মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া চক্রকে এক কোটি টাকা দিল ‘হিসাব’

মুক্তিযোদ্ধা অধিনায়ক ইউসুকে কাতোর হাতে ক্লাবের নতুন জার্সি।
ছবি: প্রথম আলো

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে এসে সবাইকে চমকে দিলেন বাংলাদেশে বসবাসরত জাপানি নাগরিক হিরোকি ওয়াতানাবে। শুদ্ধ বাংলায় একনাগাড়ে কথা বলে গেলেন। গেয়ে শোনালেন লালনগীতির কয়েক লাইন। মজা করে একপর্যায়ে বক্তব্যের মাঝে বললেন, ‘আজ এখানে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রের সঙ্গে শুভ বিবাহ হলো প্রযুক্তি খাতের প্রতিষ্ঠান হিসাবের। শুভ বিবাহ এ জন্যই বলছি, কারণ, বিয়ে কখনো এক বছরের জন্য হয় না। বিয়েটা হয় দীর্ঘস্থায়ী।’

আর্থিক সংকটে ভুগতে থাকা প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রের সঙ্গে আজ রাজধানীর একটি হোটেলে এক বছরের চুক্তি করেছে প্রযুক্তি খাতের অন্যতম প্রতিষ্ঠান ‘হিসাব’। ইন্টারনেট ও স্মার্টফোন ছাড়াই দৈনিক আয়-ব্যয়ের হিসাব রাখার প্রযুক্তিগত প্রতিষ্ঠান হিসাব চলতি মৌসুমের জন্য মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া চক্রকে দিয়েছে এক কোটি টাকা। মুক্তিযোদ্ধার এই মৌসুমের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হয়েছে হিসাব। পরশু শুরু হতে যাওয়া প্রিমিয়ার লিগে মুক্তিযোদ্ধার জার্সিতে লেখা থাকবে ‘হিসাব’ নামটি।

হিসাব বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি জাপানের টোকিও ইলেকট্রিক পাওয়ার কোম্পানির (টেপকো) সঙ্গে কাজ করছে। এই স্পনসর জোগাড়ের ক্ষেত্রে বড় অবদান রয়েছে মুক্তিযোদ্ধার জাপানি মিডফিল্ডার ইউসুকে কাতোর। কাতোর আমন্ত্রণেই চুক্তি সই অনুষ্ঠানে এসেছিলেন বাংলাদেশের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ করা হিরোকি ওয়াতানাবে, তাঁর স্ত্রী বাংলাদেশে কর্মরত মায়ে ওয়াতানাবেসহ অনেক জাপানি।

মৌসুমের শুরুতে মুক্তিযোদ্ধার আর্থিক সংকট এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে দলটি মাঠে নামতে পারবে কি না, তা নিয়েই দেখা দেয় শঙ্কা। মুক্তিযোদ্ধার অধিনায়ক কাতো ক্লাবের সংকটময় পরিস্থিতিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও বার্তায় সহযোগিতার আহ্বান জানান। ওই আহ্বানে সাড়া দিয়ে সদ্য শেষ হওয়া ফেডারেশন কাপের জন্য ১০ হাজার মার্কিন ডলার দেয় জাপানি প্রতিষ্ঠান এ-উইং তাগুচি কোম্পানি লিমিটেড। এবার এগিয়ে এসেছে হিসাব।

চুক্তি সই অনুষ্ঠানে আসা কাতোর কণ্ঠে স্বাভাবিকভাবেই ছিল উচ্ছ্বাস, ‘সত্যি বলতে কি, আমি খুব খুশি। এখানে স্পনসর পেতে আমি একাই কাজ করেছি, ব্যাপারটা তা নয়। বাংলাদেশের মানুষেরাও সাহায্য করেছে। আমার ভিডিও ফেসবুকে লাইক পড়েছে, শেয়ার করেছে অনেকে। এরপরই বড় কিছু করার বিষয়টা ভেবেছি। মাঠে ও মাঠের বাইরে কাজ করা সত্যি কঠিন। কিন্তু ফুটবলের জন্যই এটা করেছি, আমার জন্য যা বিরাট অভিজ্ঞতা। আশা করি এখন সবাই আরও ভালো খেলতে উৎসাহ পাব।’

মুক্তিযোদ্ধার আর্থিক সংকটে এগিয়ে এসেছে হিসাব।

মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া চক্রের পাশে দাঁড়াতে পেরে খুশি হিসাবের প্রধান পরিচালনা কর্মকর্তা ফায়াদান হোসেন, ‘১৯৭১ সালে আমার জন্ম হয়নি। কিন্তু একাত্তরের প্রেরণা প্রত্যেক বাঙালির মধ্যেই আছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির সময় যখন শুনতে পেলাম মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া চক্রের মতো একটা দল আর্থিক সমস্যায় পিছিয়ে পড়েছে, তখন আমরা ক্লাবটিকে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছি। যাতে দলটা আরও ভালো কিছু করতে পারে। আমরা সবে শুরু করেছি। শুধু এই বছরই নয়, এই ক্লাব নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি একটা পরিকল্পনাও আছে আমাদের।’

কাল চুক্তি সই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ক্লাবের প্রধান উপদেষ্টা মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসান, হিসাবের অঙ্গসংগঠন ভয়েজ ব্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামীম আরা, মুক্তিযোদ্ধার টিম ম্যানেজার আরিফুল ইসলাম। ক্লাবের পক্ষে চুক্তি সই করেন মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া চক্রের সভাপতি জহুরুল ইসলাম, হিসাবের পক্ষে সই করেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক যুবায়ের আহমেদ।