>ভিয়েতনাম নিয়ে ভয় ছিল। কিন্তু বাংলাদেশের মেয়েরা সেই ভয়ের বাধা পার হলো ২-০ গোলের জয় দিয়েই। এই জয়ে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ বাছাইপর্বে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে পৌঁছে গেল বাংলাদেশের মেয়েরা।
‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’—প্রকম্পিত গর্জন। গ্যালারিতে লাল-সবুজ পতাকা। এএফসি অনূর্ধ্ব ১৬ বাছাইপর্বের অলিখিত ফাইনাল ম্যাচে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহি মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে দেখা গেল এমন দৃশ্য। দর্শকদের সমর্থনের জবাবটা ভালোই দিয়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা। ভিয়েতনামকে ২-০ গোলে হারিয়ে বাছাইপর্বের ‘এফ’ গ্রুপে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়ে দ্বিতীয় পর্বে পা রেখেছে বাংলাদেশ। একটি করে গোল করেছে ফরোয়ার্ড তহুরা খাতুন ও ডিফেন্ডার আঁখি খাতুন।
আজকের ম্যাচের আগে টানা তিন জয়ে দু দলের পয়েন্টই ছিল সমান নয়। কোনো গোল না খেয়ে দুই দলই গোল করেছে সমান ২৫টি। ফলে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে দ্বিতীয় পর্বে পা রাখতে দুই দলের প্রয়োজন-ই ছিল জয়।ম্যাচটিকে তাই ধরা হয়েছিল সেয়ানে সেয়ানে লড়াই। কিন্তু কিসের কি। বাংলাদেশের কাছে পাত্তাই পায়নি ভিয়েতনামের মেয়েরা।
স্কোর লাইনটা বোঝাতে পারছে না ম্যাচে তহুরা খাতুনদের দাপট। বলের দখলে অনেক এগিয়ে ছিল তারা। বাংলাদেশকে ঠেকাতে ভিয়েতনাম দল বেশ অঙ্ক কষে মাঠে নামলেও শেষ রক্ষা হয়নি। বাংলাদেশের মেরুদণ্ড দুই মিডফিল্ডার অধিনায়ক মারিয়া মান্ডা ও মনিকা চাকমাকে কড়া ম্যান মার্কিয়ে রেখে কিছুটা সফলতা অবশ্য তারা দেখিয়েছে। সে কারণেই তাই মাঝমাঠ থেকে খুব বেশি পাস বাংলাদেশের মেয়েরা আজ বাড়াতে পারেনি।
তবুও অদম্য বাংলাদেশকে থামানো যায়নি। ৩৭ মিনিটে শামসুন্নাহার জুনিয়র বাংলাদেশকে এগিয়ে দিয়েছিল কিন্তু কিছুক্ষণ কালক্ষেপণ করে অফসাইডের কারণে সে গোল বাতিল করে দেন রেফারি। অবাক করা বিষয় হলো সহকারী রেফারি অফসাইডের জন্য পতাকা না তুললেও রেফারি সহকারী রেফারির সঙ্গে আলোচনা করে গোলটি বাতিল করেন।
গোল বাতিল হওয়ায় কিছুটা মুষড়ে পড়েছিল তহুরারা। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন মেয়েরা বরাবরই ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ৪৫ মিনিটে তহুরার গোলে এগিয়ে যায় স্বাগতিকেরা। ডানপ্রান্ত থেকে আনাই মগিনির ক্রস ভিয়েতনাম গোলরক্ষক গ্রিপে নিতে ব্যর্থ হলে জটলার মধ্যে থেকে শামসুন্নাহার জুনিয়রের টোকায় মাথা ছুঁইয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে দেয় তহুরা।
বাংলাদেশ দ্বিতীয় গোল পায় ৬২ মিনিটে। অধিনায়ক মারিয়া মান্দার কর্নার থেকে হেড নিয়েছিল শামসুন্নাহার জুনিয়র। সাইড পোস্টে লেগে ফিরে আসলে জটলার মধ্যে থেকে ডান পায়ে আঁখি প্লেসিং করে গোলরক্ষক ঠেকিয়ে দেয় । ফিরতি বলে বাম পায়ে জালে জড়িয়ে দেয় দীর্ঘদেহী এই ডিফেন্ডার।
বাছাইপর্বের আগের তিন ম্যাচে এক গোলও হজম করেনি লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। আজ অলিখিত ফাইনালে বাংলাদেশের রক্ষণ দেয়াল ভাঙার পরিস্থিতিও সৃষ্টি করতে পারেনি ভিয়েতনাম। তবে বাংলাদেশের গোলরক্ষক রুপনা চাকমাকে সময়মতো পোস্ট ছেড়ে বের হয়ে এসে কয়েকটা বল ক্লিয়ার করতে হয়েছে। এই তো !
এর আগে ২০১৬ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাছাইপর্বে চ্যাম্পিয়ন হয়েই চূড়ান্তপর্বে নাম লিখিয়েছিল বাংলাদেশ। গতবারের চেয়ে এবার দলসংখ্যা বেড়েছে বাছাইপর্বে। তাই গত আসরের মতো গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হলেই চূড়ান্ত পর্বে যাওয়ার সুযোগ থাকছে না। ছয় গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন এবং সেরা দুই রানার্সআপ দলকে খেলতে হবে দ্বিতীয় রাউন্ডে।
আগামী বছরের ফেব্রয়ারিতে অনুষ্ঠিত হবে চূড়ান্ত পর্বে যাওয়ার লড়াই। সে টুর্নামেন্টের ভেন্যু এখনো ঠিক হয়নি।