>'একাডেমি অ্যাক্রেডিটেশন স্কিম' চালু করেছে এএফসি। এটির অধীনে দেশের ফুটবল একাডেমিগুলো বাফুফেতে নিবন্ধিত থাকবে।
বাংলাদেশে ফুটবল কোচিং সেন্টার একেবারে কম নেই। একাডেমি না হলেও এগুলোকে একাডেমি বলতেই পছন্দ করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। একাডেমির নিজস্ব অবকাঠামো, নিজস্ব কোচসহ সব সুযোগ-সুবিধা থাকা আবশ্যক। বাংলাদেশে সে রকম ফুটবল একাডেমি কখনো ছিল না। আজও নেই।
তবে এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের (এএফসি) নির্দেশনায় এবার একাডেমি নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে বাফুফে। এএফসি চায়, বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ফুটবল একাডেমিগুলো সেসব দেশের ফেডারেশনের ছাতার নিচে থাকুক। ফেডারেশন একাডেমিগুলোর খোঁজখবর রাখুক। সে লক্ষ্যে বাফুফে এক তারকা, দুই তারকা ও তিন তারকা—এই তিন শ্রেণিতে বাংলাদেশের একাডেমিগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় আনবে। নিবন্ধনে ইচ্ছুক একাডেমিগুলোকে তথ্যপ্রমাণাদিসহ আবেদন করতে হবে বাফুফের কাছে। এই উদ্যোগ হবে এএফসির 'একাডেমি অ্যাক্রেডিটেশন স্কিম'-এর অধীনে, যা হবে অনেকটা এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের ক্লাব লাইসেন্সিংয়ে মতো। ১ জুলাই নিবন্ধনের জন্য একাডেমির নাম চেয়ে বিজ্ঞপ্তি দেবে বাফুফে।
এক তারকা মানে মোটামুটি মানের, দুই তারকা আরেকটু ভালো এবং তিন তারকা বলতে খুবই ভালো একাডেমি বোঝাবে। নিবন্ধনের জন্য একাডেমিতে কতজন ছাত্র আছে, কতজন কোচ আছেন, কোচদের যোগ্যতা কী, প্রশিক্ষণ কীভাবে হয়, মেয়েরাও অনুশীলন করে কি না, অর্থের উৎস, বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব—এ রকম প্রায় ২৫টি বিষয়ে তথ্য জানতে চাইবে বাফুফে।
এশিয়ান ফুটবল ফনফেডারেশন (এএফসি) এটিকে বলছে 'গ্রাসরুট অ্যাকটিভিটিজ' বা তৃণমূল পর্যায়ের কার্যক্রম। এএফসির 'গ্রাসরুট চার্টারের' অধীনে এশিয়ার দেশগুলোকে বলা হয়েছে বিচ্ছিন্নভাবে থাকা একাডেমিগুলোকে একই ছাতার নিচে আনতে। তৃণমূলের ফুটবলটা যদিও ছয়-সাত বছর বয়সীদের থেকে শুরু হয়, কিন্তু বাংলাদেশে ফুটবল কোচিং শুরু হয় ১৪-১৫ বছর বয়স থেকে।
বাফুফের অধীনে এলে একাডেমিগুলো কীভাবে লাভবান হতে পারে, সে সম্পর্কে একটা ধারণা দিলেন বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম, 'শর্ত পূরণ সাপেক্ষে আমাদের যা আছে, সেগুলোকেই শিগগির ফেডারেশনের সঙ্গে একীভূত করা হবে। শুরুতেই হয়তো আর্থিক সহায়তা করা যাবে না। তবে প্রতিবছর কিছু ফুটবল, জার্সি, কোচ দেওয়া যেতে পারে । একাডেমির কোচদের নিয়ে কোচিং কোর্স, সেমিনার করা যায়। একাডেমিগুলোর কার্যক্রম মনিটর করতে পারে বাফুফে। একাডেমি কাপ নামে বছরে একটা টুর্নামেন্টও করা যায়। করা যায় আসলে অনেক কিছুই।'
