বেনজেমাকে ছাড়াই আজ মাঠে নামবে রিয়াল মাদ্রিদ
বেনজেমাকে ছাড়াই আজ মাঠে নামবে রিয়াল মাদ্রিদ

রিয়াল-বার্সার মহারণ

বার্সেলোনার বিপক্ষে যেমন খেলতে পারে বেনজেমাহীন রিয়াল মাদ্রিদ

করিম বেনজেমা চোটে পড়েছেন।

এল ক্লাসিকোর আগে এই খবরটাই রিয়াল মাদ্রিদ কোচ কার্লো আনচেলত্তির চিন্তা বাড়িয়ে দিচ্ছে বহু-বহুগুণ। রোনালদো-পরবর্তী যুগে রিয়াল আক্রমণভাগের মূল ভরসা বেনজেমা, তাঁকে ছাড়াই আজ দলকে মাঠে নামাবেন এই ইতালিয়ান কোচ। এমনিতে মূল একাদশে খুব একটা অদল-বদল আনায় বিশ্বাসী না আনচেলত্তি। সবচেয়ে শক্তিশালী একাদশটাই ম্যাচের পর ম্যাচ খেলিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে বদনাম আছে তাঁর। এল ক্লাসিকোর মতো মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে মূল একাদশে বেনজেমার জায়গায় কাকে খেলাবেন, সেটা ভেবে ভেবে আনচেলত্তির কেমন ‘বিরক্ত’ লাগছে, অনুমান করাই যায়! তার ওপর শুধু বেনজেমাই নয়, বার্সেলোনার বিপক্ষে রিয়াল আজ পাচ্ছে না ফরাসি লেফটব্যাক ফারলাঁ মেন্দিকেও।

বেনজেমার জায়গায় কে খেলবেন আজ?

লিগ শিরোপার লড়াইয়ে এই ম্যাচের ফল খুব একটা প্রভাব ফেলার কথা না। একটা সময় ছিল, যখন লা লিগায় মৌসুমের দুটি এল ক্লাসিকোই শিরোপা লড়াই অনেকটা মীমাংসা করে দিত। এই মৌসুমে সেটার দরকার পড়ছে না। বার্সেলোনা শিরোপা লড়াইয়েই নেই বলা যায়। লিগের দ্বিতীয় স্থানে থাকা সেভিয়ার চেয়ে ১০ পয়েন্ট এগিয়ে থেকে শীর্ষে রিয়াল। এক ম্যাচ কম খেলা বার্সেলোনা রিয়ালের চেয়ে ১৫ পয়েন্ট পেছনে থেকে তিনে।

কিন্তু দিন শেষে ম্যাচটা যে এল ক্লাসিকো! দুই দলের পয়েন্ট, ফর্ম, অবস্থান নিয়ে সকল আলোচনা অর্থহীন হয়ে যায় এই ম্যাচের গুরুত্বের কাছে। এটা যে পয়েন্টের চেয়ে বেশি মর্যাদার লড়াই!

বেনজেমার জায়গায় কে খেলবেন, জানাননি আনচেলত্তি

বার্সেলোনার মতো রিয়াল মাদ্রিদও এই ম্যাচে ৪-৩-৩ ছকে খেলবে, বলে দেওয়া যায়। বেনজেমা যেহেতু থাকছেন না, তাঁর জায়গায় কে খেলবেন, সেটা বড় প্রশ্ন। ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে বেনজেমার জায়গায় কাকে খেলানো হবে, সেটা বলতে রাজি হননি আনচেলত্তি। স্বাভাবিক, প্রতিপক্ষ কোচকে ধোঁয়াশায় রাখার এই সুযোগ কে-ই বা হাতছাড়া করতে চায়?

আক্রমণভাগের তিনজনের মধ্যে ভিনিসিয়ুস জুনিয়র থাকছেন, এটা নিশ্চিত। বেনজেমা না থাকার কারণে বাকি দুজন কে হবেন, প্রশ্ন সেখানেই। মার্কো আসেনসিও থেকে শুরু করে রদ্রিগো গোজ, এদেন হ্যাজার্ড, মারিয়ানো দিয়াজ, গ্যারেথ বেল এমনকি ইসকোও সুযোগ পেয়ে যেতে পারেন আজ। ছক ৪-৩-৩ হলেও, ওপরে মূল স্ট্রাইকারকে একা রেখে দুই উইঙ্গার নিচে নেমে এসে ছকটাকে অনেকটা ৪-৫-১ করে ফেলে রিয়াল মাদ্রিদ। মদরিচ থেকে শুরু করে ক্রুস, কাসেমিরো, পেছনে থাকা আলাবা, সামনে ভিনিসিয়ুস—প্রত্যেকেই বল পায়ে দক্ষ। যে কারণে নিজেদের মধ্যে পাস আদান-প্রদান করার সময়ে বোঝাপড়াটা বেশ ভালো থাকে রিয়াল মাদ্রিদ খেলোয়াড়দের। আর খেলোয়াড়েরা যে ধরনের কৌশলে খেলতে স্বচ্ছন্দ, আনচেলত্তিও সব সময় সেটাকেই প্রাধান্য দিয়ে এসেছেন।

