বিরতির বাঁশি বাজিয়ে দিয়েছেন রেফারি। দুই দলের খেলোয়াড়েরা চলে গেছেন ড্রেসিংরুমে। হঠাৎই রেফারির মনে একটা খটকা জাগল। তিনি ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারির সাহায্য চাইলেন। অতিথি দলের নির্জলা ফাউল। স্বাগতিক দলের পক্ষে দিলেন পেনাল্টি কিক। ড্রেসিংরুম থেকে খেলোয়াড়দের ডেকে এনে তবেই ওটা কার্যকর করলেন। এই গোলের সুবাদেই পরিণামে জিতে গেল মেইঞ্জ। আর বহুদিন বাদে অবনমন হলো ফ্রেইবুর্গের।
জার্মানির বুন্দেসলিগায় গত এপ্রিল মাসের ঘটনা। বুন্দেসলিগা পরীক্ষামূলকভাবে এ মৌসুম থেকে চালু করেছে ভিএআর পদ্ধতি। আর ভিএআর-নাটক দেখে তখনই অনেকে প্রমাদ গুনেছিলেন, বিশ্বকাপে ভিএআর না ভয়ংকর হয়ে ওঠে। একে তো এতে খেলার নিষ্পত্তি হতে সময় লাগবে বেশি, তারপর এমন নাটক চললে মানুষ মেনে নেবে না। তা ছাড়া খেলার মধ্যে প্রযুক্তির এমন ব্যবহার চললে খেলাটা হারিয়ে ফেলবে মানবিক আবেদন।
তবে আজ ২১ জুন পর্যন্ত যে ২২টি ম্যাচ দেখল রাশিয়া বিশ্বকাপ, তাতে ভিএআর কিন্তু ভয়ংকর কোনো আপদ হয়ে ওঠেনি। ভিএআর কোনো বিতর্কিত সিদ্ধান্ত দিতে সময় নিচ্ছে সর্বোচ্চ ১৬ সেকেন্ড। খুব বেশি দল ভিএআর নিয়ে প্রশ্নও তোলেনি।
তবে যে দলটি প্রশ্ন তুললে বিশ্ব ফুটবল একটু হলেও ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়, সেই ব্রাজিলই তুলেছে বড় প্রশ্নটি। ভিএআর নিয়ে ফিফার কাছে নালিশ করেছেন ব্রাজিলিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের সভাপতি রোজেরিও কাবোক্লো। সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে ব্রাজিলের ড্র করার কারণ হিসেবে তিনি দাঁড় করিয়েছেন মেক্সিকান রেফারি সিজার রামোসের ভিএআরের সাহায্য চাইতে অনীহা। কাবোক্লোর ধারণা, ভিএআরের সাহায্য নিলে সুইজারল্যান্ডের সমতাসূচক গোলটি হয় না। এমনকি ম্যাচের শেষ দিকে গ্যাব্রিয়েল জেসুসকে বক্সে ফাউল করার দায়ে একটি পেনাল্টিও পায় ব্রাজিল।
ব্রাজিল জানত, ম্যাচ শেষ হয়ে যাওয়ার ২৪ ঘণ্টা পর অভিযোগ করে কোনো সুবিধা হবে না। এটা তাই লোককে জানান দেওয়া অভিযোগ। নিক্ষিপ্ত তির কি আর ফিরিয়ে নেওয়া যায়? দুর্মুখেরা অবশ্য ভাবছে, ভিএআর নিয়ে অভিযোগ তুলে ব্রাজিল চাপে রাখল ফিফাকে।
আজ সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিক তিতেকে ভিএআর নিয়ে প্রশ্ন করলেন। প্রশ্নটি মামুলি গোছের নয়। এর মধ্যে জড়িয়ে আছে বিশ্ব ফুটবল নীতির মারপ্যাঁচ। ব্রাজিলিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন কি ভিএআরকে রাজনৈতিক হাতিয়ার করে সুবিধা নিতে পারে না?
ব্রাজিল কোচের মুখে হাসি, ‘না না, তা কেন? ভিএআর নিয়ে আমরা প্রশ্ন তুলেছিলাম। ওটা চুকেবুকে গেছে। আমাদের এখন তাকাতে হবে সামনে। ব্রাজিল কোনো অন্যায় সুবিধা নিতে চায় না। আমরা খেলেই জিততে চাই। প্রতিপক্ষের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা আছে।’
তাদের ফুটবলে বিমোহিত সারা বিশ্ব। ব্রাজিল আর সুন্দর ফুটবল তো পরস্পরের প্রতিশব্দ। ব্রাজিল কেন অন্যায় সুবিধা নিয়ে জিততে চাইবে?