অধিনায়ক হিসেবে প্রথম লা লিগা ট্রফি মার্সেলোর, রিয়ালের জার্সিতে ২৪তম শিরোপা তাঁর
অধিনায়ক হিসেবে প্রথম লা লিগা ট্রফি মার্সেলোর, রিয়ালের জার্সিতে ২৪তম শিরোপা তাঁর

বিদায়বেলায় রেকর্ডটা সঙ্গী মার্সেলোর

এর আগেও দেবীর দেখা পেয়েছিলেন মার্সেলো। কিন্তু সেটি ছিল একপ্রকার অনধিকার চর্চা। কাল রাতে সেটা বলার উপায় ছিল না। নিজ অধিকারবলেই কাল প্লাজা দে সিবেলেসে দেবী সিবেলের মূর্তিতে রিয়াল মাদ্রিদের পতাকা জড়িয়েছেন মার্সেলো। রিয়াল মাদ্রিদের অধিনায়ক হিসেবে এটা তাঁর প্রাপ্য।

কাকতালই হবে। সিবেলের গায়ে পতাকা জড়ানোর স্বপ্ন দেখতেন মার্সেলো। প্রথমবারের মতো সে কাজটা যেদিন করতে পারলেন, সেদিন তিনি রিয়াল মাদ্রিদের ইতিহাসের সফলতম খেলোয়াড়। যে ক্লাবের ইতিহাস মানে আলফ্রেডো ডি স্টেফানো, ফেরেঙ্ক ডি পুসকাস, পাকো হেন্তো, রাউল গঞ্জালেস, ইকার ক্যাসিয়াস, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো আর সের্হিও রামোস, সে ক্লাবের হয়ে সবচেয়ে বেশি ট্রফি জেতার রেকর্ডটি এখন ঝাঁকড়া চুলের মার্সেলোর। ঘরের মাঠে এসপানিওলকে ৪-০ গোলে হারিয়ে কাল লিগ শিরোপা জিতেছে রিয়াল। ক্লাবের হয়ে এটি মার্সেলোর ২৪তম শিরোপা।

এ মৌসুমের শুরুতেই রামোস বিদায় নিয়েছেন। তাঁর জায়গায় অধিনায়ক হয়েছেন মার্সেলো। কিন্তু সেটা নামকাওয়াস্তে। মৌসুমের শুরুতেই কোচ কার্লো আনচেলত্তি বুঝিয়ে দিয়েছেন, জিনেদিন জিদান শত চেষ্টাতেও যা পারেননি, সেটা তাঁর পক্ষেও সম্ভব হচ্ছে না। ৩০ পেরোতেই দম ফুরিয়ে আসা মার্সেলোর তাই রিয়াল একাদশে জায়গা হচ্ছিল না। ২০২২ সালেই চুক্তির মেয়াদ ফুরিয়ে আসছে তাঁর। দলে অপাঙ্‌ক্তেয় হয়ে পড়ায় চুক্তি যে আর বাড়ছে না, সেটাও সবার জানা। রিয়ালের জার্সিতে মার্সেলোর এটাই তাই শেষ মৌসুম।

রামোসের সঙ্গে তাঁর জুটিটা ছিল অনন্য। প্রায় একই সময়ে রিয়াল মাদ্রিদে ক্যারিয়ার শুরু দুজনের। রামোস যখন অধিনায়ক হয়েছেন, তখন সহ–অধিনায়ক হয়েছেন মার্সেলো। কাল প্রথমবারের মতো রিয়াল মাদ্রিদ অধিনায়ক হিসেবে প্লাজা দে সিবেলেসে সমর্থকদের সঙ্গে শিরোপা উৎসব করার সময় তাই পূর্বসূরিকে স্মরণ করেছেন, ‘প্রথমেই সমর্থকদের ধন্যবাদ দিতে চাই। এটা তাদের জন্য। দুই বছর আগে লিগ জিতলেও তাদের সঙ্গে সেটা উদ্‌যাপন করতে পারিনি (করোনার কারণে)। সিবেলেসে পতাকা জড়ানোর অনুভূতি অসাধারণ। একবার আমাকে এখানে এনেছিল সের্হিও রামোস, এই অনুভূতিটা কেমন সেটা বুঝতে দেওয়ার জন্য ওকে ধন্যবাদ।’