দেশে ফুটবল একাডেমির সংখ্যা বর্তমানে ১৫০টির মতো। ১২০টির নাম বাফুফেতেই আছে, যার মধ্যে যশোরে শামসুল হুদা একাডেমি বেশ পরিচিত। ঢাকায় কয়েকজন সাবেক ফুটবলার একাডেমি পরিচালনা করেছেন। এখন আর তাঁরা সক্রিয় নন। ধানমন্ডি আবাহনী মাঠে নিজের একাডেমি চালান জাতীয় দলের সাবেক ডিফেন্ডার মাহমুদুল হাসান। করোনাভাইরাসের আগে এই প্রতিবেদককে তিনি বলেছিলেন, 'নবীনদের ফুটবলে উৎসাহ দিতেই এটা করছি আমি। কিন্তু একাডেমি পরিচালনা করা অনেক কষ্টসাধ্য।'
'ক্রিয়েটিভ ফুটবল স্কুল' নামে ঢাকায় একটি কোচিং সেন্টার চালু করেছিলেন কোচ মারুফুল হক, সাইফুল বারীসহ আরও কয়েকজন মিলে। বুয়েট মাঠে অনুশীলন হতো। কিন্তু ২০১১-১৩ সাল পর্যন্ত চালানোর পর বন্ধ হয়ে যায় সেটি। কোচিং সেন্টারের কোচ জুলফিকার মাহমুদ বলেছেন, 'ওখানে সাত-আট বছর থেকে বাচ্চাদের ফুটবল শেখানো হতো। দারুণ এই উদ্যোগে বেশ কিছু খেলোয়াড় তৈরির পথ হয়ে যায়। কিন্তু ক্লাব কোচিংয়ে ঢুকে পড়ায় আমি আর স্কুলটির কোচিংয়ে সময় দিতে পারিনি।' মারুফুলের কণ্ঠেও হতাশা, 'মূলত আর্থিক সংকট আর মাঠ সমস্যার কারণেই স্কুলটি চালু রাখতে পারিনি আমরা। কেউ সহায়তাও করেনি।'
বাংলাদেশে ফুটবল একাডেমি চির-আক্ষেপেরই নাম আসলে। বাফুফের আজ পর্যন্ত নেই নিজস্ব কোনো একাডেমি। অথচ নেপাল-ভুটানের ফুটবল ফেডারেশনেরও একাধিক কার্যকর একাডেমি আছে। ভুটান ২০১৬ সালে বাংলাদেশকে হারিয়েছে একাডেমির সুফল ঘরে তুলেই। ২০১৪ সালে সিলেট বিকেএসপিতে বাফুফে একাডেমি করলেও মাত্র এক বছরের মধ্যেই সেটি বন্ধ হয়ে যায়। এর চার বছর পর ২০১৯ সালে রাজধানীর বাড্ডায় ফর্টিজ গ্রুপে স্থাপনায় ১৬-১৭ বছরের কিছু কিশোর ফুটবলারকে নিয়ে অস্থায়ী একাডেমি চালু করে বাফুফে।
বাফুফে একাডেমি করবে কি না, তা নিয়ে ফেডারেশনের মধ্যই দ্বিধাদ্বন্দ্ব দেখা গেছে অতীতে। বাফুফের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন ২০১৩ সালে বলেছিলেন, দেশে চেলসির মতো একাডেমি তৈরি করবেন। কিন্তু বাফুফের সাবেক টেকনিক্যাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক্যাল পরিচালক পল স্মলি নাকি কাজী সালাউদ্দিনকে বলেছিলেন, বাফুফে কেন একাডেমি করবে? এটা তো ক্লাবের কাজ!
এসব কারণেই আজ পর্যন্ত ভালোভাবে আলোর মুখ দেখেনি বাফুফের নিজস্ব একাডেমি। ক্লাবগুলোও এ ব্যাপারে সক্রিয় নয়। উঠতি ফুটবলারদের সরবরাহসারিটা তাই আজও রুগ্ণই রয়ে গেছে।