কে জিতবেন ব্যালন ডি’অর?
কে জিতবেন ব্যালন ডি’অর?

চ্যাম্পিয়নস লিগ

ব্যালন ডি’অর বিজয়ী ঠিক করে দেবে এই ফাইনাল

স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের কাছে এটা ‘বিশ্বকাপের চেয়েও বড়’ টুর্নামেন্ট। জোসে মরিনিওর কাছে বিশ্বকাপের চেয়েও আনন্দময়। রোনালদো নাজারিও-জিয়ানলুইজি বুফন-জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচের কাছে আবার এ এক চির আক্ষেপের নাম। পেপ গার্দিওলা অবশ্য এখন বলেন, এর চেয়ে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ জেতা কঠিন। জিনেদিন জিদান মাঠে থাকতেও জিতেছেন, ডাগআউটে দাঁড়িয়ে জিতেছেন আরও বেশি। আনন্দ-বেদনা-টক-মিষ্টি এই টুর্নামেন্টের নাম—চ্যাম্পিয়নস লিগ।আগামীকাল প্যারিসে সেই চ্যাম্পিয়নস লিগের এবারের ফাইনালে মুখোমুখি রিয়াল মাদ্রিদ ও লিভারপুল। ভালোবাসার শহর কাকে বরমাল্য দেয়, সেটা জানতে এখন সবার অধীর অপেক্ষা। এই ফাইনাল উপলক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগ নিয়ে প্রথম আলোতে প্রতিদিন থাকছে বিশেষ আয়োজন। আজ পড়ুন চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে ব্যক্তিগত অন্যরকম এক লড়াই নিয়ে—

রবার্ট লেভানডফস্কি কি আর শুধু শুধু বার্সেলোনায় যেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন? স্বপ্নের মতো তিনটি মৌসুম কাটিয়েছেন, তিন বছরে ১৬৭ গোল করেছেন ক্লাব ও জাতীয় দলের হয়ে। এ সময়ে গোল করায় বা শিরোপা জেতায় তাঁর ধারেকাছে নেই কেউ। তবু ব্যালন ডি’অর জেতা হয়নি তাঁর। বায়ার্ন মিউনিখ ছেড়ে তাঁর বার্সেলোনা যেতে চাওয়ার অন্যতম বড় কারণ তো ব্যালন ডি’অর পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ানো।

সাদিও মানে

এবার অন্য মৌসুমের চেয়ে অনেক এগিয়ে আনা হচ্ছে ব্যালন ডি’অর পুরস্কারের তারিখ। তবু সেটা অক্টোবরের গল্প। কিন্তু আগামীকাল চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালই হয়তো ঠিক করে দেবে, এ মৌসুমে ফ্রান্স ফুটবলের দেওয়া এই মহা আরাধ্য পুরস্কারটি কার ঘরে যাচ্ছে।

আগামীকাল ফ্রান্সের স্তাদে দে ফ্রান্সে মুখোমুখি হবে রিয়াল মাদ্রিদ ও লিভারপুল। দল হিসেবে সবার লক্ষ্যটা তো জানাই, চ্যাম্পিয়নস লিগ ট্রফি। ব্যক্তিগত একটি অর্জন নিয়ে মাঠে নামছেন তিনজন—সাদিও মানে, মোহাম্মদ সালাহ ও করিম বেনজেমা। কাল ফাইনালে আলোটা সবচেয়ে বেশি যিনি কাড়বেন, তাঁরই সম্ভাবনা বেড়ে যাবে ব্যালন ডি’অর জেতার।

প্রথমেই সাদিও মানের প্রসঙ্গ টানা যাক। এ মৌসুমে বাকি তিনজনই যে প্রচুর গোল করেছেন, সেটা সবাই জানেন। তিনজন নিজ নিজ লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার জিতেছেন আর যেহেতু ফুটবলে ব্যক্তিগত পুরস্কারে গোলই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে, তাতে মানে একটু পিছিয়েই থাকবেন। বিশেষ করে মৌসুমের প্রথমার্ধে তাঁর যে পারফরম্যান্স ছিল, তাতে এই আলোচনায় তাঁর থাকারই কথা ছিল না। কিন্তু জানুয়ারির পরই দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন এই ফরোয়ার্ডের। সেনেগালের হয়ে কাপ অব নেশনস জিতেছেন, দেশকে নিয়ে গেছেন বিশ্বকাপে। লিভারপুলের জার্সিতেও করেছেন গুরুত্বপূর্ণ সব গোল।

সালাহ

মৌসুমে ৫০ ম্যাচে ২৩ গোল করেছেন মানে, সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন ৫ গোল। ক্লাব ও জাতীয় দলের হয়ে জিতেছেন তিন শিরোপা। ফাইনালে লিভারপুল জিতলে আর তিনি দুর্দান্ত কিছু করতে পারলেই তো মানের পক্ষে প্রচারণায় বেগ পাবেন ভক্তরা।