রিয়ালের হয়ে শিরোপা জেতায় শীর্ষ পাঁচে এখন মার্সেলো-বেনযেমা

গতকাল নিজের ষষ্ঠ লিগ শিরোপা জিতেছেন মার্সেলো। সে সঙ্গে চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছেন চারবার। স্প্যানিশ সুপার কাপও পাঁচবার জিতেছেন, ক্লাব বিশ্বকাপ জিতেছেন চারবার। তিনবার উয়েফা সুপার কাপের সঙ্গে দুটি কোপা দেল রে ট্রফিও জিতেছেন মার্সেলো। গত জানুয়ারিতে স্প্যানিশ সুপার কাপ জিতে বন্ধু রামোসকে টপকেছেন। কাল টপকে গেছেন জানুয়ারিতেই চিরনিদ্রায় যাওয়া ক্লাব কিংবদন্তি পাকো হেন্তোকে।

ওদিকে পাকো হেন্তো ১২ বার লিগ জিতেছিলেন, জিতেছেন ৬টি চ্যাম্পিয়নস লিগ। এ দুই ট্রফিতে তাঁকে টেক্কা কখনো দেবে বলে বিশ্বাস হয় না। এ ছাড়া দুবার কোপা দেল রে জিতেছিলেন এই লেফট উইঙ্গার। সে সঙ্গে দুটি লাতিন কাপ ও একটি ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ জিতেছিলেন হেন্তো।

রামোসের ক্ষেত্রে লিগ ও চ্যাম্পিয়নস লিগের সংখ্যা যথাক্রমে চার ও পাঁচ। সেই সঙ্গে চারটি ক্লাব বিশ্বকাপ, তিনটি উয়েফা সুপার কাপ ও দুটি কোপা দেল রে জিতেছেন রিয়ালের হয়ে। স্প্যানিশ সুপার কাপও চারবার জিতেছেন বর্তমানে পিএসজিতে খেলা এই ডিফেন্ডার। সব মিলিয়ে ২২টি শিরোপা তাঁর রিয়ালের জার্সিতে।

রিয়ালের হয়ে ১৯৮৩ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ৬৮২টি ম্যাচে খেলেছেন মানোলো সানচিস। ১৮ বছরে ২১ শিরোপা পেয়েছেন রিয়াল একাডেমিতে বেড়ে ওঠা ডিফেন্ডার। আটটি লা লিগার সঙ্গে দুটি চ্যাম্পিয়নস লিগ আছে তাঁর। কোপা দেল রে জিতেছেন মাত্র একবার। ইউরোপা লিগ দুবার জেতা মানচিস ১৯৯৮ সালে জিতেছেন ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ। স্প্যানিশ সুপার কাপও পাঁচবার জিতেছেন তিনি।

বিদায়বেলায় সিবেলেসে উদ্‌যাপন করতে পারলেন মার্সেলো

সানচিসের পাশেই আছেন এ মৌসুমে যাঁর হাতেই রিয়ালের আর্মব্যান্ড বেশি দেখা যায়, সেই করিম বেনজেমা। গতকালই নিজের ২১তম রিয়াল শিরোপা জিতেছেন। চারটি লা লিগার সঙ্গে চারটি চ্যাম্পিয়নস লিগ আছে তাঁর। সে সঙ্গে চারটি স্প্যানিশ সুপার কাপ। ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপও আছে চারটি। উয়েফা সুপার কাপ তিনবার জেতা বেনজেমা শুধু কোপা দেলের ক্ষেত্রেই একটু পিছিয়ে আছেন। ঘরোয়া কাপ জিতেছেন মাত্র দুবার।

রিয়াল মাদ্রিদের পক্ষে সম্ভাব্য আর ছয়টি ম্যাচ খেলা সম্ভব মার্সেলোর পক্ষে। ছয় ম্যাচেই আরেকটি ট্রফি বাড়িয়ে নেওয়ার সুযোগ আছে। সে জন্য ম্যানচেস্টার সিটিকে টপকে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে উঠতে হবে। আর একবার ফাইনালে উঠতে পারলে, আনচেলত্তির ভাষায়, ‘ফাইনালে রিয়ালের সম্ভাবনা সব সময়ই বেশি।’