পাঁচ বছর আগে বার্সেলোনা প্রায় ছেড়েই দিচ্ছিলেন লিওনেল মেসি। কর ফাঁকির মামলায় জড়ানোর পর স্পেন ছাড়ার সিদ্ধান্ত প্রায় নিয়েই ফেলেছিলেন আর্জেন্টাইন তারকা
২০১৪ সালে তিনি স্পেনে কর জালিয়াতির মামলায় ফেঁসে যাওয়ার পর প্রাণের বার্সেলোনা প্রায় ছেড়েই দিচ্ছিলেন লিওনেল মেসি। এ কথা তিনি নিজেই জানিয়েছেন। রেডিও চ্যানেল ‘আরএসি১’কে আর্জেন্টাইন তারকা বলেছেন, ওই সময়টা নানা সমস্যায় ছিলেন তিনি। তবে ক্লাবের সঙ্গে পুরো বিষয়টির কোনো সম্পর্ক ছিল না বলে আশ্বস্ত করেছেন তিনি।
স্পেনের কর বিভাগ অভিযোগ করেছিল, ২০০৭ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত বিশাল অঙ্কের কর ফাঁকি দিয়েছেন মেসি। বার্সা ফরোয়ার্ডের বিরুদ্ধে ৪১ লাখ ইউরো কর (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩৬ কোটি টাকা) ফাঁকির অভিযোগ গঠন করেছিল স্প্যানিশ কর বিভাগ। উরুগুয়ে ও বেলিজের কিছু নামকাওয়াস্তে প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে বার্সেলোনার ফুটবল তারকার ছবি স্বত্ব বিক্রির মাধ্যমে এ কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। এ অভিযোগে আদালতে হাজিরাও দিতে হয়েছিল মেসি ও তাঁর বাবাকে। শেষ পর্যন্ত ২০১৬ সালের জুলাইয়ে নিষ্পত্তি হয় এ মামলার।
মেসিকে ২১ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছিল আদালত। তবে সহিংস অপরাধ না করায় স্প্যানিশ আইনে দুই বছরের নিচে কারাদণ্ড হওয়ায় সাজা খাটতে হয়নি। এ ছাড়াও ২০ লাখ ইউরো জরিমানাও দিতে হয় পাঁচবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী এ ফুটবলারকে। তাঁর বাবা হোর্হে মেসিরও ১৫ মাস কারাদণ্ড ও ১৫ লাখ ইউরো জরিমানা করেছিল আদালত। সে ঘটনা স্মরণ করে মেসি এত দিন পর জানালেন, কর ফাঁকির অভিযোগ ওঠার পর তিনি স্পেন ছাড়তে চেয়েছিলেন। এ জন্য বেশ কিছু ক্লাবের সঙ্গে কথাও বলেছিলেন। কিন্তু কোনো ক্লাবের কাছ থেকেই পাকাপাকি প্রস্তাব পাননি।
মেসি বলেন, ‘সত্যি বলতে তখন চলে যেতে চেয়েছিলাম। সেটি বার্সেলোনার জন্য নয়, আমি স্পেন ছাড়তে চেয়েছিলাম। তখন মনে হয়েছিল আমি বাজে ব্যবহারের শিকার হয়েছি, তাই আর থাকতে চাইনি। তখন অনেক খোলা দরজাই ছিল তবে সেগুলো আনুষ্ঠানিক ছিল না। কারণ সবাই জানত আমি (বার্সায়) থাকতে চাই। তখনকার পরিস্থিতি এ ক্লাবের প্রতি আমার অনুভূতি ছাপিয়ে গিয়েছিল।’
মাঠের বাইরের সেই জটিলতা কঠিন করে তুলেছিল মেসি ও তাঁর পরিবারের জীবনকে। ‘এমন বেশ কিছু পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গিয়েছিল। বিশেষ করে ২০১৩ থেকে ২০১৪ সালে। কর বিভাগের সঙ্গে সমস্যা এবং তারপর যা ঘটল। আমার ও পরিবারের জন্য সময়টা কঠিন হয়ে উঠেছিল। কীসের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি অনেকেই জানত না এবং এটাও শুনেছি সংবাদমাধ্যমের একটি অংশ তা ঘটিয়েছে’—বলেন মেসি।
কর ফাঁকির জটিলতা মেসির জীবনে এখন অতীত ঘটনা। আর তাই আর্জেন্টাইন তারকা এখন শুধু বার্সেলোনা নিয়েই ভাবছেন, ‘আমি এখানেই (বার্সা) থাকতে চাই। সব সময়ই এই ভাবনা ছিল এবং তা কখনো পাল্টায়নি।’ ৩২ বছর বয়সী এ ফরোয়ার্ড যোগ করেন, ‘এটা আগের চেয়েও পরিষ্কার যে, এখানেই নিজের ক্যারিয়ারের শেষ টানতে চাই। এটি আমার ও আমার পরিবারের সিদ্ধান্ত।’
মেসি এর আগে বলেছেন, আর্জেন্টিনায় তাঁর শৈশবের ক্লাব নিউওয়েলস ওল্ড বয়েজে খেলে ক্যারিয়ারের ইতি টানতে চান। বার্সায় ক্যারিয়ার শেষ করলে তাঁর সে ইচ্ছে পূরণ হওয়ার কথা না। তবে মেসি নিজের পরিবারের কথা ভেবেই থাকতে চান বার্সায়, ‘সেখানে (নিউওয়েলস ওল্ড বয়েজ) খেলার স্বপ্ন দেখেছিল সব সময়। যেকোনো জায়গার চেয়ে আর্জেন্টাইন ফুটবল আলাদা। কিন্তু নিজের ইচ্ছার চেয়ে পরিবারের গুরুত্বটা বেশি।’