ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গে ম্যারাডোনা ও তাঁর বান্ধবী মাভিস
ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গে ম্যারাডোনা ও তাঁর বান্ধবী মাভিস

বাক্সে লুকিয়ে নারী পাচার করতে চেয়েছিলেন ম্যারাডোনা

অপ্রাপ্তবয়স্ক একজনকে অন্য দেশে নেওয়ার জন্য তাঁর পরিবারের অনুমতি নিতে হয়। ১৭ বছর বয়সী মাভিস আলভারেজকে তাই আর্জেন্টিনায় নেওয়ার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করতে হয়েছিল ৪০ বছর বয়সী ম্যারাডোনাকে।

মাভিস আলভারেজ বোমা ফাটিয়েছেন বললেও কম বলা হয়। মানব পাচারসংক্রান্ত এক মামলায় সাক্ষ্য দিতে বুয়েনস এইরেসে এসেছেন এই কিউবান নারী। তাঁর সঙ্গে ঘটা ভয়ংকর সব ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। বলেছেন কীভাবে হাভানায় অপ্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় তাঁকে ধর্ষণ করেছিলেন ডিয়েগো ম্যারাডোনা। কীভাবে তাঁকে কিউবা থেকে আর্জেন্টিনায় নিয়ে গিয়েছিলেন আর্জেন্টাইন ফুটবল কিংবদন্তি।

অপ্রাপ্তবয়স্ক একজনকে অন্য দেশে নেওয়ার জন্য তাঁর পরিবারের অনুমতি নিতে হয়। ১৭ বছর বয়সী মাভিস আলভারেজকে তাই আর্জেন্টিনায় নেওয়ার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করতে হয়েছিল ৪০ বছর বয়সী ম্যারাডোনাকে। কিউবান কিশোরীকে বাক্সে ভরে আর্জেন্টিনায় নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন।

ম্যারাডোনা ও মাভিস

আর্জেন্টাইন সংবাদমাধ্যম ইনফোবের সঙ্গে দীর্ঘ এক সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামিতে থাকা মাভিস আলভারেজ। সেখানে ম্যারাডোনার সঙ্গে কীভাবে তাঁর সম্পর্ক হয়েছিল, কীভাবে ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন, কীভাবে ম্যারাডোনা তাঁকে মাদকাসক্ত করেছিলেন, কীভাবে মারধর করতেন ম্যারাডোনা—উঠে এসেছে সবই। আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি অপ্রাপ্তবয়স্ক মাভিসকে কৃত্রিম স্তন প্রতিস্থাপনেও বাধ্য করেছিলেন। কিউবা থেকে আর্জেন্টিনায় কীভাবে গিয়েছিলেন, সে বর্ণনায় উঠে এসেছে আরও কিছু ভয়ংকর দিক। প্রথম আলোর পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারের ওই অংশ সরাসরি তুলে ধরা হলো...

২০০১ সালের অক্টোবরে বিদায়ী শ্রদ্ধাঞ্জলি ম্যাচের (ম্যারাডোনার জন্য আয়োজিত আর্জেন্টিনা বনাম বিশ্ব একাদশ ম্যাচ) জন্য ম্যারাডোনা ও তাঁর আশপাশের লোকজন আর্জেন্টিনায় ফেরার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন। কিন্তু ডিয়েগো একটা শর্ত জুড়ে দেন, মাভিসকে তাঁর সঙ্গে যেতেই হবে। একজন কিউবান নাগরিক, বিশেষ করে অপ্রাপ্তবয়স্ক একজনকে সে সময় দেশ ছাড়তে হলে কাস্ত্রো সরকারের বিশেষ অনুমতি নিতে হতো। মাভিস আলভারেজকে নিয়েই ফিদেল কাস্ত্রোর অনুমতি নিতে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ম্যারাডোনা।

মানব পাচার মামলায় সাক্ষ্য দিতে এখন আর্জেন্টিনায় মাভিস
প্রশ্ন

ইনফোবে: অপ্রাপ্তবয়স্ক হয়েও আপনি কীভাবে কিউবা থেকে আর্জেন্টিনায় এসেছিলেন, সেটা একটু ব্যাখ্যা করে বলবেন? কে এর অনুমতি দিয়েছিল? কীভাবে ঘটেছিল? কে মধ্যস্থতা করেছিল? অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরও কেন একা (অভিভাবক ছাড়া) যেতে দেওয়া হলো?

মাভিস: ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম আমি আর ডিয়েগো, কারণ এর আগে আমাকে একটা বাক্সে ভরে আর্জেন্টিনায় নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন।

প্রশ্ন

ইনফোবে: একটা বাক্সে?

