তুর্কমেনিস্তানকে চমকে দিতে চায় বাংলাদেশ
তুর্কমেনিস্তানকে চমকে দিতে চায় বাংলাদেশ

এশিয়ান কাপ বাছাই

বাংলাদেশ চমকে দিতে চায় তুর্কমেনিস্তানকে

ছবির মতো সাজানো গোছানো কুয়ালালামপুরের পিকেএনএস স্পোর্টস কমপ্লেক্স। দেখলেই মন ভরে যাবে যে কারও। বিশাল মাঠে ছোট, বড়, মিনি—নানা ধরনের গোলপোস্ট।

আজ বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল ১১টায় এ মাঠে এসে শুরুতে মিনি গোলপোস্টে বল পাঠানোর অনুশীলন শুরু করল বাংলাদেশ।

অবশ্যই তুর্কমেনিস্তান ম্যাচে গোল করার লক্ষ্যেই এ অনুশীলন। এ জায়গাতেই যে বিস্তর দুর্বলতা বাংলাদেশের। বাংলাদেশ গোল করতে পারে না। গতকাল এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে দিনের অন্য ম্যাচে তুর্কমেনিস্তানকে ৩-১ গোলে হারিয়েছে স্বাগতিক মালয়েশিয়া। বাংলাদেশের লক্ষ্য এখন তাদের বিপক্ষেই গোল আদায় করা। কিন্তু শক্তিতে এগিয়ে থাকা দলের সঙ্গে রক্ষণ নিয়েই আগে ভাবতে হয়। ফলে আক্রমণ আর সেভাবে গড়া হয়ে ওঠে না। অন্তত অতীত অভিজ্ঞতা তেমনই বলছে।

আজ কুয়ালালামপুরে ফুরফুরে মেজাজেই ছিল বাংলাদেশ

যেমন বাহরাইনের বিপক্ষে গতকাল মাঠে নামার আগে বাংলাদেশ দলের ফুটবলারদের মনে গেঁথে দেওয়া হয়, ‘আগে রক্ষণ, তারপর সুযোগ পেলে দ্রুত চলে যাও আক্রমণে।’ বাংলাদেশ প্রথমার্ধে তা পারেনি, তবে দ্বিতীয়ার্ধে অনেকটাই পেরেছে। আর পেরেছে বলেই প্রথমার্ধে ২ গোল খাওয়া বাংলাদেশ দ্বিতীয়ার্ধে আর কোনো গোল হজম করেনি। এই অর্ধে বাংলাদেশের খেলাও তুলনামূলক ভালো হয়েছে। সেই আত্মতৃপ্তি নিয়ে গত রাতে ঘুমাতে যান ফুটবলাররা।

আজ সকালবেলাতেই কোচ তাঁদের নিয়ে ছোটেন অনুশীলন মাঠে। ম্যাচের পরদিন অনুশীলন সাধারণত হালকা মেজাজে হয়। যেটাকে রিকভারি সেশন বলে। আজও তা–ই হলো এবং এই অনুশীলন পর্বে সবচেয়ে নজর কেড়েছে ফুটবলারদের ফুরফুরে মেজাজ। দলের মধ্যে একটা আত্মবিশ্বাস জম্মেছে যে নিচে নেমে রক্ষণ বা ‘লো ব্লক’ করে প্রতিপক্ষকে আটকানোর পাশাপাশি নিজেরা বল পায়ে রাখতে পারলে গোল করাও সম্ভব।

তুর্কমেনিস্তানের সঙ্গে খেলা শনিবার

কাল ম্যাচ খেলা ফুটবলাররা আলাদাভাবে ফিটনেস পর্বটা করলেন। সেই অনুশীলন করতে করতে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার আতিকুর রহমান এই প্রতিবেদককে বললেন, ‘দেখুন, বাহরাইন কিন্তু আমাদের বিপক্ষে দুটি গোল করেছে সেট পিস থেকে, ওপেন প্লে থেকে নয়। আমরা হয়তো আরও সতর্ক থাকলে গোল দুটি খেতাম না। আমরা এখন বিশ্বাস করছি, রক্ষণ কাজটা আরও ভালোভাবে করতে পারলে গোল খাব না।’

র‍্যাঙ্কিংয়ে প্রায় ১০০ ধাপ এগিয়ে থাকা বাহরাইনের কাছে হারলেও বাংলাদেশে প্রাপ্তি অনেক। প্রথম প্রাপ্তি অবশ্যই নিজেদের ওপর বিশ্বাস তৈরি করে যে হারের আগে হার নয়। মনোবল দৃঢ় রেখে কোচের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারলে ভালো কিছু হতেও পারে। যেমন ১ জুন ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে প্রীতি ম্যাচে বাংলাদেশ গোলশূন্য ড্র করতে পেরেছে। বাহরাইনের মতো দলের সঙ্গে আর যা–ই হোক অহসায় আত্মসমর্পণ করেনি।

এর পেছনে ডিফেন্ডারদের কৃতিত্ব অনেক। তাঁরা সাধ্যমতো নিজেদের সেরাটা দিয়েছেন মাঠে। অন্যতম ডিফেন্ডার ইয়াছিন আরাফাত মুখিয়ে আছেন আরও ভালো কিছু করতে। আজ অনুশীলন শেষে নারায়ণগঞ্জের এই তরুণ ফুটবলার যেমন বলেন, ‘পরবর্তী ম্যাচের জন্য আমরা তৈরি হচ্ছি। এমনিতে গত ম্যাচে আমরা রক্ষণে জমাট ছিলাম। কিন্তু সেট পিসে দুটি গোল খেতে হয়েছে। আসলে কী আর করা, কিছু করার নেই।’

ইয়াছিন যোগ করেন, ‘আমি মনে করি, বাহরাইনের সঙ্গে যেমন খেলেছি আমরা, এর চেয়ে ভালো খেলতে হবে তুর্কমেনিস্তানের সঙ্গে। আমাদের অবশ্যই আরও ভালো করতে হবে। সেই সামর্থ্য আমাদের আছে।’

কোচ হাভিয়ের কাবরেরা ইতিবাচক হিসেবেই নিয়েছেন বাহরাইনের বিপক্ষে ফুটবলারদের পারফরম্যান্স। তবে পরিকল্পনামতো প্রথমার্ধে খেলতে না পারায় আক্ষেপও আছে তাঁর। বললেন, ‘প্রথমার্ধটা আমাদের ভালো যায়নি। আমরা কিছু ভুল করেছি, ফলে ওরা আমাদের ওপর চড়াও হয়েছে।’

তুর্কমেনিস্তানের বিপক্ষে গোল করতে চায় বাংলাদেশ

কোচের কথার সূত্র ধরে ডিফেন্ডার ইয়াছিন যোগ করেন, ‘দ্বিতীয়ার্ধে আমরা যেমন কন্ট্রোল করেছিলাম (আসলে কন্ট্রোল নয়, দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশের বল পজিশন থেকে শুরু করে সবকিছুই ভালো ছিল, এই যা), প্রথমার্ধে সেটা করতে পারলে পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারত।’

এই বিশ্বাস দলের সবার মধ্যেই। অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া থেকে শুরু করে গোলকিপার কোচ বিপ্লব ভট্টাচার্য, সবার মনেই এই বিশ্বাস যে আরেকটু ভালো করা সম্ভব।

মালয়েশিয়া-তুর্কমেনিস্তান ম্যাচ টিভিতে দেখেছেন ফুটবলাররা। দেখে তাঁদের মনে হয়েছে, আগেই হেরে যাওয়ার কিছু নেই। স্টপার ব্যাক টুটুল হোসেন বলেন, ‘আমি মনে করি, বাহরাইনের সঙ্গে সবাই অনেক ভালো খেলেছে। সবাই সবার জায়গা থেকে শতভাগ দেওয়ার চেষ্টা করেছে। সমস্যা হয়েছে, প্রথমার্ধে বল ধরে রাখতে পারনি আমরা, দ্বিতীয়ার্ধে যেটা পেরেছি। তাই কোচরা সন্তুষ্ট আছে। তুর্কমেনিস্তানের সঙ্গে চেষ্টা করলে আরও ভালো করতে পারব।’

এই আত্মবিশ্বাস নিয়েই ১১ জুন তুর্কমেনিস্তান ম্যাচের ছক কষা শুরু করেছেন কোচ কাবরেরা। আর সেদিন শুধু রক্ষণ নয়, আক্রমণেও নজর বাংলাদেশের। সহকারী কোচ হাসান আল মামুনের কথায়, ‘শুধু রক্ষণ নয়, আক্রমণেও যাব আমরা। চাইব মিডফিল্ডাররা যেন আক্রমণে ওঠে। আমরা প্রতিপক্ষকে চমকে দেব। এক পাশ দিয়ে যখন খেলছি, আরেক পাশ দিয়ে দ্রুত সুইচ করে আক্রমণ করব। তুর্কমেনিস্তান ম্যাচে এটাই আমাদের লক্ষ্য।’

হাসান আল মামুনের কথা শুনে নড়েচড়ে বসতে পারেন বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীরা। তুর্কমেনিস্তানকে চমকে দেওয়ার যে কথা তিনি আজ অনুশীলন শেষে বলেছেন, জামাল ভূঁইয়াদেরও এটি মনের কথা।