>মঙ্গোলিয়াকে ৩-০ গোলে হারিয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ বঙ্গমাতা আন্তর্জাতিক গোল্ডকাপের ফাইনালে বাংলাদেশ। দুর্দান্ত গোল করে ও করিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছেন মণিকা চাকমা। নিচে দেখুন তাঁর গোলটি।
‘গোলটা কি বাংলাদেশের কোনো ফুটবলারের?’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি গোলের ভিডিও পোস্ট করে এমন ক্যাপশনে লুকানো উচ্ছ্বাস, কিছুটা অবিশ্বাস্যও। বাংলাদেশের এক মেয়ের পায়ে অমন গোল দেখার পর বারবার চোখ কচলাতেই হয়, এটা কীভাবে সম্ভব! গোলটিও তাই ইতিমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে ফেসবুকে। অনূর্ধ্ব-১৯ বঙ্গমাতা আন্তর্জাতিক গোল্ডকাপের সেমিফাইনালে মঙ্গোলিয়ার বিপক্ষে ৩-০ গোলের জয়ের ম্যাচে চোখধাঁধানো গোলটি করেছেন বাংলাদেশের মিডফিল্ডার মণিকা চাকমা।
কেমন ছিল গতকাল করা মণিকার সেই গোল? সাজেদার বাড়ানো এরিয়াল থ্রু নিয়ন্ত্রণে নিতে প্রথমে একজনকে গতিতে পেছনে ফেলেছেন বাংলাদেশের নাম্বার ‘৬ ’। দ্বিতীয় ধাপে আরেক ডিফেন্ডারের মাথার ওপর থেকে হেড করে বলটা নিজের সুবিধামতো জায়গায় নিয়েছেন। বিপদ বুঝে মণিকাকে থামানোর জন্য এগিয়ে এসেছিলেন প্রতিপক্ষ দুজন খেলোয়াড়। কিন্তু মণিকা সুযোগ দিলে তো! পেনাল্টি আর্কের ওপর থেকে বাঁ পায়ের জোরালো ভলিতে জালে। প্রতিপক্ষ গোলরক্ষক ঝাঁপ দিয়েও বলের নাগাল না পাওয়ায় কেঁপে ওঠে পোস্টের জাল। সঙ্গে পুরো দেশের আকাশে ছড়িয়ে পড়ে উৎসবের আবির। বাংলাদেশ তো অবশ্যই, দক্ষিণ এশিয়ান ফুটবলের প্রেক্ষাপটে অবিশ্বাস্য এক গোল। তাও আবার অনূর্ধ্ব ১৯ টুর্নামেন্টে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশংসার ফুলঝুরি ফোটাটাই স্বাভাবিক।
দুর্দান্ত গোলের বর্ণনা দিয়েই মণিকার পর্ব শেষ করা যেত। কিন্তু গোল করানোতেও জুড়ি নেই এই প্লেমেকারের। দ্বিতীয়ার্ধে তাঁর চামুচে তুলে দেওয়ার মতো বলের জোগান থেকেই ২-০ করেছেন মার্জিয়া আক্তার। অ্যাটাকিং থার্ডের ওপর থেকে মঙ্গোলিয়ার রাইটব্যাক ও সেন্টারব্যাকের মাঝ দিয়ে মাপা পাস বাড়ালে হাঁ হয়ে যায় প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগ। সাজেদা শুধু বলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দেখেশুনে ঠান্ডা মাথায় বলটি পোস্টে রেখেছেন। নিজে এক গোলের পর করিয়েছেন আরও একটি গোল। ব্যস, ম্যাচসেরার পুরস্কার হিসেবে ৫০০ ডলার ওঠে গিয়েছে তাঁর হাতে।
বাংলাদেশ দলের হৃৎপিণ্ড বলা হয়ে থাকে মণিকাকে। মাঝমাঠে থেকে খেলাটা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে তাঁর বাঁ পা। বলের ওপর দুর্দান্ত নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে চষে বেড়াতে পারেন পুরো মাঠ। ওপরে-নিচে ওঠানামা করে পুরো দলের খেলার সেতুটা গড়ে ওঠে তাঁর পা থেকেই। তিনি যে ‘সামথিং স্পেশাল’, তা ফুটে ওঠে ছোট বলে প্রতি স্পর্শে, প্রতি পাসে, প্রতি ড্রিবলিংয়ে, প্রতিটি ফিনিশিংয়ে। কী দুর্দান্ত অ্যাথলেট। তাঁর সঙ্গে গতিতে পেরে ওঠে না প্রতিপক্ষ। খেলার মাঠটা যদি হয় যুদ্ধের ময়দান, তাতে অন্যতম সেনানী মণিকা। লড়াইয়ের সৌন্দর্যে আর সাফল্যে এক আশ্চর্য যুগলবন্দী এই তরুণী। কিন্তু টুর্নামেন্টের প্রথম দুই ম্যাচে ভালো খেললেও গোলের দেখা পাচ্ছিলেন না। গতকাল গোল করলেন ও করালেন। স্বাভাবিকভাবে মণিকার সেরা ছন্দে ফেরায় ফাইনালের জন্য বাংলাদেশের জ্বালানি গিয়েছে বেড়ে।
গোলটি দেখুন এখানে