উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে পিএসজির বিপক্ষে ২-২ গোলে ড্র করেছে রিয়াল মাদ্রিদ। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর ম্যাচটিতে রিয়ালের হয়ে জোড়া গোল করেছেন করিম বেনজেমা। পিএসজির হয়ে একটি করে গোল করেছেন এমবাপ্পে ও সারাবিয়া।
প্রথমার্ধের খেলা প্রায় শেষ হয়ে এসেছিল। রিয়াল মাদ্রিদের একক আধিপত্য বিস্তারের সময়টাতে তখনই ঘটল নাটকীয় ঘটনা। ইকার্দি বল নিয়ে রিয়ালের ডি বক্সে ঢুকে পড়েছেন। রিয়াল গোলরক্ষক কোর্তোয়া এগিয়ে এসে তাঁকে আটকানোর চেষ্টা করতে গিয়ে ফাউল করে বসলেন। রেফারি কোর্তোয়াকে লাল কার্ড দেখালেন ঠিকই কিন্তু পেনাল্টি দিলেন না! পিএসজি খেলোয়াড়দের দাবি ফাউল হলে তো পেনাল্টি-ই। টেলিভিশন রিপ্লেতে দেখা গেল কোর্তায়ার রিফ্লেকশনে ইকার্দির পায়ে তার পা লেগে গেছে। পিএসজি পেনাল্টি তো পেলই না উল্টো ইকার্দি বল নিয়ে প্রতিপক্ষের সীমানায় আসার আগে মার্সেলোকে ফাউল করেন গানা। ফ্রি কিক পেয়ে যায় রিয়াল; লাল কার্ডের সিদ্ধান্ত বাতিল, পেনাল্টির তো প্রশ্নই আসে না। নাটক আর কাকে বলে!
ম্যাচে এর চেয়ে বড় নাটকটি হলো খেলা শেষ হওয়ার মিনিট দশেক আগে। রিয়াল যখন তেড়েফুঁড়ে একের পর আক্রমণে পিএসজির রক্ষণ ছিন্নভিন্ন করে ২-০ গোলে এগিয়ে তখন। ৮১তম মিনিটে হড়বড় করে ফেলা কোর্তোয়াকে ফাঁকি দেন এমবাপ্পে এর মিনিট দু-এক পর দুর্দান্ত এক গোলে ফরাসি ক্লাবটিকে সমতায় ফেরান সারাবিয়া।
এই ম্যাচে দুজনের কথা না বললে নির্ঘাত অন্যায় হবে— দুই দলের দুই গোলরক্ষক; কোর্তোয়া ও নাভাস। দুর্দান্ত সব সেভ করেছেন তাঁরা দুজনই। এই দুই গোলরক্ষক না থাকলে দুই দলই আরও বার কয়েক হতাশায় পুড়তেন নিশ্চিত। এমন সব অবিশ্বাস্য সেভ করেছেন কোর্তোয়া-নাভাসরা সত্যি অসাধারণ। কতবার যে নিজেদের দলকে বাঁচিয়েছেন তারও ইয়ত্তা নেই।
ম্যাচের প্রথম ২০-২৫ মিনিট তো পিএসজি বলতে গেলে পাত্তাই পায়নি রিয়ালের কাছে। নেইমার আর কাভানিকে প্রথমার্ধে বেঞ্চেই রেখেছে পিএসজি। নেইমারকে ছাড়া পিএসজির আক্রমণে খুব বেশি ধার ছিল না। আক্রমণেও তারা যে বেশি উঠতে পেরেছে তাও কিন্তু না। উল্টো রিয়ালের একের পর এক আক্রমণ সামলাতেই পার করেছে প্রথমার্ধের পুরো সময়। প্রথম ২৫ মিনিটে রিয়াল গোলমুখে শট নিয়েছে ৮টি যার ২টি শটই লক্ষ্য ঠিক রেখেছে বেনজেমারা। আর ওই সময়ের মধ্যে পিএসজির গোলমুখে নেওয়া দুটি শটই ছিল বেপথু। রিয়াল মাদ্রিদের আজকের খেলা ছিল ছকে বাঁধা। যখন পাসিং খেলতে হবে তারা খেলেছে। যখন লম্বা পাসে ঝটিকা আক্রমণে উঠতে হবে তারা উঠেছে। যখন আচমকা শটে প্রতিপক্ষের গোলপোস্ট কাঁপিয়ে দিতে হবে তারা দিয়েছে।
ইসকো-বেনজেমা-হ্যাজার্ড-ক্রুস-ক্যাসেমিরো-রামোস-মার্সেলো সবাই-ই নিজের পুরোটা নিংড়ে দিয়েছে। প্রথমার্ধে নেইমারবিহীন পিএসজিকে বরং খানিকটা রংচটা দেখাচ্ছিল। এমবাপ্পে আর ডি মারিয়া মাঝেমধ্যে রিয়ালের ডি বক্সে রক্ষণচেরা পাস দেওয়া-নেওয়া করেছে। ভয় ধরানো শটে রিয়াল সমর্থকের বুকের ধুকপুকানিও তুলেছে বেশ কবার। কিন্তু ওই যে রিয়ালের গোলবারের নিচে আস্থার প্রতীক কোর্তোয়া ছিলেন দুর্দান্ত।
ম্যাচের ১৭ মিনিটেই জিদান শিষ্যদের হঠাৎ আক্রমণে তছনছ হয়ে যায় পিএসজির রক্ষণ। ভালভার্দে-কার্বাহাল ওয়ান টু ওয়ান পাসে ডান প্রান্ত দিয়ে বল নিয়ে অতিথিদের সীমানায় আক্রমণে ওঠে। হুট করেই ভালভার্দে বল বাড়ান ইসকোর দিকে। ইসোকোর বুলেটগতির শট পোস্টে লেগে ফিরে আসে। কিন্তু জায়গা মতো ছিলেন বেনজেমা। রিয়ালের এই ফরাসি তারকাই পিএসজির বুকে ছুরিটা চালিয়ে বসেন। এরপর খেলায় ফিরে বলের দখল নিয়ে খেলার চেষ্টা করে টুখেলের শিষ্যরা। কিন্তু কিছুতেই আর কিছু হয়নি।
দ্বিতীয়ার্ধে শুরুতেই নেইমারকে মাঠে নামান টুখেল। নেইমারের দু-একটি শট সম্ভাবনা তৈরি করলেও পরীক্ষায় ফেলতে পারেনি কোর্তোয়াকে। ৭৭ মিনিটে ভালভার্দেকে তুলে মাঝমাঠে মডরিচকে নামান জিদান। নেমেই ঝলক দেখান রিয়ালের এই ক্রোয়াট মিডফিল্ডার। মাঝমাঠ থেকে একাই বল টেনে আনেন। মডরিচের লম্বা করে বাড়ানো বল পান ইসকো। ইসকো বল বাড়িয়ে দেন মার্সেলোর দিকে। রিয়ালের ব্রাজিলিয়ান এই ডিফেন্ডারের হাওয়ায় ভাসানো শট মাথা ছুঁয়ে জালে জড়ান বেনজেমা।
স্বদেশিকে জবাব দিতে খুব বেশি সময় নেয়নি এমবাপ্পে আর সারাবিয়া। ৮১ মিনিটে এমবাপ্পে আর ৮৩ মিনিটে বদলি খেলোয়াড় সারাবিয়ার গোলে সমতা নিয়ে মাঠ ছাড়ে পিএসজি।