আন্তর্জাতিক ফুটবল সব সময় বিমাতাসুলভ আচরণ করেছে আর্জেন্টাইন তারকা লিওনেল মেসির সঙ্গে। দুবার কোপা আমেরিকা ও একবার বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠা সত্ত্বেও শিরোপা ছোঁয়া হয়ে ওঠেনি মেসির। জাতীয় দলের জার্সি গায়ে বারবার ব্যর্থ হওয়া নিয়েও কথা বলেছেন এই আর্জেন্টাইন
ডিয়েগো ম্যারাডোনার পর মেসিকে ঘিরেই আর্জেন্টিনা স্বপ্ন বুনেছে। ক্লাবের হয়ে সব জেতা এই ফরোয়ার্ড জাতীয় দলকে কোনো শিরোপা এনে দিতে পারেননি। এ হতাশা অনেক আর্জেন্টাইনই মেনে নিতে পারেন না। বারবার ব্যর্থ হয়ে নতমুখে ফিরতে হয়েছে মেসিকে। গত বছর রাশিয়া বিশ্বকাপের কথাই ধরুন। শিরোপাস্বপ্নে বিভোর আর্জেন্টিনা দ্বিতীয় রাউন্ডেই ফ্রান্সের কাছে হেরে বিদায় নিয়েছে। ফ্রান্সের কাছে হারার পর কেমন লেগেছে মেসির?
বিশ্বকাপের স্মৃতি মোটেই আনন্দ দেয় না মেসিকে। এমনটাই জানিয়েছেন আর্জেন্টাইন রেডিও ‘এফএম ৯৪.৭ ক্লাব অকটুব্রে’–কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে, ‘বিশ্বকাপ নিয়ে কথা বলা বেশ কঠিন আমার জন্য। প্রথম থেকেই বেশ কিছু জিনিস ভুল করেছি আমরা। প্রথম ম্যাচে জিততে না পারা, পেনাল্টি মিস করা। দ্বিতীয় ম্যাচে আমরা বেশ ভালোই শুরু করলাম। কিন্তু প্রথম গোল খাওয়ার পর থেকেই কী যেন হয়ে গেল। সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেল। পরিকল্পনাহীনভাবে খেলা শুরু করলাম আমরা। একদম শেষ ম্যাচে জিতে আমরা পরের রাউন্ডে উঠলাম। এরপর ফ্রান্সের বিপক্ষে ম্যাচে ২-২ ব্যবধানের পর তারা একটা গোল দিয়ে দিল। যেখান থেকে ভালো খেলে আমরা আর ফিরতে পারলাম না। আবার আমাদের নতুন করে শুরু করতে হলো, পিছিয়ে পড়লাম আমরা। বিশ্বকাপটা একদম ভালো কাটেনি আমাদের। এমনকি বাছাইপর্বও আমাদের জন্য অনেক কঠিন ছিল। সবকিছুই কঠিন ছিল।’
বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়ে মনের কষ্টে সবকিছু ছেড়ে পালাতে চেয়েছিলেন মেসি, ‘বিশ্বকাপের পর কারও সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছা হতো না। মনে হতো, ঘরদোর বন্ধ করে নিজের পরিবারের সঙ্গে বসে থাকি চুপচাপ। নিজের যন্ত্রণা নিজেই ভোগ করি। সবকিছু ছেড়েছুড়ে দিয়ে পালিয়ে যেতে মন চাইত। বছরের পর বছর আমাদের দিকে আঙুল তোলা হয়েছে, আমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়েছে। ভালো খেলা সত্ত্বেও। কারণ, আমরা কোনো ট্রফি জিতিনি। তিনবার ফাইনাল পর্যন্ত গিয়ে থেমে গেছি।’
মেসি এখনো একা বসে ফাইনালে নিজেদের ভুল নিয়ে কাটাছেঁড়া করেন, ‘আপনি কি জানেন, আমাদের খেলা ফাইনালগুলো কতবার ঘরে বসে দেখেছি? অনেক সুযোগ পেয়েছিলাম গোল করার জন্য, সেগুলো দেখেছি একাকী। ওই সুযোগগুলোর কয়েকটা কাজে লাগাতে পারলেও হয়ে যেত (আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ট্রফি জেতা)।’
শত ব্যর্থতার পরেও মেসিকে সমর্থন দেওয়ার মানুষের সংখ্যাই বেশি। এমনটাই মানেন তিনি, ‘আমি জানি, অনেকেই আমাকে সমর্থন করে। যারা আমাকে ভালোবাসে, তাদের সংখ্যাই বেশি। আমি যখনই আর্জেন্টিনায় যাই, তারা আমাকে সমর্থন দেয়। যারা আমাকে সমর্থন দেয় না, সারাক্ষণ দোষারোপ করে, তারা সংখ্যায় অনেক কম। সেটা জানি আমি। বেশ ভালো করেই জানি। তাদের মতো করে তাদের বকতে দিন। আমি শুধু জানি আমাকে খেলতে হবে, দলকে সাহায্য করতে হবে। এটাই আমি করতে পছন্দ করি। ১০ নম্বর জার্সি আমার ওপর বোঝা হিসেবে কাজ করে না।’