ম্যাচ শেষে রেফারির কাছে ব্যাখ্যা চাইছেন জিদান।
ম্যাচ শেষে রেফারির কাছে ব্যাখ্যা চাইছেন জিদান।

ভিএআরে কপাল পুড়ল রিয়ালের, আর খোঁচা মারলেন বার্সার পিকে

রিয়াল মাদ্রিদের কোনো ম্যাচে রেফারিং নিয়ে বিতর্ক হয়েছে, আর বার্সেলোনার জেরার্ড পিকে সেটা নিয়ে খোঁচা মারবেন না! এমনটা হয় নাকি!

যোগ করা সময়ের চতুর্থ মিনিটে গতকাল এডেন হ্যাজার্ডের গোলে সেভিয়ার সঙ্গে নিজেদের মাঠে ২-২ গোলে ড্র করেছে রিয়াল। যে ম্যাচ জিতলে স্প্যানিশ লিগের শিরোপা লড়াইয়ের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিয়ে নিতে পারত, সে ম্যাচে পয়েন্ট হারিয়ে লিগের শিরোপাদৌড় আবার উন্মুক্ত করে দিল জিনেদিন জিদানের দল। আর এই ম্যাচে বিতর্ক ছড়িয়েছে ভিএআরের একটা সিদ্ধান্ত।

সিদ্ধান্তটা এবার রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষেই গেছে। ৭৮ মিনিটে মাদ্রিদ বক্সে তাদেরই ডিফেন্ডার এদের মিলিতাওয়ের হাতে বল লাগে, ভিএআর সেটিতে পেনাল্টি দেয়। যে পেনাল্টি থেকে গোল করে ম্যাচে দ্বিতীয়বার সেভিয়াকে এগিয়ে নেন বার্সেলোনা থেকে এই মৌসুমে আবার সেভিয়ায় ফেরা মিডফিল্ডার ইভান রাকিতিচ। তা ম্যাচের পর মাদ্রিদ এই সিদ্ধান্ত নিয়ে খেপেছে, আর তা নিয়ে শ্লেষাত্মক মন্তব্য করেছেন পিকে।

এমন একটা মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ভিএআর কীভাবেই না ম্যাচের গল্প বদলে দিল! ৭৫ মিনিটে পাল্টা–আক্রমণে সেভিয়া রক্ষণকে ফাঁকি দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া মাদ্রিদ ফরোয়ার্ড করিম বেনজেমাকে বক্সে ফেলে দেন সেভিয়া গোলকিপার, রেফারি প্রথমে সে জন্য মাদ্রিদের পক্ষে পেনাল্টি দিয়েছিলেন। পেনাল্টির ক্ষেত্রে ভিএআর তো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেই। করেছেও।

জিদানের সঙ্গে ক্রুসও গিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন।

কিন্তু ভিএআরে যাওয়ার পর গল্পে ১৮০ ডিগ্রি বদল! টিভি পর্দায় দেখার পর রেফারি দিলেন পুরো উল্টো সিদ্ধান্ত—সেভিয়ার পক্ষে পেনাল্টি! কেন? সেভিয়ার যে কর্নার থেকে পাল্টা–আক্রমণে উঠে মাদ্রিদ পেনাল্টি পেয়েছিল, সেটির শুরুতে নিজেদের বক্সে কর্নার ঠেকাতে গিয়ে বল লেগেছিল মাদ্রিদ ডিফেন্ডার মিলিতাওয়ের হাতে। সে সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই।

মাদ্রিদ কোচ জিনেদিন জিদান স্বাভাবিকভাবেই খ্যাপা। ম্যাচের পর এমন কিছু করলেন, যা জিদান সাধারণত করেন না। ম্যাচ শেষে গেলেন রেফারি মার্তিনেজ মুনুয়েরার কাছে সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা চাইতে। চাওয়ারই কথা, যেখানে পেনাল্টি পেলে মাদ্রিদ এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেত, সেখানে উল্টো সেভিয়া পেনাল্টিতে গোল করে এগিয়ে গেল! রেফারির সিদ্ধান্তের প্রতিবাদও করেছেন জিদান।

রেফারি যদিও জিদানকে জানিয়েছেন, বল যখন মিলিতাওয়ের হাতে লাগে, তখন মিলিতাওয়ের হাতটা তাঁর কাঁধের ওপরে ছিল, সে ক্ষেত্রে সেভিয়ার পেনাল্টি প্রাপ্য। জিদান যদিও তা মানতে পারেননি। জিদান ও রেফারির কথাবার্তার এই ভিডিও প্রকাশ করে স্প্যানিশ সম্প্রচারক প্রতিষ্ঠান মুভিস্টার। এ দেখেই পিকের খোঁচা।

বার্সেলোনাভিত্তিক স্প্যানিশ দৈনিক স্পোর্ত জানাচ্ছে, মাদ্রিদ-সেভিয়া ম্যাচের পর পিকে শ্লেষাত্মক সুরে লিখেছেন, ‘কথা বলতে থাকা দুজন একে অন্যকে খুব ভালো বুঝতে পারছেন।’

সেভিয়ার হয়ে পেনাল্টি থেকে গোল করেন রাকিতিচ।

স্প্যানিশ লিগে রেফারিরা রিয়াল মাদ্রিদকে সুবিধা বেশি দেয়—এমন কথা পিকে এর আগে সরাসরি কিংবা আকারে-ইঙ্গিতে কতবার যে বলেছেন, তার হিসাব নেই। করোনার বিরতি কাটিয়ে গত মৌসুমে খেলা শুরু হওয়ার পর মাদ্রিদ দারুণ খেলে লিগ জিতে নেয়, সে পথে কয়েকটি ম্যাচে ভিএআরের কিছু সিদ্ধান্ত মাদ্রিদের পক্ষে যাওয়ায় বিতর্ক উঠেছিল। তা নিয়ে পিকে কখনো খোঁচা মারতে ছাড়েননি। এই মৌসুমে বার্সেলোনা-রিয়াল মাদ্রিদের প্রথম এল ক্লাসিকোতে জয়ের পথে রিয়াল মাদ্রিদ রেফারির হাস্যকর সিদ্ধান্তে পেনাল্টি পায়, সেটি নিয়েও খোঁচা মেরেছিলেন পিকে।

কিন্তু সেসব সিদ্ধান্ত না হয় মাদ্রিদের পক্ষে গিয়েছিল, এবার তো মাদ্রিদেরই কপাল পুড়েছে! কিন্তু এবারও ছাড় দিচ্ছেন না পিকে। ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে ব্যাপারটাকে আরেকবার ভিএআর কীভাবে মাদ্রিদকে সুবিধা করে দেয় কিংবা আগে দিত, সেদিকে নিয়ে গেলেন।

গত মাসে লিগের দ্বিতীয় এল ক্লাসিকোতে ম্যাচের শেষে রেফারি গিল মানসানোর সঙ্গে এভাবে কথা বলতে গিয়েছিলেন পিকে নিজেই। সেদিন বার্সা ডিফেন্ডার অভিযোগ করেছিলেন, ম্যাচে অনেকবার বাধা-বিপত্তির কারণে রেফারি বেশ কয়েকবার খেলা থামালেও ৯০ মিনিটের পর যোগ করা সময় কেন আরও বেশি দেননি তা নিয়ে। সেদিন ম্যাচের শেষ দিকে রেফারির ইয়ারফোন নিয়ে কারিগরি ঝামেলায় ম্যাচ অনেকক্ষণ বন্ধ ছিল, কিন্তু সে জন্য যোগ করা সময় না বাড়ানোয় বেশ ক্ষোভ ছিল বার্সেলোনার।