>লাওসের বিপক্ষে আজ বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রাক্–বাছাইপর্বের ফিরতি ম্যাচে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপ ক্রিকেটেও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলা বাংলাদেশের। জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া আজ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে হাজির হয়ে তাঁর দলকে সমর্থন দিতে অনুরোধ জানিয়েছেন দেশের খেলাপ্রেমীদের।
চলছে বিশ্বকাপ ক্রিকেট। বাংলাদেশের ক্রীড়াপ্রেমীদের মনস্তত্ত্ব বিবেচনায় দেশের জন্য এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্ট। যেহেতু ফুটবলের হারানো তখত এখন ক্রিকেটের। মাশরাফি-সাকিবদের সামান্য একটা কথা, একটা ভিডিও দেখতেও লাখো মানুষ পড়ে থাকেন অনলাইন সংবাদমাধ্যমে। আর ম্যাচ দেখার কথা না হয় বাদই থাক। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ম্যাচ যখন চলে, তখন তো রাস্তাঘাটও বেশ ফাঁকা হয়ে যায়! আজ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বিশ্বকাপের খেলা। আজই আবার ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রাক্–বাছাইয়ে লাওসের বিপক্ষে বাংলাদেশের ফিরতি ম্যাচ। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ডামাডোলের মধ্যে ফুটবল নিয়ে ভাবারও যেন সময় নেই এ দেশের খেলার দর্শকদের।
দেশের ফুটবল নিয়ে আলোচনাতে সব সময়ই গেল, গেল রব ওঠে! ফুটবল শেষ! দর্শকদেরও দোষ দেওয়া যাবে না। ফুটবল কম হতাশ করেনি। তা বয়ান করতে গেলে বিয়োগান্তক মহাকাব্য হয়ে যায়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আশার ফুল ফুটতে শুরু করেছে। কম্বোডিয়াকে তাদের মাটিতে হারিয়েছে জাতীয় ফুটবল দল। লাওসের বিপক্ষে তাদের মাটিতেই জিতে বিশ্বকাপের প্রাক্–বাছাইয়ে অনেকটা পথ এগিয়ে গেছে দল। গত আগস্টে প্রথমবারে মতো খেলা হয়েছে এশিয়ান গেমসের দ্বিতীয় রাউন্ডে—এ এমন অর্জন যা ফুটবলের সোনালি সময়েও ধরা দেয়নি। কিন্তু সমর্থক প্রকারান্তরে দর্শক মাঠে ঠিক প্রত্যাশানুযায়ী ধরা দিচ্ছে না। আর তাই গ্যালারিতে একটু সমর্থনের আশায় জাতীয় দলের অধিনায়ককে হাতজোড় করতে হয়, অনুরোধ করে বলতে হয়—আপনারা দয়া করে মাঠে আসুন।
এ যেন দীর্ঘকালব্যাপী চলে আসা কোনো পাপের প্রায়শ্চিত্ত! একসময়ের উর্বরা ফসলা জমি নিষ্ফলা হতে থাকলে কৃষকেরা চেষ্টার খামতি রাখেন না। কথাটা ফুটবলের সঙ্গে মেলালে চেষ্টার জায়গায় হেলাই বেশি চোখে পড়ে। এখন সেই হেলার রেখা যখন মুছতে শুরু করেছে তখন তো বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে বসেও মাশরাফিদের সমর্থন দেওয়া যায়। অত্যাধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচটা না হয় সরাসরি দেখলেন মুঠোফোনে। আর পোড়া চোখ দুটো রাখলেন মাঠের সবুজ গালিচায়—যেখানে আজ প্রাক্-বাছাইপর্বের ফিরতি লেগে লাওসের মুখোমুখি হবে জামাল ভূঁইয়ার দল।
লাওসের মাঠে গিয়ে প্রথম লেগ ১-০ গোলে জেতায় আজকের ম্যাচটা বাংলাদেশের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। নিদেনপক্ষে ড্র করলেই বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে পা রাখবে বাংলাদেশ। নাক–উঁচু সমর্থক মাত্রই বলতে পারেন, ধুর! ক্রিকেট দল যেখানে বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে ওঠার চেষ্টা করছে, সেখানে ফুটবল দলের বাছাইপর্বে ওঠার চেষ্টা দেখা এই যুগে সময় নষ্ট ছাড়া আর কিছুই না। সম্ভবত এমন সমর্থকদের উদ্দেশেই হাতজোড় করে মাঠে আসার অনুরোধ করেছেন বাংলাদেশ ফুটবল দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া। কাল প্রথম আলোতে এক ভিডিও বার্তায় সমর্থকদের প্রতি অধিনায়কের করজোড় আকুতি, ‘আশা করি যারা ফুটবল উপভোগ করে, তারা মাঠে আসবে। সন্ধ্যা সাতটায়। বাংলাদেশের সব ফুটবলপ্রেমীর প্রতি অনুরোধ, আগামীকাল (আজ) দয়া করে স্টেডিয়ামে এসে জাতীয় দলকে সমর্থন দিন।’
জাতীয় দল! এ কথাটার মধ্যেই কেমন এক অনিবর্চনীয় অনুভূতি, সুখের রেশ বুদ্বুদ করে ওঠে ক্রীড়াপ্রেমীদের মনে। একটা সময় ছিল, যখন ক্লাব পর্যায়ের ফুটবলেও দ্বিখণ্ডিত হয়ে পড়ত গোটা দেশ। দেশের ফুটবলপ্রেমীরা এখনো দ্বিখণ্ডিত হন, কিন্তু সেটি মাদ্রিদ-বার্সেলোনা কিংবা ম্যানচেস্টার লাল না নীল তা নিয়ে। ঘরের খেয়ে বিদেশের মোষ চরানোর এ দায় পুরোটাই দেশের ফুটবলের। কিন্তু যখন সেই ফুটবলেই উষার রেখাপাত ঘটছে, তখন ক্রীড়াপ্রেমী হিসেবে অন্তত সেই আলোটুকু মনে মাখতে অধিনায়কের কথা রাখা যায়, যায় না? হোন না যতই ক্রিকেটের পাঁড় ভক্ত, শূন্য হাতে ফিরতে ফিরতে যতই ফুটবলের প্রতি বিষিয়ে উঠুক মন—শুধু একবার ভেবে দেখুন জায়গাটা যদি পাল্টে যেত, তাহলে? করজোড় করা জামাল ভূঁইয়ার জায়গায় মাশরাফি! নাহ, আর বোধ হয় ভাবা যাচ্ছে না। তবে এতটুকু ভাবা যায়, মান-মর্যাদায় যতই পার্থক্য থাক, দুজনেই কিন্তু জাতীয় দলের অধিনায়ক।
এই বোধটুকু দেশের অনেক ক্রীড়াপ্রেমীর মধ্যে আছে বলেই জামাল ভূঁইয়ার ভিডিওতে দর্শকসংখ্যা আশি হাজারের ওপরে। আপনিও চলে আসুন না সংখ্যাটা বাড়াতে? নাহ ভিডিওতে নয়, যেখানে সমর্থকেরা জন্মায়—গ্যালারি। আর ভুলে যাবেন না, এই গ্যালারি শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের নয়, বঙ্গবন্ধুর!