মৌসুমের শেষ দিকটা খুব একটা ভালো কাটেনি সালাহর। লিভারপুলের জার্সিতে প্রথমার্ধে অবিশ্বাস্য খেলেছেন। কিন্তু জানুয়ারির পর যেখানে মানের উত্থান হয়েছে, সেখানে ক্রমে হারিয়ে গেছেন সালাহ। তবু মৌসুমে গোল করা বা করানোয় সতীর্থের চেয়ে এগিয়ে আছেন সালাহ। ৫০ ম্যাচে ৩১ গোল। সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন আরও ১৬টি গোল। কিন্তু মানের পক্ষে কাজ করছে তাঁর জাতীয় দল। ওদিকে জাতীয় দল যে সালাহর সব হতাশার জায়গা। কাপ অব নেশনসে মানের সেনেগালের কাছে হেরে গেছে সালাহর মিসর।

এর চেয়েও বড় ধাক্কা খেয়েছেন বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে। ওই সেনেগালের কাছেই হেরে গেছে মিসর। ফলে কাতার বিশ্বকাপ আর খেলা হচ্ছে না সালাহর। এই ব্যর্থতা তাঁর ব্যালন ডি’অরের সম্ভাবনা কমিয়ে দিয়েছে। কিন্তু চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল বলে কথা। ফাইনালে দুর্দান্ত কিছু করতে পারলে আগের ব্যর্থতা ভুলতে কতক্ষণ! এবার এমনিতেই ব্যালন ডি’অরের ভোটের নিয়ম বদলানো হয়েছে। র‍্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ ১০০ দেশের সাংবাদিকেরাই শুধু ভোট দিতে পারবেন। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ ও চ্যাম্পিয়নস লিগের পারফরম্যান্সই হয়তো বেশি অগ্রাধিকার পাবে সে ক্ষেত্রে।

করিম বেনজেমা

এরপরই আছেন করিম বেনজেমা। এ মৌসুমে ৪৪ ম্যাচে ৪৫ গোল করেছেন, সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন ১৫টি গোল। রিয়াল যে চার ম্যাচ হাতে রেখেই লিগ নিশ্চিত করেছে, সেটা তো বেনজেমার কারণেই। চ্যাম্পিয়নস লিগেও পিএসজি, চেলসি ও ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে টানা তিন ম্যাচে দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তনের গল্পটা রিয়ালের লেখা হয়েছে একজন করিম বেনজেমা দলে ছিলেন বলেই। শীর্ষ পাঁচ লিগে মিনিটপ্রতি গোলে অবদানে বেনজেমাই আছেন শীর্ষে।

আর পরিসংখ্যান যা বলতে পারে না, সেটা তো আছেই। রিয়ালের প্রতিটি আক্রমণে বেনজেমার অবদান থাকে। নিখাদ স্ট্রাইকার হয়ে ডি-বক্সে বসে না থেকে মাঝমাঠেও খেলা গড়েন। এই মৌসুমে রিয়ালের হয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় কিংবদন্তি রাউল গঞ্জালেসকে টপকে গেছেন। এবার চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল জিততে পারলে আরেক ক্লাব কিংবদন্তি আলফ্রেডো ডি স্টেফানোর পাশে বসবেন।

লেভানডফস্কি

কাল রিয়াল জিতলেই, এবারের ব্যালন ডি’অর বিজয়ীর নাম নিয়ে কারও মনে কোনো সন্দেহ থাকবে না। এমনকি হারলেও বেনজেমার সুযোগ অনেক বেশি থাকবে। ২০২১ সালে ক্লাবের হয়ে লিগ বা চ্যাম্পিয়নস লিগ না জিতেও তো ব্যালন ডি’অর জিতেছিলেন মেসি। সেটা কোপা আমেরিকায় দলের সর্বেসর্বা হয়ে ট্রফি জেতার কারণে। সেখানে লা লিগা জেতানো ও প্রায় একাই চ্যাম্পিয়নস লিগে দলকে টানা বেনজেমার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়ার উপায় তো নেই।

ওহ্‌! কাল দর্শকের ভূমিকায় থাকা লেভানডফস্কিরও কিন্তু সুযোগ থাকছে। ২০২০ সালে করোনাভাইরাস ও ২০২১ সালে মেসির কাছে হেরে যাওয়া লেভানডফস্কি এই মৌসুমে ৪৬ ম্যাচে করেছেন ৫০ গোল। প্রতি ৮০ মিনিটে ১ গোল করেছেন। সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন আরও ৭ গোল। শুধু গোল দেখে ভোট দিতে কেউ বসলে লেভানডফস্কিকে বেছে নিতেই পারেন কোনো বিচারক।