হোটেল লবিতে বসে কথা বলা শেষ করে উঠে যাওয়ার সময় জিজ্ঞেস করলেন, ‘হোয়ার ইজ আলফাজ?’ আলফাজ ঢাকাতেই থাকেন এবং ঐতিহ্যবাহী মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের সহকারী কোচের দায়িত্বে আছেন। এই প্রতিবেদকের মুখে কথাটা শুনে বললেন, ‘ ওকে, ওকে।’
তাঁকে জানানো হলো, ২০০১ সালে মঙ্গোলিয়ার বিপক্ষে খেলা বাংলাদেশের সেই দুটি ম্যাচের তিন ফুটবলার ইকবাল হোসেন, হাসান আল মামুন এবং বিপ্লব ভট্টাচার্য এখন বাং দলের সঙ্গে আছেন ভিন্ন ভিন্ন দায়িত্বে। বুমান উচরাল শুনে খুশিই হলেন মনে হলো, ‘ও, তাই নাকি?
বলতে বলতেই তিনি হোটেল রুমে চলে গেলেন। একটু পরই দল নিয়ে যাবেন সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে। বিকেল সাড়ে পাঁচটায় বাংলাদেশের সঙ্গে ফিফা প্রীতি ম্যাচ। তার আগে হোটেলে মধ্যাহ্নভোজ শেষে কথা বললেন জনা তিনেক সাংবাদিকের সঙ্গে। সেখানেই উঠে এল ২০০১ সালের সেই ম্যাচ দুটির প্রসঙ্গে।
মঙ্গোলিয়ান ফুটবলের মহানায়ক তিনি। ২০০১ সালে সৌদি আরবে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ফিরতি ম্যাচে বাংলাদেশের সঙ্গে মঙ্গোলিয়া ২–২ গোলে ড্র করেছিল তাঁর গোলেই। যোগ করা চার মিনিট সময়ে শেষ কয়েক সেকেন্ড আগে বাংলাদেশের জালে বল পাঠান এই উচরাল, দলের অধিনায়কও ছিলেন তিনি।
ওই ম্যাচে বাংলাদেশের গোল দুটি আসে ডিফেন্ডার মোহাম্মদ সুজনের পায় থেকে। এর একটি ছিল পেনাল্টিতে। প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের ৩–০ গোলের জয়ে দুটি গোল আলফাজের। সেই সূত্র ধরেই আলফাজ আর সুজনের কথা আজ আলাদাভাবে জানতে চাইলেন উচরাল।
গতকাল সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে সংবাদ সম্মেলনে মঙ্গোলিয়ার অধিনায়ক বলেছিলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সেই ২–২ ড্র ম্যাচে মঙ্গোলিয়ার সমাসূচক গোলদাতা বর্তমানে মঙ্গোলিয়া ফুটবল ফেডারেশনের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর। দলকে উজ্জ্বীবিত করতে তিনি সিলেটেও এসেছেন।
আজ তাঁর সঙ্গে কথা হলো। স্বাভাবিকভাবেই কথপোকথনের প্রথমেই চলে এসেছে ২১ বছর আগে বাংলাদেশের বিপক্ষে তাঁর সেই গোলের স্মৃতি। উচরাল নড়চড়ে বসে খুলে বসেন স্মৃতির ঢালি, ‘ওই, সেটি ছিল আমাদের প্রথম বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব। সৌদি আরব, ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশ ছিল আমাদের গ্রুপে। ৬ ম্যাচের প্রথম ৫টিই হেরেছিলাম আমরা। শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে আমরা একটি পয়েন্টের জন্য মরিয়া ছিলাম। আমরা প্রথমে গোল করি। দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশ দুটি গোল করে। আমরা অনেক সুযোগ তৈরি করে গোল পাচ্ছিলাম। অবশেষে ৯৪ মিনিটে আমি গোল করি, ম্যাচ ২–২।’
সেই গোলটির কথা কখনো ভুলবেন না উচরাল। ম্যাচের পর ড্রেসিং রুমের অবস্থা আনন্দমুখর ছিল জানিয়ে মঙ্গোলিয়ার ফুটবলে মহাতারকা পেছনে ফেরেন, ‘আমি তখন ১০ নম্বর জার্সি পরে খেলি সেন্ট্রাল মিডফিল্ডে। মনে আছে বক্সের ভেতর থেকে ভলিতে গোলটা করেছিলাম। আমার গোলের পরই বাজে শেষ বাঁশি। সেটি ছিল আমার অষ্টম আন্তর্জাতিক গোল। এরপর আর একটি গোল করেছিলাম আন্তর্জাতিক ম্যাচে।’
বাংলাদেশের চেয়ে মঙ্গোলিয়া তখন ৪৩ ধাপ পেছনে। এত এগিয়ে থাকা দলের সঙ্গে ড্রয়ের অনুভূতিটা কেমন ছিল? উচরালের চোখমুখ চিকচিক করে উঠল উত্তর দিতে গিয়ে, ‘তখন মনে হয়েছিল আমরা চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেছি ( হা হা)। দিনটি ছিল ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০০১। সেই থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারি দিনটাকে আমরা আমাদের ‘‘ন্যাশনাল টিম ডে’’ হিসেবে পালন করি। কারণ সেটিই ছিল আন্তর্জাতিক ম্যাচে আমাদের প্রথম পয়েন্ট অর্জন। তাই দিনটার ভিন্ন মর্যাদা আছে আমাদের কাছে।’
দেশে ফেরার পর সমর্থকরদের বিপুল অভিনন্দন পেয়েছিলেন। সরকার কোনো পুরস্কার দিয়েছে কি না জানতে চাইলে উত্তর, ’না., না, তেমন কিছু পাইনি।’
সেই এক ড্রয়েই মঙ্গোলিয়ার ফুটবলে কিছু পরিবর্তন আসে। ‘রেসলিংয়ে র দেশে’ অনেক কিশোর ফুটবল খেলতে শুরু করে। মঙ্গোলিয়ার বর্তমান অধিনায়ক তখন ১১ বছরের কিশোর। বাংলাদেশের সঙ্গে সেই ড্র দেখে তিনি তখন ফুটবলের প্রেমে পড়েন। কথাটা কাল বলেছেন সংবাদ সম্মেলেন।
১৯৯৮ সালে ফিফার পূর্ণ সদস্য পদ পাওয়া মঙ্গোলিয়ার ফুটবল এখন কেমন চলছে? উচরালের মুখে আশার সঙ্গে হতাশার সুরও, ‘ আমাদের দেশে জনসংখ্যা মাত্র ৩৬ লাখ। তারওপর তুষারপাত হয় বছরের একটা লম্বা সময়। তীব্র শীতের সময় আমরা ইনডোর ফুটবলে চলে যাই। ফাইভ এ সাইড ফুটসাল খেলি। নভেম্বর থেকে মার্চ তীব্র তুষারপাতের কারণে আমরা ফুটবল বন্ধ রাখি। আবহাওয়াগত কারণে আমরা কৃত্রিম ঘাসের মাঠে খেলি। আমাদের কোনো ঘাসের মাঠও নেই। তবু আমরা ছোট থেকে শিশুদের ফুটবলের প্রতি আকৃষ্ট করতে বেশ কিছু উদ্যেগ নিয়েছি।’
উচরাল করেন মঙ্গোলিয়ার চেয়ে বাংলাদেশের ফুটবল এগিয়ে। কিন্তু ফিফা র্যাংকিং দেখে নাকি তিনি অবাক। সেটাই বলছিলেন কথায় কথায়, ‘এখানে আসার আগে আমি ফিফা র্যাংকিং দেখে অবাক হয়েছি। বাংলাদেশ দল আমাদের চেয়েও র্যাংকিংয়ে পিছিয়ে ( বাংলাদেশ ১৮৬, মঙ্গোলিয়া ১৮৪)। অথচ বাংলাদেশের ফুটবলীয় অবস্থান ও অবকাঠামো আমাদের চেয়ে অনেক ভালো। এমন র্যাংকিং কীভাবে আমি আসলে বুঝতে পারছি না।’
তবে আজ মাঠের লড়াইয়ে বাংলাদেশকে হারাতে চায় মঙ্গোলিয়া। ওদিকে বাংলাদেশ জিততে মরিয়া। মালদ্বীপের বিপক্ষে খেলা একাদশ থেকে আজ একটি বদল এনেছেন বাংলাদেশ কোচ হাভিয়ে কাবরেরা। ডিফেন্ডার বিশ্বনাথ ঘোষের জায়গায় এসেছেন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার আতিকুর রহমান ফাহাদ।
বাংলাদেশের প্রথম একাদশ: আনিসুর, ইয়াসিন আরাফাত, তারিক কাজী, টুটুল হোসেন, আতিকুর রহমান, জামাল ভূঁইয়া, সোহেল রানা, রাকিব হোসেন, বিপলু আহমেদ, নাবিব নেওয়াজ ও সুমন রেজা।