>রাশিয়া বিশ্বকাপ শেষ, বিশ্বকাপের সেরা একাদশও জানা হয়ে গেছে। এবারের বিশ্বকাপে আলো ছড়াতে পারতেন, কিন্তু দলে থেকেও মূল একাদশে তেমন সুযোগ পাননি এমন খেলোয়াড়দের নিয়ে একটা একাদশ দাঁড় করালে কেমন হয়!
ফরমেশন: ৪-৩-৩
গোলরক্ষক: এডারসন (ব্রাজিল)
সুযোগ না পাওয়াদের দলে গোলরক্ষক হিসেবে থাকবেন ব্রাজিলের এডারসন। ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে অসাধারণ একটি মৌসুম কাটানোর পুরষ্কার হিসেবে ব্রাজিলের বিশ্বকাপ দলে জায়গা পেয়েছিলেন। অনেকে তাঁকে ব্রাজিলের মূল একাদশেও দেখছিলেন। কিন্তু কোচ তিতে ভরসা রাখেন রোমার গোলরক্ষক আলিসনের ওপর। স্কোয়াডে থেকেও তাই বিশ্বকাপে মাঠে নামার ভাগ্য হয়নি এডারসনের।
রাইট ব্যাক: জিব্রিল সিদিবে (ফ্রান্স)
মোনাকোর ২৩ বছর বয়সী রাইট ব্যাক জিব্রিল সিদিবেকে ফ্রান্সের রক্ষণের অন্যতম ভরসা হিসেবে ভাবা হচ্ছিল। প্রথম একাদশে খেলাটাও তাই অনেকটাই নিশ্চিত ছিল তাঁর। ফ্রান্স কোচ দিদিয়ের দেশম সবাইকে অবাক করে দিয়ে সিদিবেকে বেঞ্চে বসিয়ে রাখলেন গোটা বিশ্বকাপেই। রাইট ব্যাক হিসেবে খেলালেন বেনজামিন পাভারকে। ২২ বছরের এই তরুণ এতটাই ভালো খেলেছেন যে সিদিবে আর জায়গাই পাননি মূল একাদশে। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে ডেনমার্কের বিপক্ষে যদিও খেলেছিলেন, তবে সে ম্যাচের ফল নিয়ে কোনো চিন্তাই ছিল না ফ্রান্সের।
সেন্টার ব্যাক: মারকুইনহোস (ব্রাজিল)
বিশ্বের সেরা সেন্টার ব্যাকদের তালিকা করলে মারকুইনহোসের নাম আসবেই। পিএসজির ২৫ বছর বয়সী ডিফেন্ডার সেটির প্রমাণও দিয়েছেন ইতিমধ্যেই। কিন্তু যে দলে থিয়াগো সিলভা ও মিরানদার মতো আরও দুজন বিশ্বসেরা সেন্টার ব্যাক থাকেন সে দলে প্রতিযোগিতাটাও খুব তীব্র। সেই প্রতিযোগিতাতে আসলে পিছিয়ে পড়েছেন মারকুইনহোস। দুর্দান্ত দল নিয়েও ব্রাজিল কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বাদ পড়ে যাওয়ায় বিশ্বকাপে আলো ছড়ানো হয়নি এই ডিফেন্ডারের।
সেন্টার ব্যাক: সিজার অ্যাজপিলিকুয়েটা (স্পেন)
ইংলিশ ক্লাব চেলসির হয়ে গত কয়েক মৌসুম ধরেই অসাধারণ পারফর্ম করেছেন অ্যাজপিলিকুয়েটা। সার্জিও রামোস ও জেরার্ড পিকের ৫ বছরের রক্ষণজুটির মধ্যে থেকে যে কোনো একজনকে ঠেলে স্পেনের একাদশে ঢুকে পড়ার সামর্থ্য আছে অ্যাজপিলিকুয়েটার। কিন্তু বিশ্বকাপের আগের দিন কোচ হুলেন লোপেতেগি বরখাস্ত হওয়ায় অন্তর্বর্তীকালীন কোচ ফার্নান্দো হিয়েরো ঝুঁকি নিতে চাননি। ভরসা রেখেছেন পিকে-রামোস জুটির ওপরই। যার কারণে বিশ্বকাপে খেলা হয়নি প্রিমিয়ার লিগের বর্ষসেরা দলে থাকা অ্যাজপিলিকুয়েটার।
লেফট ব্যাক: ফিলিপে লুইস (ব্রাজিল)
নিজের পজিশনে বিশ্বসেরাদের একজন ফিলিপে লুইস। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের রক্ষণের বড় ভরসাও তিনি। সেই লুইসই বিশ্বকাপে ব্রাজিলের প্রথম একাদশে সুযোগ পাননি। অবশ্য পাবেন-ই-বা কীভাবে? ব্রাজিলের হয়ে তাঁর জায়গায় খেলেন মার্সেলো। রিয়াল মাদ্রিদ বসিয়ে লুইসকে খেলানোর সাহস করেননি ব্রাজিল কোচ তিতে। যদিও সার্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে মাত্র ১২ মিনিটেই চোটে পড়ে মার্সেলো মাঠ ছেড়েছিলেন। তাঁর জায়গায় লুইস কিন্তু দুর্দান্ত খেলেছিলেন দুটি ম্যাচে। ব্রাজিলের জার্সিতে যতক্ষণ মাঠে ছিলেন, জাত চিনিয়েছেন।
সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার: সাউল নিগুয়েজ (স্পেন)
