>গতবারের চ্যাম্পিয়ন, এবার প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায়। জার্মানির ভাগ্য বিপর্যয়কে ভাষায় বর্ণনা করাই কঠিন হয়ে পড়েছে
১৪ জুন থেকে ২৭ জুন। মাত্র দুই সপ্তাহ। এই সময়েই কেমন ওলটপালট হয়ে গেল জার্মানির বিশ্বকাপ–স্বপ্ন। রাশিয়ায় যে দলটা এসেছিল ১৯৬২ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের পর দ্বিতীয় আর সব মিলিয়ে (অন্য দলটি ইতালি) তৃতীয় দল হিসেবে টানা দুই বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন নিয়ে, সেই জার্মানিই গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ! সেটিও দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে হেরে!
এমন সন্ধ্যার বর্ণনায় কী বিশেষণই ব্যবহার করা যায়? জার্মান ডিফেন্ডার ম্যাটস হামেলস যা বলছেন, সেটিও যেন যথেষ্ট মনে হচ্ছে না। হারের পর হামেলসের প্রথম প্রতিক্রিয়া, ‘পরিস্থিতিটাকে ভাষায় বর্ণনা করা কঠিন।’ সামি খেদিরা অবশ্য সবার জানা কথাটাই বললেন। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের মর্যাদা রাখতে পারেনি জার্মানি! আর ভূমিকম্পসম বিদায়ের প্রথম ‘আফটার শক’ও হয়তো চলে আসছে। কোচ জোয়াকিম লো আর দায়িত্বে থাকবেন কি না, তা নিয়ে এরই মধ্যে ভাবা শুরু হয়েছে।
কদিন আগেই চুক্তিটা ২০২২ পর্যন্ত নবায়ন করেছেন লো। কিন্তু কাল ম্যাচের পর লোর কণ্ঠে অনিশ্চয়তা, ‘এ মুহূর্তে তা বলা কঠিন। সিদ্ধান্তটা নিতে কয়েক ঘণ্টা লাগবে।’ হয়তো চলে যাওয়ার কথা ভাবছেন। ১৯৩৮-এর পর কোনো বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডে বিদায়ের ধাক্কা সামলাতেই কষ্ট হচ্ছে লোর, ‘আমরা প্রথম রাউন্ডই পার হতে না পারায় ধাক্কাই খেয়েছি। আমার সত্যিই মনে হয়েছিল, এই দলটা সামনে এগিয়ে যেতে চায়। এভাবে বাদ পড়ায় আমি অনেক বেশি হতাশ। তবে শান্ত হয়েই এ (কোচের পদে থাকা না–থাকা) নিয়ে ভাবব।’
জার্মান টিভি জেডডিএফে খেদিরা বলেছেন, ‘দলের জন্য, আমার জন্য এটা অনেক কঠিন একটা মুহূর্ত। টুর্নামেন্টের আগে আমরা বলেছিলাম, চ্যাম্পিয়নদেরই পথ দেখাতে হয়। সেটা করাটা সহজ নয়, আমরা তা করতে পারিনি।’ আর হামেলসের কথা শুনে বোঝাই যাচ্ছে, এই সন্ধ্যাটা সারা জীবন তাঁকে তাড়িয়ে বেড়াবে। ‘আমাদের জন্য, সব জার্মান ফুটবল–সমর্থকের জন্যও সত্যিই খুব খুব তেতো একটা সন্ধ্যা গেছে। পরিস্থিতিটাকে ভাষায় বর্ণনা করা কঠিন।’
আগের ম্যাচের দুর্দমনীয় জার্মানিকে কাল চেনাই যায়নি। তারপরও গোলের সুযোগ যে আসেনি, তা নয়। সেরা সুযোগটি পেয়েছিলেন হামেলসই। কিন্তু ৮৬ মিনিটে গোলপোস্টের একেবারে কাছ থেকে হেড করেছেন বাইরে। নিজেকেও তাই দুষছেন হামেলস, ‘অনেক সুযোগ পেলেও বলটাকে আমরা জালে পাঠাতে পারিনি। এর মধ্যে ৮৬ মিনিটে আমি যে সুযোগটা পেয়েছিলাম সেটিও আছে, এমন সুযোগে আমার গোল করা উচিত ছিল। আমরা শেষ পর্যন্ত বিশ্বাস ধরে রেখেছিলাম, শট নেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু বল জালে পাঠাতে পারিনি।’ সুযোগ নষ্ট করেছেন মারিও গোমেজ, হয়তো তার চেয়েও সহজ সুযোগটি গোরেৎস্কা।
শুধু হেরেছে বলেই নয়, জার্মানি যেভাবে খেলেছে, সেটি কোনোভাবেই ‘জার্মানি’ নামটার সঙ্গে মেলানো যায় না। হয়তো গ্যারি লিনেকারের টুইটটাই ঠিক। জার্মানিকে নিয়ে তাঁর ‘৯০ মিনিট ধরে ২২ জন দৌড়ায়, আর শেষে জেতে জার্মানি’ উক্তিটা তো বিখ্যাত হয়ে আছে। কিন্তু কাল বাঁচা-মরার ম্যাচে, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো আপাত–সহজ প্রতিপক্ষের সঙ্গেও জার্মানির হতাশাজনক পারফরম্যান্স দেখে লিনেকার তাঁর আগের উক্তিতে একটু বদল এনে লিখেছেন, ‘ফুটবল সহজ একটা খেলা। ২২ জন একটা বলের পেছনে ৯০ মিনিট ধরে দৌড়ায় এবং শেষ পর্যন্ত জার্মানি এখন আর সব সময় জেতে না। (উক্তিটির) আগের সংস্করণটা ইতিহাসের অংশ হয়ে গেছে।’
মেক্সিকোর বিপক্ষে হার দিয়ে শুরু, সুইডেনের বিপক্ষে শেষ মুহূর্তের জয়, আর কাল দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে এমন হার! বাছাইপর্বে ১০ ম্যাচের সব কটিই জিতে রাশিয়ার টিকিট নিশ্চিত করা জার্মানি বিশ্বকাপের আগে প্রীতি ম্যাচগুলোতেও ছিল ছন্দহীন। এমনই অবস্থা, জার্মানি সর্বশেষ কবে ভালো খেলেছে, সেটি খুঁজতে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে যেতে হচ্ছে হামেলসকে, ‘মেক্সিকো ম্যাচটার পরই আমরা নিজেদের এই অবস্থায় এনে ফেলেছি। আমরা ভালো খেলেছি, এমন সর্বশেষ ম্যাচটা ছিল ২০১৭-এর শরতে।’
আর খেদিরা যা বলছেন, সেটি বেদনাই জাগাতে পারে জার্মান–সমর্থকদের মনে, ‘গত ১০ বছর কী অসাধারণই না কেটেছে আমাদের!’ তাহলে কি স্বর্ণালি অতীতের স্মৃতিচারণা করার সময় চলে এল জার্মানদের!