তরুণ প্রতিভাবান টটেনহামকে নিয়েই ২০১৯ চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে উঠেছিলেন মরিসিও পচেত্তিনো। ততদিনে পচেত্তিনো বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, তাঁর ওপর ভরসা রাখলে তরুণ প্রতিভাকে ঘষেমেজে রত্ন বানিয়ে দলকে ইউরোপিয়ান ফুটবলের চূড়ায় ওঠানোর সামর্থ্য আছে তাঁর। সেবার ফাইনালে লিভারপুলের কাছে হারলেও পচেত্তিনো বুঝিয়েছিলেন, তাঁর কৌশলের সঙ্গে অর্থযোগ ঘটলে চ্যাম্পিয়নস লিগসহ অন্যান্য শিরোপা জিততে খুব বেশি বেগ পেতে হবে না কোনো দলকে।
পিএসজি তো তা-ই চাইছিল! ফ্রান্সের ঘরোয়া লিগে একাধিপত্য কায়েম করা দলটা এমন একজনকে চাইছিল, চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপার পথ যিনি দেখাতে পারবেন। সঙ্গে নেইমার-এমবাপ্পে-মেসি-রামোসদের নৈপুণ্য মিলিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা জিততে আর কতক্ষণ? মৌসুমের শুরুতেও মনে হচ্ছিল, চ্যাম্পিয়নস লিগের বেদীতে পিএসজি উল্লাসের দৃশ্য দেখার বুঝি বেশি বাকি নেই আর।
সে আশা দুরাশাই থেকে গেছে পিএসজির। গত মৌসুমে ম্যানচেস্টার সিটির কাছে থেকে সেমিফাইনাল থেকেই বিদায় নেওয়া দলটার অবস্থা এবার আরও খারাপ। দলে মেসি, রামোস, দোন্নারুম্মার মতো খেলোয়াড় যোগ করেও দ্বিতীয় রাউন্ডের ওপরে উঠতে পারেনি প্যারিসের ক্লাবটি। ধৈর্যহারা পিএসজির তাই পচেত্তিনোর ওপর আস্থা শেষ হয়ে গেছে।
প্যারিসভিত্তিক নির্ভরযোগ্য সংবাদমাধ্যম লা পারিসিয়েন জানিয়েছে, মৌসুম শেষে এই আর্জেন্টাইন কোচকে বিদায় করে দিতে চাইছে পিএসজি। পচেত্তিনো নিজেও পিএসজিতে থাকতে আর বিশেষ আগ্রহী নন। লা পারিসিয়েনের শিরোনাম অনুযায়ী তাই বলাই যায়, ‘বিবাহবিচ্ছেদের’ অপেক্ষায় দিন গুনছে পচেত্তিনো-পিএসজি।
তবে ফরাসি ক্লাবটিতে তো চুক্তির আরও এক বছর বাকি আছে পচেত্তিনোর, এ অবস্থায় তাঁকে বরখাস্ত করতে গেলে বড় ক্ষতিপূরণই দিতে হবে। লা পারিসিয়েন জানাচ্ছে, দেড় কোটি ইউরো ক্ষতিপূরণ চান পচেত্তিনো।
শুধু চ্যাম্পিয়নস লিগই নয়, পচেত্তিনোর অধীনে এবার ফরাসি কাপ ও সুপার কাপের শিরোপার স্বাদও পাওয়া হয়নি পিএসজির। লিগ পুনরুদ্ধার হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সেটা পিএসজি কর্তৃপক্ষের কাছে যথেষ্ট বলে মনে হচ্ছে না। হওয়ার কথাও নয়, কাতারি মালিকানায় যাওয়ার পর থেকে পিএসজির কাছে তো ফরাসি লিগকে ‘মুড়ির মোয়া’ই! শুধু মাঝে মধ্যে মোনাকো, লিল, মঁপলিয়ের মতো দলগুলো একবার করে জিতেছে শিরোপাটা।
এমনিতেই জিনেদিন জিদানের ওপর পিএসজির অনুরাগ বহুদিনের, পচেত্তিনোর ব্যর্থতার পর সেটা আরও বেড়েছে। লা পারিসিয়েন জানিয়েছে, সে অনুরাগ এখনও কমেনি। এখনও জিদানকেই চায় পিএসজি। কিন্তু জিদান নিজে ফ্রান্স জাতীয় দলের কোচ হওয়ার অপেক্ষায়।
এর মধ্যে দৃশ্যপটে আবির্ভূত হয়েছেন আন্তোনিও কন্তে। পচেত্তিনোর সাবেক ক্লাব টটেনহামের বর্তমান এই কোচ পাঁচ মাস আগে দায়িত্ব নিয়েছিলেন লন্ডনের ক্লাবটার। সেখানে পাঁচ মাসেই বিরক্ত হয়ে গেছেন কন্তে, অন্তত লা পারিসিয়েনের প্রতিবেদন এটাই বলছে। কন্তে নাকি নিজেই আগ্রহী হয়ে পিএসজির কাছে কোচ হওয়ার প্রস্তাব নিয়ে গেছেন। দুই বছরের চুক্তিতে মেসি-নেইমারদের কোচ হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তিনি, এমনটাই খবর।
কিছুদিন আগেও অন্য ক্লাবের কোচ হওয়ার সুযোগ ছিল পচেত্তিনোর সামনে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড আগ্রহী ছিল তাঁর প্রতি। কিন্তু পচেত্তিনোকে কোচ বানাতে হলে পিএসজিকে দেড় কোটি ইউরো ক্ষতিপূরণ দিতে হতো, এত খরচ করতে চায়নি ইউনাইটেড। উল্টো আয়াক্সের কোচ এরিক টেন হাগকে দলে টেনেছে চার লাখ ইউরোরও কম ক্ষতিপূরণ দিয়ে।
পচেত্তিনোর সুযোগ ছিল সময় থাকতে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে চলে যাওয়ার। এখন সেটাও নেই! সে ক্ষেত্রে পিএসজি থেকে বিতাড়িত হলে কোথায় যাবেন পচেত্তিনো, সে-ও অনেক গুঞ্জনের জন্ম দেবে। কন্তে পিএসজির কোচ হলে পচেত্তিনো তাঁর সাবেক ক্লাবে কন্তের জায়গায় বসবেন? গুঞ্জনটা চাউর হতে সময় লাগবে না নিশ্চিত।