বাফুফে থেকে তাবিথের বিদায়, সহসভাপতি মহিউদ্দিন

কাজী সালাউদ্দীন, আজম নাছিরউদ্দিন, সালাম মুর্শেদীর সঙ্গে মহিউদ্দিন আহমেদ (বাঁ থেকে দ্বিতীয়)।
ছবি: বাফুফে

হোটেল সোনারগাঁওয়ে আজ বেলা দেড়টার দিকে হঠাৎ জয় বাংলা স্লোগান। ‘মহি ভাইয়ের বিজয়ে লাল গোলাপ শুভেচ্ছা’, ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানে চারপাশ প্রকম্পিত। মহিউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ আওয়ামী যুব লিগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং ব্রাদার্স ইউনিয়নের ডাইরেক্টর ইনচার্জ। আজ বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সহসভাপতি পদে পুনরায় নির্বাচনে তাবিথ আউয়ালকে ৬৭-৬৩ ভোটে হারিয়েছেন।

তাবিথ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের গত দুটি নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) প্রার্থী ছিলেন। ফলে এই নির্বাচনকে বৃহত্তর পরিসরে অনেকে আওয়ামী লীগ-বিএনপি রাজনৈতিক লড়াই বলেও মনে করছিলেন। তবে নির্বাচনের পর মহিউদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচন রাজনৈতিক বিবেচনায় হলে তাবিথ আউয়াল এত ভোট পেলেন কীভাবে?’ উত্তরও দেন তিনি, ‘তাবিথ ভোট বেশি পাওয়ার কথা নয়। কাজেই এটা রাজনৈতিক ভোট নয়।’ তবে অনেকে  মনে করেন, মহিউদ্দিন যেহেতু সাবেক যুব লীগ নেতা তাই এই নির্বাচনকে মর্যাদার লড়াই ভাবছিলেন তাঁর সমর্থকেরা। এবং জেতার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালান। মহিউদ্দিনের নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে বাফুফের নির্বাচন সমাপ্ত হলো।

গত ৩ অক্টোবর একই স্থানে বাফুফের ২১ পদে নির্বাচন হয়েছিল। ২০ পদে ফয়সালা হলেও চার সহসভাপতির একটি পদে মহিউদ্দিন ও তাবিথ সমান ৬৫ ভোট পান। ফলে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন দুজনের মধ্যে আবার ভোটের সিদ্ধান্ত দেন। আজ সেই ভোট হলো। ১৩৯ ভোটারের মধ্যে ১৩০জন ভোট দিয়েছেন। ৩ অক্টোবরে নির্বাচনে ভোট দেন ১৩৬জন।

দুই প্রার্থীই বাফুফের বিদায়ী কমিটির সহসভাপতি ছিলেন। তাবিথ টানা দুই মেয়াদে সহসভাপতি নির্বাচিত হন স্বতন্ত্র থেকে। তিনি জাতীয় দল কমিটির কো-চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। সালাউদ্দিনের আস্থাভাজন ছিলেন। ওদিকে মহিউদ্দিন আহমেদ সালাউদ্দিন বিরোধী পরিষদের নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন কিছুদিন আগে। গত চার বছর বাফুফেতে অনেক অনিয়ম হয়েছে বলে একাধিকবার অভিযোগ তোলেন। এমনকি বাফুফেতে ১৮ কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগও আনেন। গত কমিটির সহসভাপতি মহিউদ্দিন এবং আরেক সহসভাপতি বাদল রায় সালাউদ্দিন বিরোধী অবস্থান নেন। তাঁরা ফুটবল ফেডারেশনের নেতৃত্বে পরিবর্তনের ডাক দিয়েছিলেন। তবে সালাউদ্দিন পরিষদ থেকেই বেশির ভাগ নির্বাচিত হয়েছেন। বিরোধী পরিষদ থেকে সহসভাপতি পদে শুধু মহিউদ্দিন নির্বাচিত হয়ে এলেন।

তাবিথ আউয়ালের (ডানে) সঙ্গে মহিউদ্দিন।

আজ নির্বাচনের পর আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় মহিউদ্দিন ‘যোগ্য নেতা’ হিসেবে বর্ণনা করেন চতুর্থবারের মতো বাফুফের সভাপতি নির্বাচিত হওয়া কাজী সালাউদ্দিনকে। তাহলে এত দিন কেন সালাউদ্দিনের সমালোচনা করলেন, নানা অভিযোগ তুললেন? এমন প্রশ্নে তাঁর কথা, ‘ভোটাররা তাঁকে (কাজী সালাউদ্দিন) সর্বোচ্চ ভোটে সভাপতি নির্বাচিত করেছেন। কাজেই ভোটের ফলই বলছে তিনি যোগ্য নেতা।’ মহিউদ্দিনের দাবি, ‘কাজী সালাউদ্দিনের সঙ্গে আমার কোনো বিরোধ নেই।’ বাফুফের কঠোর সমালোচক মহিউদ্দিন আহমেদের কণ্ঠ নির্বাচনের পর বেশ নরম শোনা গেল।

দীর্ঘদিন থেকে ক্রীড়াঙ্গনের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা উল্লেখ করে মহিউদ্দিন বলেন, ‘বাফুফে যে ধরনের পরিকল্পনা করে এগোচ্ছে, আমি এর সঙ্গে যুক্ত থেকে ফুটবলের উন্নয়নে পাশে থাকব।’ পাশাপাশি ফেডারেশন নেওয়া গঠনমূলক কর্মকাণ্ড সমর্থন করবেন বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ফুটবল উন্নয়নে পাশে থাকার কথা বারবারই এসেছে তাঁর প্রতিক্রিয়ায়। তবে অতীতে দেখা গেছে নির্বাচনের পরই শুরু হয়ে যায় নানা বিরোধ আর আস্থার সংকট।