কথায় আছে, স্পেনে মিডফিল্ডার আর টমেটোর কখনো অভাব হয় না। একঝাঁক অসাধারণ মিডফিল্ডাদের একজন ছিলেন ২৩ বছর বয়সী সাউল নিগুয়েজও। সার্জিও বুসকেটস, থিয়াগো, কোকে, ইনিয়েস্তা, ইসকো নিয়ে গড়া স্পেনের মাঝমাঠে প্রথম একাদশে জায়গা হয়নি সাউলের। রাশিয়ার কাছে টাইব্রেকারে হেরে শেষ ষোলো থেকেই স্পেন বিদায় নেওয়ায় বিশ্বকাপে নিজেকে চেনানোর সুযোগই পাননি অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের সেরা তারকাদের একজন এই সাউল।
সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার: জিওভানি লো সেলসো (আর্জেন্টিনা)
রাশিয়া বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার ব্যর্থতার বড় কারণ তাঁদের মাঝমাঠের দুর্বলতা। এই দুর্বলতা ঢাকতে পারতেন যিনি সেই লো সেলসোকে যে এক মিনিটের জন্যও মাঠে নামাননি বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার কোচ হোর্হে সাম্পাওলি। কেন নামাননি সেটি সাম্পাওলিই ভালো বলতে পারবেন। তবে পিএসজির হয়ে খেলা ২১ বছর বয়সী লো সেলসোকে নিয়ে বড় স্বপ্নই দেখেছিল আর্জেন্টিনা সমর্থকেরা। কিন্তু লো সেলসোর নিজের বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্নের মতোই সে স্বপ্নের সমাধি ঘটে গেছে।
অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার: মার্কো এসেনসিও (স্পেন)
রাশিয়া বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা তারকা হতে পারতেন তিনি। কিলিয়ান এমবাপ্পের পাশাপাশি উচ্চারিত হচ্ছিল তাঁর নামও। কিন্তু মার্কো এসেনসিও তারকা হওয়ার সুযোগটাই যে পেলেন না। অসাধারণ সব মিডফিল্ডারের ভিড়ে একাদশে সুযোগই পাননি রিয়াল মাদ্রিদের এই উঠতি সেনসেশন। ক্লাবের হয়ে যখনই সুযোগ পেয়েছেন নিজের জাত চিনিয়েছেন। কিন্তু প্রথম বিশ্বকাপটা আফসোসই হয়ে থাকবে তাঁর কাছে।
রাইট উইঙ্গার: পাওলো দিবালা (আর্জেন্টিনা)
লো সেলসো না হয় মাত্রই পরিচিতি পেতে শুরু করেছেন বলে তাঁকে খেলিয়ে ঝুঁকি নিতে চাননি সাম্পাওলি। কিন্তু পাওলো দিবালাকে না খেলানোর পেছনে কোনো যুক্তিই খাটবে না। নিজেকে অন্যতম সেরা তারকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন ইতিমধ্যেই দিবালা। আর্জেন্টিনা সমর্থকেরা দিবালা ও মেসিকে ঘিরেই ৩২ বছর পর বিশ্বকাপ জয়ের প্রত্যাশা করেছিলেন। সেই দিবালাকেই সাম্পাওলি পুরো বিশ্বকাপে খেলিয়েছেন কেবল ২৬ মিনিট! ২০০৬ বিশ্বকাপে তরুণ মেসিকে জার্মানির বিপক্ষে না খেলিয়ে যে ভুল করেছিলেন তখনকার আর্জেন্টিনা কোচ হোসে পেকারম্যান, রাশিয়া বিশ্বকাপে দিবালাকে না খেলিয়ে সেই একই ভুল করেছেন হোর্হে সাম্পাওলিও।
লেফট উইঙ্গার: নাবিল ফেকির (ফ্রান্স)
ফেকিরের দুর্ভাগ্যই বলতে হয়, এমন সময় জন্মেছেন যখন ফ্রান্স দলের খেলছেন কিলিয়ান এমবাপ্পে, ওউসমান ডেম্বেলের মতো খেলোয়াড়েরা। বিশ্বের যে কোনো দলের প্রথম একাদশে জায়গা পাওয়ার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও ফ্রান্সের হয়ে বিশ্বকাপ মাতাতে পারেননি ফেকির। ক্লাব অলিম্পিক লিওঁর হয়ে ক্যারিয়ারের সেরা মৌসুম কাটিয়ে এসেও ফ্রান্স দলের বেঞ্চই হয়েছে তাঁর ঠিকানা। বেঞ্চ থেকেই দেখেছেন তাঁর চেয়ে বয়সে ৫ বছরের ছোট কিলিয়ান এমবাপ্পের বিশ্বকাপ-অভিযান।
স্ট্রাইকার: রবার্তো ফিরমিনো (ব্রাজিল)
লিভারপুলের হয়ে স্বপ্নের একটি মৌসুম কাটিয়েছেন ব্রাজিলের রবার্তো ফিরমিনো। কিন্তু ২৬ বছর বয়সী লিভারপুল-তালকা ব্রাজিল কোচ তিতের মন গলাতে পারেননি। তিতের পছন্দ ছিলেন ম্যানচেস্টার সিটির ‘নাম্বার নাইন’ গ্যাব্রিয়েল জেসুস। জেসুসের বদলি হিসেবে নেমেও একটি গোল করেছেন। গোলে সহায়তা করেছেন একটি। অথচ, তিতের ভরসা জেসুস ছিলেন পুরো বিশ্বকাপেই নিজের ছায়া হয়ে। এতেই ফিরমিনোর জন্য আফসোসটা বেড়েছে। অনেকেই মনে করেন ফিরমিনো প্রথম থেকেই একাদশে থাকলে ব্রাজিল বিশ্বকাপে আরও কিছু দূর যেতে পারত।