ক্রোয়েশিয়ার কাছে হারের পর কোচ হোর্হে সাম্পাওলির কোনো নির্দেশের তোয়াক্কা করছেন না আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়েরা। সাম্পাওলি এখন শুধুই ‘কাগুজে’ কোচ। এমন খবরই জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম
ঢাক ঢাক গুড় গুড় করে বেজে চলা শঙ্কাটাই অবশেষে সত্য বলে মনে হচ্ছে। আর্জেন্টিনা শিবিরে বিদ্রোহ! নাইজেরিয়ার বিপক্ষে বাঁচা–মরার ম্যাচে আর্জেন্টিনার একাদশ নির্ধারণে কোচ হোর্হে সাম্পাওলির কোনো হস্তক্ষেপ চলবে না। একাদশ ঠিক করবেন দলের খেলোয়াড়েরাই! এমন সব বিস্ফোরক খবরই জানাচ্ছে সংবাদমাধ্যম।
কোচের সিদ্ধান্ত নিয়ে খেলোয়াড়দের মনে অসন্তোষ তুষের আগুনের মতো জ্বলছে বিশ্বকাপের শুরু থেকেই। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ৩-০ গোলে হারের পর সেই আগুন রূপ নেয় অগ্ন্যুৎপাতে। ইএসপিএনের কলম্বিয়ান ক্রীড়া সংবাদকর্মী আন্দ্রেস মারোক্কো জানিয়েছিলেন, নাইজেরিয়ার মুখোমুখি হওয়ার আগেই সাম্পাওলির অপসারণ চান খেলোয়াড়েরা। তাঁর স্থলে আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (এএফএ) জেনারেল ম্যানেজার ও ’৮৬ বিশ্বকাপ তারকা হোর্হে বুরুচাগাকে চান মেসি-আগুয়েরোরা।
তাঁদের এই ইচ্ছা অবশ্য আলোর মুখ দেখেনি। আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন এ দাবি মানেনি। তারা সাম্পাওলিকেই বহাল রেখেছে। তবে আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যম টিওয়াইসি স্পোর্টস জানিয়েছে নতুন খবর, ক্রোয়েশিয়ার কাছে হারের পর থেকেই খেলোয়াড়েরা সাম্পাওলির কোনো নির্দেশের তোয়াক্কা করছেন না! অর্থাৎ সাম্পাওলির এখন শুধুই ‘কাগুজে’ কোচ। সিদ্ধান্ত যা নেওয়ার খেলোয়াড়েরাই নিচ্ছেন। তবে নির্দিষ্ট কোনো খেলোয়াড়ের নাম প্রকাশ করেনি এই সংবাদমাধ্যম। খুব স্বাভাবিকভাবেই দলের সিনিয়র খেলোয়াড়দের এই বিদ্রোহে বেশি ভূমিকা থাকার কথা।
আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে হারের পর গভীর রাতে খেলোয়াড়েরা তাঁদের বেস ক্যাম্পে বৈঠকে বসেন। সেখানে সাম্পাওলিকে তাঁরা বলেন, নাইজেরিয়ার বিপক্ষে গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে তিনি যেন কোচিং না করেন। মানে, সাম্পাওলি এই ম্যাচে কোনো নির্দেশ খাটাতে পারবেন না। ট্যাকটিস কিংবা একাদশও বাছাই করতে পারবেন না।
টিওয়াইসি স্পোর্টসের জানানো আরেকটি বিস্ফোরক তথ্য হলো, সাম্পাওলিকে না মানার এই বিদ্রোহে খেলোয়াড়দের সমর্থন দিচ্ছেন স্বয়ং এএফএ সভাপতি ক্লদিও তাপিয়া। অন্যান্য সংবাদমাধ্যমে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, খেলোয়াড়, কোচিং স্টাফ ও তাপিয়া মিলে বৈঠক শেষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের পরিস্থিতি মোকাবিলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এদিকে ১৯৮৬ বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টিনার সাবেক ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার রিকার্ডো গিউস্তির দাবি, তিনি বুরুচাগার সঙ্গে কথা বলেছেন। বুরুচাগা তাঁকে বলেছেন, নাইজেরিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ নিয়ে খেলোয়াড়েরা তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন। গিউস্তির ভাষ্য, ‘খেলোয়াড়েরাই একাদশ ঠিক করবেন। এটাই বাস্তবতা। সাম্পাওলি চাইলে বেঞ্চে বসে থাকতে পারেন। তা না চাইলেও সমস্যা নেই।’
সংবাদমাধ্যমের খবর, আর্জেন্টিনা স্কোয়াডকে চাঙা করে তুলতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছেন লিওনেল মেসি ও হাভিয়ের মাচেরানো। অবশ্য এ ছাড়া আর পথও নেই। আইসল্যান্ডের বিপক্ষে ড্র এবং ক্রোয়েশিয়ার কাছে হারে মেসিদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। শেষ ষোলোয় উঠতে হলে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে আর্জেন্টিনাকে জিততেই হবে। পাশাপাশি তাঁদের প্রার্থনায় থাকতে হবে আইসল্যান্ড যেন ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে জিততে না পারে। এই কঠিন সমীকরণের মধ্যে দলে বিদ্রোহের খবর নিশ্চিতভাবেই সমর্থকদের আরও দুশ্চিন্তায় ফেলে দেবে।