পিএসজিতে নাম লেখানোর আগে ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বার্সেলোনায় খেলেছেন নেইমার। তাঁকে ঘিরেই মেসি-উত্তর যুগের পরিকল্পনা করেছিল বার্সেলোনা। কিন্তু বাস্তবে হয়েছে উল্টো। নেইমার নিজে তো ক্লাব ছেড়েছেনই, মেসিকেও টেনে নিয়ে গেছেন পিএসজিতে।
ওদিকে নেইমারের প্রতি লুব্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে ছিল রিয়াল মাদ্রিদ। বার্সেলোনা ছেড়ে পিএসজিতে যাওয়ার পরও নেইমারকে পাওয়ার চেষ্টা করেছিল তারা। নেইমারের প্রতি তাদের আগ্রহ তো নতুন নয়। ১৪ বছর বয়সেই রিয়ালে ট্রায়াল দিয়েছিলেন। ২০১৩ সালে বার্সেলোনায় যোগ দেওয়ার আগে তো সবাই প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল, রিয়াল মাদ্রিদেই যাচ্ছেন নেইমার। ক্লাব সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ পরে বলেছেন, মাদ্রিদের ক্লাবে মেডিকেলও হয়ে গিয়েছিল তাঁর। কিন্তু বার্সেলোনা শেষ মুহূর্তে নিয়ে গেছে নেইমারকে। ২০১৬ সালে এর প্রতিশোধ নিয়েছে রিয়াল।
নেইমারকে না পাওয়ার আক্ষেপ ভুলতে পেরেজ ব্রাজিল দেশটিকেই লক্ষ্য বানিয়ে ফেলেন। ব্রাজিলে এরপর যত ‘নতুন নেইমার’ এসেছেন, তাঁকেই দলে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন পেরেজ। সেই সঙ্গে মূল নেইমারকেও আকারে–ইঙ্গিতে রিয়ালে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সুযোগ পেলেই। আর নেইমারকে এভাবে মোটা অঙ্কের লোভ দেখিয়ে ছিনিয়ে নেওয়ায় বার্সার ওপর জমা ক্ষোভ উগরে দেওয়ার সুযোগ খুঁজছিলেন।
ব্রাজিলিয়ান নেইমারকে না পাওয়ার পাল্টা রিয়াল দিয়েছে আরেক ব্রাজিলিয়ানকে দলে ভিড়িয়েই। ২০১৬ সালে ব্রাজিল অনূর্ধ্ব-১৭ দলের হয়ে আলো ছড়াচ্ছিলেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। তখনো পেশাদার ফুটবলে নাম লেখানো হয়নি তাঁর। সাড়ে ১৬ বছরের ওই কিশোরের জন্য তাঁর ক্লাব ফ্ল্যামেঙ্গো তিন কোটি ইউরো দাম ঠিক করে রেখেছিল। তবু পিছপা হয়নি ইউরোপের ক্লাবগুলো। বার্সেলোনা আগ্রহী ছিল, ছিল রিয়ালও। তবে মূল দলবদলের অঙ্ক চমকে দিয়েছিল সবাইকে।
যে কিশোর এখনো কোনো প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলেননি, যাঁর রিলিজ ক্লজ তিন কোটি ইউরো, তাঁকে পেতে রিয়াল ফ্ল্যামেঙ্গোকে দিল ৪ কোটি ৫০ লাখ ইউরো! এর পেছনের গল্পটা এবার জানালেন বার্সেলোনারই একজন। বার্সেলোনার ডিফেন্ডার জেরার্ড পিকে তাঁর বন্ধু ও অনলাইন সেলিব্রিটি ইবাই ইয়ানোসের সঙ্গে এক লাইভে এসে বললেন, ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের যোগ দেওয়ার কথা ছিল বার্সেলোনায়। সবকিছুই যখন চূড়ান্ত, তখন দৃশ্যপটে রিয়ালের আবির্ভাব। অনেকটা নেইমারের দলবদলের মতোই।
পিকে বলেছেন, ‘ভিনিসিয়ুস মাদ্রিদে যোগ দেওয়ার আগে ব্যক্তিগতভাবে তার সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল। সে আমাকে বলেছিল, বার্সার সঙ্গে তার চুক্তি হয়ে গেছে। আমি তাকে বার্সেলোনায় আসার জন্য অভিনন্দন জানানোর মতো কিছু জানিয়েছিলাম। এমনকি সে আমাকে নিশ্চিত করেছিল, সে ক্লাবে যোগ দিতে যাচ্ছে। কিন্তু মাদ্রিদ তাকে দ্বিগুণ টাকার চুক্তিতে দলে ভেড়ায়।’
কিন্তু এর আগে ভিনিসিয়ুস বলেছিলেন ভিন্ন কথা। যার সঙ্গে পিকের কথার মিল পাওয়া যাচ্ছে না। ভিনিসিয়ুস বলেছিলেন, ‘বার্সেলোনা আমাকে আরও বেশি অঙ্কের প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু আমি সেরা একটি দলে খেলতে চেয়েছিলাম। মার্সেলো ও কাসিমিরোর সঙ্গে কথা বলে আমার সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হয়।’
২৪ অক্টোবর বার্সেলোনার মাঠে এল ক্লাসিকো খেলতে যাবে রিয়াল মাদ্রিদ। মাঠে অবস্থানগত কারণেই ভিনিসিয়ুস ও পিকেকে প্রায় সারাক্ষণ লড়তে হবে। তার আগে মনস্তাত্ত্বিক খেলা খেলতে চাইলেন কি পিকে?