>ম্যাচের সব আলো ছিল রাশিয়া বিশ্বকাপ খেলা কোস্টারিকান স্ট্রাইকার ড্যানিয়েল কলিন্দ্রেসের। কিন্তু বসুন্ধরা কিংসকে জেতালেন বদলি স্ট্রাইকার তৌহিদুল আলম সবুজ।
বসুন্ধরা কিংস না জিতলে বুঝি ফুটবলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে অন্যায়-ই হতো! ফলটা হেরফের হলেই গ্যালারিতে ঢাক-ঢোল নিয়ে বসা দলটির সমর্থকেরা হয়তো নিজেদেরই প্রশ্ন করতেন, ম্যাচটা জিততে আর কী কী করতে হতো? শেষ পর্যন্ত বসুন্ধরা জিতেই এমন কিছু ভাবার অবকাশ দেয়নি সমর্থকদের।
কী অপূর্ব ফুটবলই না খেলেছে বসুন্ধরা! প্রতিপক্ষের অর্ধে পাসের মালা গেঁথেছে দলটি। গোলের সুযোগ তৈরি করেছে বেশ কয়েকবার। পোস্টে লেগে ফিরে এসেছে বল। নির্ধারিত সময় শেষে অতিরিক্ত সময়েও ছিল দাপট। শুধু গোলটাই হচ্ছিল না। কাজের কাজ গোলই যদি না করতে পারে, তাহলে আর দৃষ্টিনন্দন ফুটবল খেলে কি লাভ—উঠে গিয়েছিল এই প্রশ্নও। বদলি স্ট্রাইকার তৌহিদুল আলম সবুজের গোলে শেষ পর্যন্ত ঢাকা পড়েছে প্রশ্নটি। সবুজের গোলেই শেখ রাসেলকে ১-০ ব্যবধানে হারিয়ে ফেডারেশন কাপের ফাইনালে পৌঁছে গিয়েছে বসুন্ধরা।
ম্যাচের অন্তিম সময়ে গোল করে দলকে জেতালে আবেগ ধরে রাখা কঠিন। সবুজও পারেননি নিজেকে ধরে রাখতে। গোলের পর হলুদ কার্ড দেখার তোয়াক্কা না করেই খুলেছেন জার্সি। আনন্দে তাঁর কাঁধে উঠে বসেছেন রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলা কোস্টারিকান স্ট্রাইকার ড্যানিয়েল কলিন্দ্রেস, এই উৎসবে যোগ দিয়েছেন স্পেন অনূর্ধ্ব-১৭ দলে খেলা জর্জ গোতরও। ওই আলোর মিছিলে সবুজই তখন বড় তারকা। অবশ্য গোলটিতে অবদান আছে কলিন্দ্রেসেরও । দূর থেকে নেওয়া তাঁর শট সাইড পোস্টে লাগলে ফিরতি বলে টোকা দিয়ে জালে জড়িয়েছেন সবুজ।
বঙ্গবন্ধুতে আজ সন্ধ্যার এই ম্যাচে দুই দলের মধ্যে ‘কৌশলগত লড়াই’ হয়েছে বলাই যায়। শেখ রাসেলের ডাগ আউটে দেশের অন্যতম সেরা কোচ সাইফুল বারি টিটু আর বসুন্ধরার ডাগ আউটে স্প্যানিশ অস্কার ব্রুজোন। প্রথমজনের ডিফেন্ডিং ট্যাকটিকসের জুড়ি নেই বলেই আজকের আগ পর্যন্ত ‘ক্লিন শিট’ ধরে রেখেছে তাঁর দল। অন্যদিকে অস্কার আক্রমণের পূজারি বলেই দলের পাশে ১২ গোল। ম্যাচের সারাংশও তাই, বসুন্ধরার আক্রমণ বনাম রাসেলের রক্ষণ।
ইনজুরির কারণে বসুন্ধরায় নেই ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার মার্কোস ভিনিসিয়াস। জাতীয় দলের খেলা থাকায় নেই কিরগিজ মিডফিল্ডার বখতিয়ার দুশাকনভও। গুরুত্বপূর্ণ দুই খেলোয়াড়ের অনুপস্থিতিতে প্রথমবারের মতো ৩-১-৫-১ ফরমেশনে দল সাজিয়েছিলেন বসুন্ধরা কোচ ব্রুজোন। টিটুর পাল্টাটাও ছিল দারুণ। টুর্নামেন্টে প্রথমবারের মতো আজ দুই ‘ডাবল পিভোট’ হোল্ডিং মিডফিল্ডার রেখে একাদশ সাজালেন ৪-২-৩-১ ফরমেশনে। উদ্দেশ্য পরিষ্কার, বসুন্ধরার আক্রমণের সামনে মাঝের করিডরে পায়ের জঙ্গল বাড়ানো । আর কলিন্দ্রেসকে বাড়তি পাহারায় রাখতে পারা। টিটু তা পেরেছেনও। কিন্তু আজকের সন্ধ্যা ছিল মাসুক মিয়া জনি, মোহাম্মদ ইব্রাহিম, সুশান্ত ত্রিপুরা আর সবুজের।
সাত মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারত বসুন্ধরা। ডান প্রান্ত থেকে সুশান্তর ক্রস রাসেল ডিফেন্ডার বিশ্বনাথের ভুলের সুযোগে গোলরক্ষকে একা পেয়েছিলেন মাহবুবুর রহমান সুফিল। কিন্তু গোলমুখ থেকে নেওয়া তাঁর প্লেসিং ঠেকিয়ে দিয়েছেন আশরাফুল রানা। ফিরতি বলে মাসুক মিয়া জনির শট গোল লাইন থেকে স্লাইড করে ঠেকিয়েছেন নাইজেরিয়ান ডিফেন্ডার এলিসন উদোকা।
২৪ মিনিটেও শেখ রাসেলের ত্রাতা গোলরক্ষক আশরাফুল রানা। বাম প্রান্ত দিয়ে তেড়েফুঁড়ে রাসেলের বক্সে ঢুকে ইব্রাহিমের নেওয়া শট ‘ফিস্ট’ করেছেন রানা। দ্বিতীয়ার্ধে বসুন্ধরার জন্য সবচেয়ে দুর্ভাগ্য ক্রসবার। ৮৩ মিনিটে স্প্যানিশ ডিফেন্ডার জর্জ গোতরের নেওয়া বুলেট গতির শট ক্রসবারে লেগে ফিরেছে। গ্যালারি থেকে ভেসে এসেছে গোল না হওয়ার আক্ষেপ ‘উহহহ...!’
গ্যালারির এই আফসোসটা অতিরিক্ত সময়েও গড়িয়েছে। ম্যাচে উত্তেজনার পারদটা চড়েছে খেলোয়াড়দের শরীরেও। বেশ কয়েকবার ধাক্কাধাক্কি পর্যায়ে গিয়েছে রাস্তার এপার-ওপার পড়শি দুই ক্লাবের খেলোয়াড়দের লড়াই। শেষ পর্যন্ত সব উত্তেজনার মীমাংসা করেছেন সবুজ। বসুন্ধরার অধিনায়ক হলেও ইনজুরির কারণে একাদশে ছিলেন না এই স্ট্রাইকার। ৬১ মিনিটে ইমন বাবুর বদলি হিসেবে নেমে জয়সূচক গোল করেছেন। আগামী ২৩ নভেম্বর আবাহনী লিমিটেডের বিপক্ষে শিরোপার লড়াইয়ে নামবে বসুন্ধরা।
প্রথমবার দেশের শীর্ষে পর্যায়ের ফুটবলে নাম লিখিয়েই ফাইনালে পা রাখল বসুন্ধরা। শিরোপার লড়াইয়ের মঞ্চেও আবাহনীর সঙ্গে ধুন্ধুমার ফুটবল খেলবে দলটি—এ কথা আগাম বলাই যায়।