১৯৮৬ বিশ্বকাপ হাতে কিংবদন্তি। ম্যারাডোনার অমরত্বের ছবি
১৯৮৬ বিশ্বকাপ হাতে কিংবদন্তি। ম্যারাডোনার অমরত্বের ছবি

বাংলাদেশের মানুষকে ফুটবলপ্রেম শিখিয়েছেন ম্যারাডোনাই

বাংলাদেশে এমন কোনো মানুষ নেই যে জীবনে একবার হলেও ফুটবলে লাথি মারেননি। কিন্তু ফুটবলে লাথি মারা আর ফুটবল প্রেম তো এক কথা নয়!

একেকটা বিশ্বকাপ আসে, বাংলাদেশের কত বাড়ির ছাদে কত পতাকা উড়তে দেখা যায়। কেউ ব্রাজিলের সমর্থক, তাঁর ছাদে বা জানালার গ্রিলে ওড়ে ব্রাজিলের পতাকা।

কেউ আবার আর্জেন্টিনার পতাকা ওড়ান গর্ব নিয়ে। জার্মানি, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, ইংল্যান্ড—আরও কত কত রঙের পতাকা যে  ওড়ে বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে!

বল পায়ে কিংবদন্তি। এই ছবি বাঁধা রইল স্মৃতির ফ্রেমে

কিন্তু ফুটবলপ্রেমী মাত্রই একটা ব্যাপারে একমত হবেন—বাংলাদেশের মানুষের মনে ফুটবলপ্রেমের বীজ রোপন করে দিয়েছেন একজনই—তিনি ডিয়েগো আরমান্ডো ম্যারাডোনা!

ফুটবল সম্রাট পেলের খেলা টেলিভিশনে সরাসরি দেখার সৌভাগ্য এ দেশের ক’জন মানুষের হয়েছে জানা নেই। ১৯৫৮, ১৯৬২ ও ১৯৭০—পেলে ব্রাজিলের হয়ে যে তিনবার বিশ্বকাপ জিতেছেন, বাংলাদেশের ক’জন মানুষেরই বা তা দেখার সৌভাগ্য হয়েছে?

১৯৮৬ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যারাডোনার অবিশ্বাস্য গোল স্মৃতির মণিকোঠায় জায়গা করে নিয়েছে

সেদিক থেকে ফুটবলের কোনো মহানায়কের খেলা সরাসরি টেলিভিশনে দেখার অভিজ্ঞতা এ দেশের মানুষের হয়েছে ম্যারাডোনাকে দিয়েই। ফুটবলের প্রতি গভীর ভালোবাসাটা সেখান থেকেই আসার কথা।

তবে সেই ফুটবলের প্রেমের বীজ তো আর এমনিতেই রোপন হয়নি। ম্যারাডোনার অন্য গ্রহের শিল্পিত ফুটবল শৈলী তো ছিলই। এর সঙ্গে অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে আরও কিছু বিষয়।

ম্যারাডোনা ফুটবল অঙ্গনে নিজেকে বৈশ্বিক তারকা হিসেবে তুলে ধরতে পেরেছেন মূলত ১৯৮৬ বিশ্বকাপে। জাদুকরী ফুটবলের মায়ায় সেবার তিনি ফুটবল বিশ্বকে করেছিলেন মন্ত্রমুগ্ধ।

ম্যারাডোনার ড্রিবলিং ও জাদুকরি সব ছোঁয়া জায়গা করে নিয়েছে অমরত্বের পাতায়

ফুটবলের সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের বসবাস সেই অনাদিকাল থেকে। কিন্তু ছিয়াশি বিশ্বকাপে ম্যারাডোনার মনোমুগ্ধকর ফুটবলের অন্য একটা গুরুত্ব আছে এ দেশের মানুষের কাছে। সেবারই প্রথম বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বকাপ দেখে রঙিন টেলিভিশনে।

একজন ফুটবলার কীভাবে একা কোনো দলকে বিশ্বকাপের মতো একটি বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে টেনে নিতে পারেন, সেই উদাহরণও তো প্রথম ম্যারাডোনাকে দিয়েই দেখেছে ফুটবল বিশ্ব।

সেহির্ও বাতিস্তা, দানিয়েল পাসারেলা, হোর্হে লুইস বুরোচাগা, হোর্হে ভালদানোর মতো খেলোয়াড়ও আর্জেন্টিনার ছিয়াশি বিশ্বকাপ দলে ছিলেন। কিন্তু এটা তো সবারই জানা আর্জেন্টিনা সেবার বিশ্বকাপ জিতেছিল ম্যারাডোনা নামের অতিমানবীয় এক ফুটবলারের নৈপুণ্যে!

ম্যারাডোনার খেলায় বিবশ হতেন প্রতিপক্ষ দলের ডিফেন্ডাররা। এমন ছবি রয়ে যাবে দেশের ফুটবলপ্রেমীদের স্মৃতির পাতায়

সেই বিশ্বকাপে ম্যারাডোনাকে নিয়ে কত স্মৃতিই না ভেসে ওঠে মানুষের মনে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচটিই ধরুন। এ ম্যাচ নিয়ে আলোচনার শেষ কি কখনো হয়েছে!

ম্যারাডোনার জোড়া গোলে ম্যাচটি ২-১ গোলে জিতেছিল আর্জেন্টিনা। সেই ম্যাচে একই সঙ্গে নায়ক এবং খলনায়ক ম্যারাডোনা। খলনায়ক ৫১ মিনিটে করা প্রথম গোলটির কারণে। যদিও তিনি খলনায়ক শুধু ইংলিশদের কাছে।

গোলটি যে ম্যারাডোনা করেছিলেন হাত দিয়ে! হেডের জন্য লাফিয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু মাথা দিয়ে বলের নাগাল পাননি। রেফারিকে আড়াল করে নিজের বাঁ হাত দিয়ে বলটি ঠেলে দেন ইংল্যান্ডের গোলকিপার পিটার শিলটনের জালে।

১৯৮৬ বিশ্বকাপে ম্যারাডোনার এই ছবি স্মৃতির পাতায় যত্নে তুলে রাখবেন বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীরা

ম্যারাডোনার এই গোলটি কখনোই মেনে নিতে পারেননি শিলটন বা ইংল্যান্ডের কেউ। তবে ম্যারাডোনা নিজে এই গোলের নাম দিয়েছিলেন ‌‌'ঈশ্বরের হাতের গোল'! বিতর্কিত এই গোলটির কথা বাদ দিন।

৪ মিনিট পর ম্যারাডোনা ইংল্যান্ডের মাঝমাঠ আর রক্ষণের প্রায় সব খেলোয়াড়কে কাটিয়ে যে গোলটি করেছিলেন সেটিকে বিশ্বকাপের ইতিহাসেরই সেরা গোল মানেন অনেকে। গোলটির পর ইংলিশ ধারাভাষ্য বেরি বলতে বাধ্য হয়েছিলেন, ‌'আপনাকে স্বীকার করতেই হবে যে এটি জাদুকরী।'

জাদুকরী সেই ম্যারাডোনা পশ্চিম জার্মানির বিপক্ষে ফাইনালেও খেলেছেন অসাধারণ ফুটবল। আর সবশেষে বিশ্বকাপ জয়ের পর তাঁর ট্রফি উঁচিয়ে ধরার দৃশ্যটিও ছিল মোহনীয়। যে দৃশ্য এখনো চোখে লেগে আছে বিশ্বজোড়া ফুটবলপ্রেমীদের।