>বলা হচ্ছিল, এবারের বিশ্বকাপের সবচেয়ে বাজে দল হবে স্বাগতিক রাশিয়া। দুই ম্যাচ জিতে সেই ভবিষ্যদ্বাণী কী সুন্দরভাবেই না ভুল প্রমাণ করল তারা!
বিশ্বকাপের স্বাগতিক দেশের দারুণ একটা সুবিধা আছে। আয়োজক হওয়ার সুবাদে তাদের বাছাইপর্বের কঠিন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয় না। বাকি ফুটবল বিশ্ব যখন চূড়ান্তপর্বে জায়গা করে নিতে বাছাইপর্বে ঘাম ঝরায়, তখন তারা দেশ-বিদেশে ঘুরে প্রীতি ম্যাচ খেলে বেড়ায়। এই ম্যাচগুলো খেলেই বিশ্বকাপের প্রস্তুতি সারে স্বাগতিকেরা।
এবারের বিশ্বকাপে স্বাগতিক রাশিয়াও একই অবস্থার মধ্য দিয়ে গেছে। এক কনফেডারেশনস কাপ ছাড়া গত এক বছরে তারা কোনো প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলেনি। সেই ম্যাচগুলোতেও যে তারা খুব ভালো করেছে, তা নয়। গত অক্টোবরের পর থেকে কোনো ম্যাচেই জয় তুলে নিতে পারেনি তারা। এবারের বিশ্বকাপে যত দল খেলছে, তাদের মধ্যে রাশিয়ার ফিফা র্যাঙ্কিং সবার নিচে—৭০তম। জয় না পেলেও ফ্রান্স, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, স্পেনের মতো দলের সঙ্গে প্রীতি ম্যাচ খেলার অভ্যেসটা তাদের বিশ্বকাপে ভালোমতোই কাজে এসেছে।
এখন পর্যন্ত আসরের সবচেয়ে সফল দল তারা। প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবকে ৫-০ গোলে হারানোর পর কাল রাতে মিসরকে হারিয়েছে ৩-১ গোলে। দুই ম্যাচে আট গোল করা রাশিয়াকে অনেকেই বলছেন এই বিশ্বকাপের বিস্ময়।
অথচ, বিশ্বকাপের আগে বেশ অগোছালোই ছিল দলটি। কোচ স্তানিস্লাভ চেরচেশভের কৌশল নিয়ে রাশিয়ার সাবেক কিংবদন্তিদের কেউই সন্তুষ্ট ছিলেন না। চোটে চোটে জর্জরিত রক্ষণ সামলাতে অবসর থেকে ফিরে আসতে হয়েছে ৩৮ বছর বয়সী সেন্টার ব্যাক সের্গেই ইগনাসেভিচকে। সৌদির বিপক্ষে ম্যাচের শুরুতেই পর চোটের কারণে রাশিয়ার অন্যতম সেরা খেলোয়াড় আলান জাগোয়েভের বিশ্বকাপ পড়ে গেছে হুমকির মুখে। অনেকেরই শঙ্কা ছিল, নিজের দেশের মাটিতে রাশিয়া খুবই খারাপ কিছু করবে।
কিন্তু বিশ্বকাপের শুরু থেকেই দুর্দান্ত দলটি। সবার শঙ্কা, ভোজবাজির মতোই পাল্টে দিলেন গোলোভিন-জিউবা-চেরিশেভরা! এর মধ্যেই রাশিয়ার খেলোয়াড়দের নিয়ে টানাটানি শুরু হয়ে গেছে ইউরোপিয়ান ক্লাবগুলোর মধ্যে। মিডফিল্ডার আলেক্সান্দর গোলোভিনকে প্রায় নিজেদের ক্লাবে নিয়েই নিয়েছে জুভেন্টাস, এই বিশ্বকাপে ঝলসে ওঠা উইঙ্গার ডেনিস চেরিশেভকে আবার দলে আনার জন্য রিয়াল মাদ্রিদ সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ তোড়জোড় শুরু করলে অবাক হবেন না যেন!
তবে রুশ দলের এই উত্থানটা যে দুর্ঘটনা নয়, সেটা স্পষ্ট করেই জানিয়েছেন কোচ চেরচেশভ, ‘বিশ্বকাপে টানা দুই ম্যাচ জেতা কিন্তু কোনো দুর্ঘটনা নয়। আমাদের দলটির সমন্বয়ের কারণেই আমরা ম্যাচ জিতেছি।’
২০০২ ও ২০১৪—এই দুই বিশ্বকাপে মোট যত গোল করেছিল রাশিয়া, এবারের আসরেই সেটি ছাড়িয়ে গেছে তারা। ২০১০ সালের বিশ্বকাপ জেতার পথে স্পেন যত গোল করেছিল, এবার দুই ম্যাচেই রাশিয়ার গোল তার চেয়েও বেশি।
কোনো অঘটন না ঘটলে গ্রুপ ‘এ’ থেকে রাশিয়ার দ্বিতীয় রাউন্ড প্রায় নিশ্চিতই হয়ে গেছে। যে জাদু রাশিয়াকে বদলে দিয়েছে, তার প্রভাব বিশ্বকাপের বাকি সময়টাতেও থাকে কি না, এখন দেখার অপেক্ষা সেটিই।