চোখে লেগে থাকার মতো এক গোল করেছেন ইব্রাহিম (ডানে)
চোখে লেগে থাকার মতো এক গোল করেছেন ইব্রাহিম (ডানে)

ব্রাজিলিয়ান রবসনের সমানে সমান বাংলাদেশি ইব্রাহিমের গোল

গোল, পাল্টা গোলে সমতা আবার গোল করে এগিয়ে যাওয়া। বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় দারুণ উপভোগ একটি ম্যাচই আজ উপহার দিল বসুন্ধরা কিংস ও রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটি। প্রথমে পিছিয়ে পড়েও শেষ পর্যন্ত ৩–২ গোলে জিতেছে বসুন্ধরা।

আগের ম্যাচে বাংলাদেশ পুলিশ ফুটবল ক্লাবকে ৩–০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে ঘরের মাঠে অভিষেক রাঙিয়েছিল প্রিমিয়ার লিগের বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। তবে আজ ঘরের মাঠে বসুন্ধরার বড় পরীক্ষা নিয়েছে পুরান ঢাকার দল। রহমতগঞ্জের হয়ে জোড়া গোল করেছেন সানডে সিজোবা। বসুন্ধরার হয়ে একটি করে গোল রবসন দা সিলভা, মোহাম্মদ ইব্রাহিম ও ইয়াছিন আরাফাতের।

এর মধ্যে মোহাম্মদ ইব্রাহিমের গোলটি তো চোখে লেগে থাকার মতো! বাংলাদেশের কোনো খেলোয়াড় দৌড়াতে থাকা অবস্থায়ই লাফিয়ে বল নিয়ন্ত্রণ করছেন, এরপর গোলকিপারের মাথার ওপর দিয়ে আলতো করে উঠিয়ে (চিপ) গোল করছেন...এমন দৃশ্য তো নিয়মিত দেখা যায় না!  

রবসনের পায়ে ব্রাজিলিয়ান ঝলক আজও মুগ্ধ করেছে

বসুন্ধরা দলটা এখন ভাঙা হাটের মতো। চোট এমনভাবে হানা দিয়েছে যে চারজন বিদেশির মধ্যে কেবল খেলতে পারছেন ব্রাজিলের রবসন দা সিলভা। নিজে গোল করো, সতীর্থদের দিয়ে করাও—সব দায়িত্বই যেন তাঁর কাঁধে। সব দায়িত্বই অবশ্য দারুণভাবেই পালন করছেন রবসন।

আজও তাঁর ব্রাজিলিয়ান ঝলকের কারণেই ৩ পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারল বসুন্ধরা। নিজে গোল করলেন একটি আর দুটি গোলে রাখলেন অবদান। তবে দিন শেষে চোখে লেগে থাকার মূহূর্তের খোঁজে ব্রাজিলিয়ানকে ছাপিয়েও বারবার চোখ ফেরে বাংলাদেশি ইব্রাহিমের ঝলকে।

কিছুটা ভঙ্গুর বসুন্ধরাকে পেয়ে আজ চমকেই দিয়েছিল রহমতগঞ্জ। ২৮ মিনিটে সানডে সিজোবার গোলে এগিয়ে যায় তারা। অধিনায়ক মাহমুদুল হাসানের কর্নার থেকে বক্সের মধ্যে লাফিয়ে উঠে হেডে গোলটি করেন সানডে (১–০)। এই গোলে দায় এড়াতে পারেন না বসুন্ধরার লেফটব্যাক রিমন হোসেন।

তবে সমতায় ফিরতে বসুন্ধরার লেগেছে মাত্র ৪ মিনিট। ব্রাজিলিয়ান ‘ট্রেডমার্ক’ গোল উপহার দিয়েই দলকে সমতায় ফেরান অধিনায়ক রবসন। কিংস অধিনায়ক যা করলেন, তা কেবল বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলে তাঁর পক্ষেই সম্ভব।

শেষ পর্যন্ত ইয়াসিনের (২ নম্বর জার্সি) গোলে জিতেছে বসুন্ধরা

মাসুক মিয়ার সঙ্গে বল দেওয়া-নেওয়া করে বাঁ প্রান্ত দিয়ে বক্সের মধ্যে ঢোকেন, গোলকিপার এগিয়ে এলে তাঁর মাথার ওপর দিয়ে আলতো চিপে বল জড়িয়ে দেন জালে। গোল উদ্‌যাপনে স্যালুট ঠুকলেন রবসন। এই গোলের আগ মুহূর্তেই দুবার গোললাইন থেকে বল বিপদমুক্ত করেছেন রহমতগঞ্জের খেলোয়াড়েরা।

সমতায় ফিরে এবার বসুন্ধরার এগিয়ে যাওয়ার পালা। ৪৪ মিনিটে সেটি হলো উইঙ্গার মোহাম্মদ ইব্রাহিমের দর্শনীয় গোলে। ইব্রাহিম মাঝমাঠ থেকে বক্সের উদ্দেশে দৌড়াতে শুরু করলে মাঝমাঠ থেকেই ভাসানো থ্রু-তে বল পাঠান রবসন। রহমতগঞ্জের ডিফেন্ডারকে ঠেকিয়ে বল দখলে নিতে লাফিয়ে ওঠেন ইব্রাহিম, লাফিয়ে ওঠা অবস্থাতেই পায়ের আলতো পরশে বলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন।

চোখে লেগে থাকার মতো ব্যাপার হলো, বল নিয়ন্ত্রণে নিতে নিতেই লাফিয়ে ওঠা ইব্রাহিম পেরিয়ে যান রহমতগঞ্জ ডিফেন্ডারকেও! এরপর এগিয়ে আসা গোলকিপারের মাথার ওপর দিয়ে চোখধাঁধানো চিপ! পুরো প্রক্রিয়াটা যেকোনো ফুটবলারের জন্যই কঠিন, বাংলাদেশের ফুটবলারদের কাছে তো এমন কিছু অবিশ্বাস্যই!

রহমতগঞ্জের দুই গোল করা সানডে গোল উদ্‌যাপনে বনে গেলেন চিত্রগ্রাহক

কিন্তু ইব্রাহিমের গোলে এগিয়ে যাওয়া বসুন্ধরাও বেশিক্ষণ স্বস্তিতে থাকতে পারল না। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে পেনাল্টি থেকে গোল করে সমতায় ফেরে রহমতগঞ্জ। পুরান ঢাকার দলটির ফিলিপ আজাহকে বসুন্ধরার সেন্টারব্যাক তারিক কাজী ফাউল করলে পেনাল্টির নির্দেশ দেন রেফারি। স্পট কিক থেকে বল জালে জড়ান সানডে, ২–২।

দ্বিতীয়ার্ধে লেফটব্যাক রিমনকে তুলে বদলি হিসেবে নামানো হয় ইয়াছিন আরাফাতকে। প্রথাগত ডিফেন্ডার হলেও গোল করতে জুড়ি নেই তরুণ এই ফুলব্যাকের। ৭৫ মিনিটে গোল করে দলকে উদ্ধার করলেন ইয়াছিন। রবসনের কর্নার থেকে হেডে করেছেন গোলটি, ২–৩। গোল উদ্‌যাপনে কিছুটা বুনো ভাব এনে ইয়াছিন বুঝিয়ে দিলেন, সাইড বেঞ্চ গরম করার খেলোয়াড় তিনি নন!

এই জয়ে ৫ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে বসুন্ধরা। ১ পয়েন্ট নিয়ে এগারোতম স্থানে রহমতগঞ্জ।