ভিনিসিয়ুসের ওপর আজ বড় দায়িত্ব

ফলে এই রিয়াল মাদ্রিদকে আনচেলত্তি এমন একটা কৌশলে খেলাচ্ছেন, যেখানে তারা নিজেদের মধ্যে দ্রুতগতিতে পাস আদান-প্রদান করে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই প্রতি আক্রমণে উঠে যেতে পারে। ওপরে থাকা ভিনিসিয়ুস যেহেতু অনেক গতিশীল, সঙ্গে ড্রিবলেও পারদর্শী, তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভিনিসিয়ুসের পায়ে বল দিয়ে প্রতি আক্রমণ নির্ভর ফুটবল খেলতে চায় রিয়াল। আর সে কৌশলের জন্য বেনজেমার মতো একজন স্ট্রাইকার থাকা অনেক জরুরি। বেনজেমা মাঝেমধ্যেই নিচে নেমে আসেন, সঙ্গে প্রতিপক্ষের দুই-একজন ডিফেন্ডারকেও সরিয়ে আনেন, ফলে ওই ফাঁকা জায়গায় ঢুকে পড়েন ভিনিসিয়ুসের মতো উইঙ্গাররা। ভিনিসিয়ুসের পায়ে পেছন থেকে বল পাঠানোর জন্য ক্রুস নেমে যান সেন্টার ব্যাকদের কাতারে। বার্সেলোনার ডিফেন্ডারদের এই দিকটায় নজর রাখতে হবে আজ।

পিএসজির বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগের দ্বিতীয় লেগের সেই দুর্দান্ত ম্যাচটায় আনচেলত্তির অন্যতম কৌশল ছিল দুই উইঙ্গার ভিনিসিয়ুস আর আসেনসিওকে (পরে রদ্রিগো) প্রতিপক্ষের ডি-বক্সের মধ্যে ঢোকার লাইসেন্স দিয়ে অন্তত একজন ফুলব্যাককে নিচ থেকে ওপরে উঠিয়ে (মূলত কারভাহাল) ছদ্ম-উইঙ্গারের দায়িত্ব দেওয়া। কারণ পিএসজির দুই উইঙ্গার মেসি আর নেইমার মাঝমাঠে নেমে যাচ্ছিলেন, সাইডলাইন ধরে খেলছিলেন না। ফলে কোনো উইঙ্গারকে দেখে দেখে রাখার দরকার পড়েনি কারভাহালদের। মেসি-নেইমারদের আটকে রাখার কাজ করছিলেন রিয়ালের দুই সেন্টারব্যাক ডেভিড আলাবা ও এদের মিলিতাও।

কারভাহালকে কে কি বেশি ওপরে ওঠার লাইসেন্স দেবেন আনচেলত্তি?

কিন্তু এ সুবিধা বার্সেলোনার বিপক্ষে পাবে না রিয়াল মাদ্রিদ, এটা নিশ্চিত। কারণ বার্সেলোনার দুই উইঙ্গার আদামা ত্রাওরে (কিংবা উসমান দেম্বেলে) ও ফেরান তোরেস দুজনেই প্রথাগত উইঙ্গারদের মতো সাইডলাইন ঘেঁষে খেলে থাকেন, তাই রিয়ালের ফুলব্যাকরা ওপরে উঠে গেলে বার্সার উইঙ্গারদের দেখে দেখে রাখার মতো কেউ থাকবে না। নিজেদের দুই ফুলব্যাক নিচে থাকলে মাঠের পাশের জায়গাগুলোতে দাপট ধরে রাখার জন্য উইঙ্গারদেরও ক্রমশ ওঠানামা করতে হবে (কারভাহালের সামনে আসেনসিও বা অন্য কেউ, নাচোর সামনে ভিনিসিয়ুস)। বেনজেমার অনুপস্থিতিতে সে কাজটা রিয়াল তারকারা কেমন পারেন, সেটাই দেখার বিষয়।

মূল ছক ৪-৩-৩ থেকে ৪-৫-১ এ রূপ নিলেও, অনেক সময় মাঝমাঠ থেকে উঠে গিয়ে স্ট্রাইকারের পাশে প্রেস করা শুরু করেন লুকা মদরিচ। ফলে রিয়ালের পায়ে যখন বল থাকে না, ছক ৪-৪-২ হয়ে যায়। রিয়াল যদি প্রথমে গোল দিয়ে এগিয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে এমন পরিস্থিতিতে কার্লো আনচেলত্তি প্রথাগত কোনো উইঙ্গার না খেলিয়ে সে জায়গায় মিডফিল্ডার ফেদেরিকো ভালভার্দেকেও নামিয়ে দিতে পারেন। আর এমন পরিস্থিতিতে ম্যাচে এগিয়ে যাওয়ার পর গোল ধরে রাখতে আনচেলত্তির রিয়াল বেশ পারদর্শী।

বার্সেলোনার বিপক্ষে আজ এমন কিছু কৌশলই দেখা যেতে পারে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে।