন মোরলা।

নতুন এই ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বিস্ময়কর তথ্য হলো, মৃত্যুর আগে কমপক্ষে ছয় থেকে আট ঘণ্টা ভীষণ যন্ত্রণায় ভুগেছেন ম্যারাডোনা। এই যন্ত্রণা বহাল ছিল তাঁর শেষনিশ্বাস ত্যাগের আগ পর্যন্ত। তাঁর শরীরে যেসব ওষুধের অস্তিত্ব মিলেছে, এর সবই খিঁচুনি, পেটের সমস্যা, মাদকাসক্তিসহ মানসিক সব সমস্যার জন্য। কিন্তু ফুসফুস, কিডনি কিংবা যকৃতের চিকিৎসার জন্য কোনো ওষুধের অস্তিত্ব মেলেনি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে ক্ষোভ ঝেড়েছেন জিয়ান্নিনা, ‘সবাই আমার বাবার ময়নাতদন্তে ড্রাগ, মারিজুয়ানা ও মদের অস্তিত্ব পাওয়ার অপেক্ষায় ছিল। আমি কোনো চিকিৎসক নই, কিন্তু তাঁকে ধীরে ধীরে স্ফীত হতে দেখেছি। কণ্ঠস্বর ছিল যান্ত্রিক, মনে হতো না এটা তাঁর গলা।’