>জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার ও বর্তমান বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সহসভাপতি বাদল রায়ের স্ত্রীর এক জিডিতেই তোলপাড় ফুটবল অঙ্গন। গতকাল তো এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে কথাও বলেছেন এক সময়ের মাঠ কাঁপানো ফুটবলার বাদল রায়। বর্তমানের ত্যাগী এই সংগঠক বাফুফেকে দুর্নীতির আখড়া ও সাধারণ সম্পাদককে দুর্নীতির কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন
হঠাৎ উত্তপ্ত দেশের ফুটবল। মাঠের খেলা দিয়ে নয়, মাঠের বাইরের ঘটনাপ্রবাহ দিয়ে। জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সহসভাপতি বাদল রায়ের স্ত্রীর এক জিডিতেই উত্তপ্ত ফুটবল। বাদল রায় নিজেও এক সংবাদ সম্মেলন অভিযোগ তুলেছেন বাফুফে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। বলেছেন, এটি এক দুর্নীতির আখড়া।
বাদল রায়ের স্ত্রী মাধুরী রায় জিডি করেছেন বাফুফে সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগের বিরুদ্ধে। জিডিতে বলা হয়েছে, সোহাগ নাকি মাধুরীকে ফোন করে বলেছেন, বাদল রায় যেন বাফুফেতে না আসেন। আর এলেও যেন এক কাপ চা খেয়ে চলে যান। বাদল রায়ের অসুস্থতাকে ইঙ্গিত করে সোহাগ আরও বলেছেন, ‘উনি অসুস্থ হয়ে পড়লে কে তাঁকে অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে ঘোরাঘুরি করবে!’ বাদল রায়ের স্ত্রী জানিয়েছেন, সোহাগের কথাবার্তাকে তাঁর স্বামীর জীবনের প্রতি হুমকি হিসেবে ধরেই তিনি থানায় জিডি করেছেন।
সাবেক মোহামেডান তারকা বাদল রায় পুরো বিষয়টিরই ব্যাখ্যা দিয়েছেন গতকাল আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে। বাফুফেকে দুর্নীতির আখড়া বলে বাদল অভিযোগ তুলেছেন, পৃষ্ঠপোষকদের টাকার নয়ছয় হওয়া নিয়ে, ‘বাফুফে একটি দুর্নীতির আখড়া। স্পনসরদের মাধ্যমে অনেক টাকা আসে কিন্তু কখনোই তা সঠিকভাবে ব্যবহৃত হয় না।’
বাংলাদেশের ফুটবলের অন্যতম সেরা এই তারকার অভিযোগের তির বাফুফে সাধারণ সম্পাদকের দিকে, ‘সাধারণ সম্পাদকের কাজ হচ্ছে সবকিছু সমন্বয় করা, নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করা। অথচ সে সব সময় লুকোচুরি করে। নির্বাহী কমিটির সদস্যরা কোনো পাত্তাই পায় না তাঁর কাছে।’
বাদল তিনবারের বাফুফের নির্বাচিত সহসভাপতি ও বর্তমানে ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান। অথচ ফুটবল উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তৃণমূলে কাজ করা, এ বিষয়ে কথা বললে সোহাগ নাকি তাঁকে পাত্তাই দিতে চান না। বয়সভিত্তিক ফুটবল নিয়েও নাকি সোহাগ তাঁকে কখনোই ঠিকমতো সহযোগিতা করেননি, ‘ডেভেলপমেন্ট কমিটির কাজের জন্য অর্থ চাইলে সোহাগ বলত, ফিফা-এএফসির টাকা সব আসেনি। জিজ্ঞাসা করি, ব্যাংক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের ১৫ কোটি টাকা গেল কোথায়? বলে বিভিন্ন খাতে খরচ হয়েছে। কিন্তু কোনো সঠিক হিসাব দেয় না। বোর্ডকে (কমিটি) সে পাত্তাই দেয় না। আমি মাঝেমধ্যে রেগে যাই। ফিফার কাছ থেকে টাকা এসেছে অথচ ডেভেলপমেন্ট কমিটি কাজ করতে পারবে না। এ নিয়ে একদিন বাদানুবাদও হয়েছে তার সঙ্গে আমার।’
অনেক দিন ধরে ফুটবলের সঙ্গে আছেন। ফেডারেশনের স্টাফরা তাঁর খুব কাছের। কিন্তু তিনি ভেবে পান না স্টাফরা যেখানে নিয়মিত বেতন পান না, সেখানে সাধারণ সম্পাদকের বেতন কীভাবে হু হু করে বাড়ে, ‘সব সময় শুনি টাকা নাই, ফিফা-এএফসির টাকা আসেনি। অথচ সোহাগের বেতন বেড়েছে এক লাখ টাকা। আর যাঁরা পিয়ন, যাঁরা ঠিকমতো খেতে পারে না, তাঁরা বেতন পান না।’
শুধু সোহাগ নন, বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনকেও কাঠগড়ায় তুলেছেন তিনি। সোহাগের কথার জের ধরে জিডি করার আগেই তাঁর স্ত্রী নাকি সালাউদ্দিনের সঙ্গে কথা বলেছিলেন, উল্টো কটু কথাই শুনতে হয়েছে তাঁকে, ‘সালাউদ্দিন ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেছে আমার স্ত্রী। কথা বলে সে সদুত্তর পায়নি। বরং সালাউদ্দিন ভাই বলেছেন, আমি নাকি সবাইকে উসকে দিই। অন্য বোর্ড মেম্বারদের ও জেলার সংগঠকদের নাকি আমি উসকে দিই। অথচ এটা আমার স্বভাবে নেই। আরও বলেছেন, আমি নাকি ওনার পায়ে ধরেছি। আমার পক্ষে কেউ নেই এবং সালাউদ্দিন ভাই আমার বিরুদ্ধে মামলা করবেন। এরপরই আমার স্ত্রী জিডি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
ফুটবল নিয়ে আক্ষেপ তাঁর সব সময়ই। বড় বড় সাবেক ফুটবলার ফেডারেশনে থাকা সত্ত্বেও ফুটবলের এই অধঃপতন পীড়া দেয় তাঁকে, ‘আমাদের মতো ফুটবলাররা ফেডারেশনে থাকার পরেও ফুটবলের এই অবস্থা, খুব পীড়া দেয় আমাকে। খুবই মানসিক কষ্টে ভুগি।’