মাভিস: একটা বাক্সে। আমি সে বাক্স পরীক্ষা করেও দেখেছি। মানে, আমি সে বাক্সে ঢুকেছি। ওমর সুয়ারেজ (ম্যারাডোনার এক সঙ্গী) সেখানে ছিল। সে এর মধ্যেই এ ব্যাপারে (আর্জেন্টিনার বিচার বিভাগে চলা মামলায়) সাক্ষ্য দিয়েছে। সে আমাকে সেই বাক্স পরখ করতে বলেছিল। সে জানিয়েছিল, সেই বাক্সে কিছু গর্ত করবে। বক্সে একটা লুকানো কোটর সৃষ্টি করবে এবং আমি নিচের কোটরে থাকবে, ফলে কেউ (ইমিগ্রেশন) বুঝতে পারবে না। নিচে কী আছে, সেটা যেন ধরতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে ওপরেও কিছু একটা দিতে হবে।

কাস্ত্রো ও ম্যারাডোনার সঙে তোলা সে ছবি দেখাচ্ছেন মাভিস
প্রশ্ন

ইনফোবে: দুঃখিত, আমি পুরোপুরি বুঝতে পারছি না। একটা বাক্স, কীভাবে একটা বাক্সে (মানুষ নেওয়া যায়)?

মাভিস: ওই যে যেসব বাক্সে আপনি বল, র‍্যাক রাখেন। সংগীতশিল্পীরা যেসব বাক্স ব্যবহার করেন। ওই বাক্স বিমানের মালামালের মধ্যে রাখা হতো। এভাবেই আমাকে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল।

প্রশ্ন

ইনফোবে: কার মাথা থেকে এ বুদ্ধি এসেছিল?

মাভিস: ডিয়েগোই এটা ভেবেছিলেন। পরে তারা বলল, একবার ফিদেলের সঙ্গে দেখা করে আসা যাক। আমরা গেলাম এবং তিনি আসার আগপর্যন্ত লিভিংরুমে অপেক্ষা করলাম। ফিদেল ডান দিকে বসলেন আর ডিয়েগো বাঁ দিকে বসলেন। এরপর ফিদেল জিজ্ঞাসা করলেন, এই সুন্দরী মেয়েকে কোত্থেকে পেলে তুমি? আমার ব্যাপারে কথা বলতে শুরু করলেন এবং আমার হাতে হাত রাখলেন। ডিয়েগো বলে উঠলেন, আমরা তাহলে গেলাম এবং তাঁর (কাস্ত্রোর) হাত সরিয়ে দিলেন।

ম্যারাডোনা ও তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে মাভিস
প্রশ্ন

ইনফোবে: ফিদেল কাস্ত্রো কি বুঝতে পেরেছিলেন, ওই সময় আপনি অপ্রাপ্তবয়স্ক ছিলেন?

মাভিস: অবশ্যই, আমার চেহারাতেই তো বোঝা যায়। আর ফিদেল কাস্ত্রো নিজেই আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। তাঁর কাছে এটা খুব স্বাভাবিক মনে হচ্ছিল! সেদিন তাঁরা ফুটবল নিয়ে কথা বলেছেন, আমার স্কুল, আমার পড়াশোনা, আমি কী নিয়ে পড়াশোনা করতে চাই, তা জিজ্ঞাসা করেছিলেন কাস্ত্রো। আমি বলেছিলাম, কী নিয়ে পড়ব, এখনো ঠিক করিনি।

প্রশ্ন

ইনফোবে: কিন্তু আপনাকে তিনি যখন এ প্রশ্নগুলো করছিলেন, তাতে আপনি যে অপ্রাপ্তবয়স্ক, সেটা বোঝার কথা।

মাভিস: হ্যাঁ, আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, আমি স্কুলের কোন ক্লাসে পড়ি। আমি তাঁকে বলেছি, দশম গ্রেডে পড়ছি।

সাক্ষাৎকারে সব খুলে বলেছেন মাভিস
প্রশ্ন

ইনফোবে: অর্থাৎ ফিদেল কাস্ত্রো জানতেন, ম্যারাডোনা অপ্রাপ্তবয়স্ক এক মেয়ের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছেন।

মাভিস: হ্যাঁ, এটা সত্যি।

প্রশ্ন

ইনফোবে: আপনি যেন যেতে পারেন, ম্যারাডোনা কি এর অনুমতির ব্যবস্থা করেছিলেন? নাকি আপনি তাঁকে বলেছিলেন ব্যবস্থা নিতে, যাতে আপনি আর্জেন্টিনায় যেতে পারেন? নির্দিষ্ট করে বললে আপনি তাঁকে কী করতে বলেছিলেন?

মাভিস: ম্যারাডোনা একটি বাড়ি কেনার কথা বলছিলেন। আমাকে রুম থেকে চলে যেতে বলেছিলেন, কিন্তু আমার পরিষ্কার মনে আছে, তিনি কী জিজ্ঞাসা করতে চাইছিলেন। কিউবাতে তাঁর কাছে একটা বাড়ি বিক্রি করতে বলেছিলেন ম্যারাডোনা এবং আমাকে তাঁর সঙ্গে যাওয়ার অনুমতি চেয়েছিলেন। কাস্ত্রো ম্যারাডোনাকে বলেছেন, তিনি দুটিরই অনুমোদন দেবেন। তবে বাড়ি বিক্রি করবেন না, এমনিতে উপহার দেবেন। আমাকে দেশের বাইরে নেওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন। আর কোনো কিছুই দরকার হয়নি। আমার মায়ের অনুমতি, স্বাক্ষর কিংবা আমার বাবার অনুমতি—কিছুই দরকার হয়নি।