ব্রাজিলের করোনার মধ্যে কোপা আয়োজন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কাসেমিরো।
ব্রাজিলের করোনার মধ্যে কোপা আয়োজন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কাসেমিরো।

ব্রাজিলের ম্যাচের পর মুখ খুললেন কাসেমিরো

বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচ চলছে, কিন্তু ব্রাজিলের নজর যেন সেখানে নেই! করোনার এই সময় ব্রাজিলে কেন কোপা আমেরিকার আয়োজন হবে, সে নিয়েই চলছে বিতর্ক। যে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ভয়াবহ পর্যায়ে, সেখানে কোপার আয়োজন দেখতে চাইছেন না খোদ ব্রাজিলের অনেক ফুটবলারই। এ নিয়ে বিতর্কের মধ্যে আজ মুখ খুলেছেন ব্রাজিলের মিডফিল্ডার কাসেমিরো।

বিতর্কের মধ্যে কাজের কাজটা ঠিকই করে যাচ্ছে ব্রাজিল। ইকুয়েডরের বিপক্ষে আজ রিওর মারাকানায় ২-০ গোলে জিতেছে ব্রাজিল। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে শতভাগ জয়ের ধারা টেনে নিয়ে এসেছে পঞ্চম ম্যাচেও। আগামী বুধবার ব্রাজিল খেলবে প্যারাগুয়ের বিপক্ষে। এর মধ্যেই আজ ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেছেন কাসেমিরো। ইকুয়েডরের বিপক্ষে ব্রাজিলের অধিনায়ক ছিলেন তিনি। ম্যাচের পর ব্রাজিলে কোপা আমেরিকা আয়োজনের বিরুদ্ধে তাঁদের অবস্থান পরিষ্কার করে বললেন, শুধু তিনিই নন, পুরো দলই চায় ব্রাজিলে এ অবস্থায় কোপা আমেরিকা না হোক। কোচ তিতেও তাঁদের পক্ষে বলে জানিয়েছেন কাসেমিরো।

১৩ জুন কোপা আমেরিকা শুরু হওয়ার কথা। টুর্নামেন্টটা হওয়ার কথা ছিল গত বছর। যৌথভাবে আয়োজনের কথা ছিল কলম্বিয়া ও আর্জেন্টিনার। কিন্তু করোনার কারণে এক বছর পিছিয়ে যায় টুর্নামেন্ট। এ বছর ১৩ জুন আর্জেন্টিনা-কলম্বিয়াতেই টুর্নামেন্ট হবে ধরে এত দিন প্রস্তুতি চলছিল। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহে ভোজবাজির মতো পাল্টে গেল দৃশ্যপট।

কলম্বিয়ায় সরকারবিরোধী সহিংস আন্দোলন চলছে, সে কারণে গত মাসে কলম্বিয়াকে টুর্নামেন্টের আয়োজকের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা কনমেবল। এরপর পুরো টুর্নামেন্টই আর্জেন্টিনায় নিয়ে যাওয়ার ভাবনা চলছিল। বিকল্প হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে টুর্নামেন্টটা আয়োজনের সম্ভাবনার কথাও শোনা গিয়েছিল। কিন্তু আর্জেন্টিনায় করোনা পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় সেখান থেকে টুর্নামেন্ট সরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয় কনমেবল। এরপর হঠাৎ করেই ব্রাজিলে নিয়ে যাওয়া হয় টুর্নামেন্ট। ব্রাজিলের চার অঞ্চল রিও ডি জেনিরো, ব্রাসিলিয়া, কুইয়াবা ও গোইয়ানিয়াতে টুর্নামেন্টের ম্যাচগুলো হওয়ার কথা।

