>চার ম্যাচ পর জয় পেয়েই সমালোচকদের দিকে ঢিল ছুড়েছেন মরিনহো। পাটকেল ছুটে আসতেও দেরি হয়নি
নিউক্যাসল ইউনাইটেডের বিপক্ষে দুই গোল ব্যবধানে পিছিয়ে পড়া থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ৩-২ গোলের জয়! গতকাল ওল্ড ট্রাফোর্ডে দুর্দান্ত এক প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখেছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। নিউক্যাসলের বিপক্ষে বারবার পিছিয়ে পড়েও ম্যাচ জেতার ঐতিহ্য ধরে রাখতে পেরেছে রেড ডেভিলরা। তবে গতকালের জয়ের একটি মাহাত্ম্য আছে। এ জয়ে যে চাকরি বেচেছে হোসে মরিনহোর।
টানা ব্যর্থতায় মরিনহোর ওপর ক্ষেপে উঠেছে ইউনাইটেড সমর্থকেরা। অতিরিক্ত নেতিবাচক খেলার ধরনও এর পেছনে ভূমিকা রেখেছে। টানা চারটি ম্যাচ জয়হীন থাকার পর কালকে জয় বড় দরকার হয়ে পড়েছিল মরিনহোর। জয়ের পর তাই আর দেরি করেননি পর্তুগিজ কোচ। সমালোচকদের ধুয়ে দিয়েছেন একেবারে। শুধু শুধু নাকি তাঁর পেছনে লেগেছে তারা। সমালোচকেরা নাকি যেকোনো ভুলেই মরিনহোকে খুঁজে পান, ‘আমাকে উদ্দেশ্য করে অনেক কিছুই ঘটেছে। অনেক কথা হয়েছে। ভাবতে শুরু করেছিলাম, লন্ডনে কাল বৃষ্টি হলে সেটি আমার দোষ, আবার লোকজন ব্রেক্সিট পছন্দ না করলেও সেটি আমার দোষ। ২০২০ সাল পর্যন্ত চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোয় আমাকে দোষ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমি ক্লাবের প্রতি পিস্তল তাক করে চুক্তির মেয়াদ বাড়াইনি। ওরা আমার সঙ্গে চুক্তি করতে চেয়েছে।’
মরিনহো দাবি করেছেন, ইউনাইটেডের খেলোয়াড়দের বাজে পারফরম্যান্সের পেছনে নাকি সমালোচকরাই দায়ী। তাঁর সঙ্গে ফুটবল বিশ্লেষকদের অসদাচরণ ও তাঁকে শিকার বানানোর চেষ্টার প্রভাব নাকি খেলোয়াড়দের ওপর পড়েছে। মরিনহোর এমন নাকিকান্নায় আর যেই হোক রিও ফার্ডিনান্ড ভড়কাননি। বিটি স্পোর্টসে আরেক ইউনাইটেড কিংবদন্তি পল স্কোলসের পাশে বসে মরিনহোর কথা বার্তা যে কতটা হাস্যকর সেটা প্রমাণ করে দিয়েছেন ফার্ডিনান্ড, ‘আমি জানি না কোত্থেকে “অসদাচরণ” ও “শিকার” এল। আমি জানি না সে কী নিয়ে কথা বলছে। কারণ, ফুটবল মাঠে যদি কিছু দেখেন, আপনি কথা বলতে বাধ্য। সে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ম্যানেজার। জিতুক, হারুক কিংবা ড্র করুক—ইউনাইটেডের কোচ সবার নজরে থাকবেই। সমালোচনাও হবে।’
ইউনাইটেডের মতো সফল দলের কোচ হতে হলে সব সময় তটস্থ থাকতে হবে। সাফল্য পেতে অভ্যস্ত এ দলের কোচের জন্য পান থেকে চুন খসলেই সমস্যা। ফার্ডিনান্ড মনে করেন মরিনহো এই স্বাভাবিক ব্যাপারকেই ভিন্ন চেহারা দিতে চাইছেন, ‘ইউনাইটেডের কোচ হওয়া মানেই হলো, নিজের ইচ্ছামতো সবকিছু পাবেন না।। বিশেষ করে, খারাপ সময়ে। যদি অবস্থা খারাপ হয় তবে ভয়ংকর নজরদারির মধ্যে পড়বেন, সবাই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সবকিছু দেখবে। এ চাকরির অংশই এটি। এটা কোথাও না কোথাও লেখা আছে। এমন তো না ইউনাইটেড খারাপ করুক এমন কিছু দেখার জন্য বসে আছি আমরা। আমরা চাই দ্বিতীয়ার্ধে ইউনাইটেড যেমন খেলেছে তেমন খেলুক।’
গতকাল প্রথমার্ধে দুই গোলে পিছিয়ে পড়ার পর দ্বিতীয়ার্ধে দুর্দান্ত খেলেছে ইউনাইটেড। অনেক দিন পর অ্যালেক্স ফার্গুসনের সেই ক্ষুধার্ত ইউনাইটেডের দেখা মিলেছে। মরিনহো যতই দাবি করুন তাঁর ইউনাইটেড আগেও এমন খেলেছে, ফার্ডিনান্ড সেটা মানতে রাজি নন, ‘মরিনহো যদি দাবি করে আজ যে পারফরম্যান্স দেখলাম—এই খুধা, আকাঙ্ক্ষা, আত্মনিবেদন সে এ মৌসুমে আগেও দেখাতে পেরেছে, তবে ভুল বলছে। সে এটা বললে মিথ্যা বলছে। এমন কিছু আগে দেখা যায়নি। আমাদের কী করা উচিত ছিল? অন্য কিছু? (যখন ইউনাইটেড বাজে খেলছিল) আমাদের কি বলা উচিত ছিল, “ওহ, খুব ভালো খেলছে, এটা ঠিক আছে, সে ঠিক আছে, সে সব ঠিক করে দেবে?”’
ফার্ডিনান্ড তাই বলে দিয়েছেন, সমালোচনা থেকে বাঁচতে চাইলে দলকে ভালো খেলাতে হবে মরিনহোর। একের পর এক অজুহাত সৃষ্টি করে আর সমালোচকদের দোষ ধরে কোনো লাভ হবে না তাঁর, ‘আমরা তাই বলি যা আমরা দেখি। এর বাইরে অন্য কিছু আশা করা ঠিক না। বসে থাকবেন আর কান্নাকাটি করবেন, “ওরা আমাকে কষ্ট দেয়”, “ওরা অবিচার করছে”, আমার কাছে এটা হাস্যকর মনে হয়। আমি ওসব শুনতে শুনতে হাসছিলাম।’