ব্রাজিলের করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ।

কিন্তু এ সিদ্ধান্তের পর থেকেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। যে কারণে আর্জেন্টিনা ও কলম্বিয়া থেকে টুর্নামেন্ট সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে, ব্রাজিলে তার দুটিই আছে। একে তো দেশটিতে করোনা সংক্রমণ ভয়াবহ, এ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ মারা গেছেন সেখানে। করোনায় আক্রান্তের সংখ্যাও বেড়েই চলেছে। শুধু জুন মাসের প্রথম চার দিনেই তিন লাখের মতো মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। এই চার দিনে মারা গেছেন প্রায় সাড়ে সাত হাজার মানুষ। সে দেশের সরকারের করোনা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা ও এর মধ্যে কোপা আমেরিকা আয়োজনের কারণে সরকারবিরোধী বিক্ষোভও চলছে!

বিক্ষোভ না করলেও কোপা আয়োজনের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন ব্রাজিলের ফুটবলাররাও। ইকুয়েডরের বিপক্ষের আজকের ম্যাচের আগে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে ব্রাজিল কোচ তিতেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, তাঁর খেলোয়াড়দের অনেকেই ব্রাজিলে কোপা আমেরিকা আয়োজনের বিপক্ষে। এর মধ্যে স্প্যানিশ দৈনিক এএসের স্প্যানিশ সংস্করণে ছাপা প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এ নিয়ে ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশনের (সিবিএফ) প্রধান রোজেরিও কাবোকলোর কাছে নিজেদের ক্ষোভ জানিয়ে দিয়েছেন খেলোয়াড়েরা। আলিসন-কাসেমিরোদের মনে হচ্ছে, তাঁদের সঙ্গে রীতিমতো প্রতারণা হচ্ছে।

করোনার এই সময় ব্রাজিলে কোপা আয়োজনকে ‘প্রতারণা’ মনে করছেন কাসেমিরোরা।

রাজনৈতিক ব্যাপারও জড়িয়ে যাচ্ছে এখানে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারো শুরু থেকেই করোনা নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে উদাসীন। ব্রাজিলে করোনা পরিস্থিতি এত ভয়াবহ হওয়ার পেছনে তাঁর উদাসীনতার দায় সবচেয়ে বেশি দেখেন বিশ্লেষকেরা। এর মধ্যে সে দেশে কোপা আমেরিকা আয়োজন করে একটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণ করতে চান কাবোকলো, এমনটাই মনে করছেন অনেকে। সে কারণে খেলোয়াড়দের বেশ কজনের সঙ্গে তাঁর বাধছে। এমনকি পরশু ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে ব্রাজিল কোচ তিতেকে গেলেও অধিনায়ক কাসেমিরোকে যে যাননি, এর পেছনেও কাবোকলোর হাত আছে বলে ধারণা এএসের। পত্রিকাটি লিখেছে, কাসেমিরো কি–না–কি বলে ফেলেন, সেটি মাথায় রেখে কাবোকলোই কাসেমিরোকে সংবাদ সম্মেলনে যেতে দেননি।

পরশুই জানা গিয়েছিল, আজকের ম্যাচের পর কাসেমিরো সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের অবস্থান জানাবেন। সেটিই করলেন আজকের ম্যাচে ব্রাজিলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করা রিয়াল মাদ্রিদ মিডফিল্ডার। ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে বললেন, ‘ব্রাজিলে কোপা আমেরিকার আয়োজন নিয়ে আমাদের অবস্থান কী, সেটা সবাই জানে। এর চেয়ে পরিষ্কারভাবে বলা তো সম্ভব ছিল না।’ ব্রাজিলের পরের ম্যাচ শেষে আরও কথা বলবেন জানিয়ে কাসেমিরোর কথা, ‘প্যারাগুয়ের বিপক্ষে ম্যাচের পর আমরা নিজেদের মতামত আরও নির্দিষ্ট করে জানাতে চাই। এটা শুধু আমার কিংবা ইউরোপে খেলা ব্রাজিলিয়ান খেলোয়াড়দের কথা নয়। এটা আমাদের সবার কথা, তিতেসহ। আমরা সবাই এখানে একসঙ্গে।’