এক মাস আগেও লিগের শীর্ষে ছিল চেলসি। টানা দুই মাস লিগ শীর্ষস্থান ধরে রাখা দলটি হঠাৎ পথ হারিয়েছে। একের পর এক নেতিবাচক ফলে লিগে দ্বিতীয় অবস্থানেই থিতু হয়ে গেছে দলটি। শীর্ষে থাকা ম্যানচেস্টার সিটির সঙ্গে ১১ পয়েন্ট পিছিয়ে আছে দলটিও। আজ তিনে থাকা লিভারপুলের সঙ্গে হারলেই জায়গার অদলবদল হবে টেবিলে।
এমন গুরুত্বপূর্ণ নিজের সেরা দলকেই নামাতে চাইবেন চেলসি কোচ টমাস টুখেল। কিন্তু লিভারপুলের বিপক্ষে ম্যাচের স্কোয়াডে ক্লাব ইতিহাসের সবচেয়ে দামি খেলোয়াড়কেই নাকি রাখেননি। টিমো ভেরনারের ভুলত্রুটি পুষিয়ে নিতে গোলশিকারি রোমেলু লুকাকুকে এই মৌসুমেই কিনে এনেছে চেলসি। গুঞ্জন ছড়িয়েছে, পূর্ণ সুস্থ লুকাকুকে আজ ম্যাচের স্কোয়াডেই রাখেননি টুখেল। কারণ, ম্যাচের আগেই এক সাক্ষাৎকারে উল্টাপাল্টা বকে কোচের ক্রোধ উদ্রেক করেছেন বেলজিয়ান স্ট্রাইকার।
গত মৌসুমে ইন্টার মিলানকে সিরি ‘আ’ জিতিয়েছেন লুকাকু। এই মৌসুমেই তাই দ্বিগুণ বেতন নিশ্চিত করে চেলসিতে এসেছেন এই স্ট্রাইকার। প্রথম তিন ম্যাচে তিন গোল করে দুর্দান্ত শুরু করেছিলেন ১১ কোটি ৫০ লাখ ইউরোর স্ট্রাইকার। চ্যাম্পিয়নস লিগেও প্রথম ম্যাচে গোল পেয়েছিলেন লুকাকু। এরপরই ফর্ম হারিয়ে ফেলেছেন। চেলসির জার্সিতে সব মিলিয়ে ১৮ ম্যাচে মাত্র ৭ গোল তাঁর। এর মধ্যে লিগে সর্বশেষ দুই ম্যাচে ২ গোল করেছেন লুকাকু। অ্যাস্টন ভিলার বিপক্ষে এক গোলের পর একটি পেনাল্টিও এনে দিয়েছেন দলকে। ব্রাইটনের বিপক্ষেও দলের একমাত্র গোল তাঁর।
এমন অবস্থায় চেলসির বিপক্ষে তাঁকে মূল একাদশেই রাখার কথা কোচের। কিন্তু গত সপ্তাহে এক কাণ্ড করে বসেছেন লুকাকু। ক্লাব ও নিজের এজেন্টকে না জানিয়ে স্কাই স্পোর্টসকে বিশাল এক সাক্ষাৎকার দিয়ে বসেছেন। কোচ টুখেলের পদ্ধতির সমালোচনা করেছেন। আর ইন্টার মিলানের প্রতি একটু পরপরই ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন। বলেছেন, পারলে ইন্টারে ফিরে যাবেন।
সাক্ষাৎকার দিয়ে তাই আক্ষরিক অর্থেই কোনো লাভ হয়নি লুকাকুর। কারণ, বর্তমান ক্লাবও যে শাস্তি দিচ্ছে তাঁকে। স্কাই স্পোর্ট ইতালিয়াকে বলেছেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আমি খুশি নই এবং এটাই স্বাভাবিক। কোচ ভিন্ন পদ্ধতিতে খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং আমি হাল ছাড়ব না। আমি কঠোর পরিশ্রম করব এবং পেশাদার আচরণ করব।’
সাক্ষাৎকারে ইন্টার মিলানে ফেরার আশা জানিয়েছিলেন, ‘শারীরিকভাবে আমি ঠিক আছি, আগের চেয়ে বরং ভালোই আছি। দুই বছর ইতালিতে ছিলাম, সেখানে কোচ এবং পুষ্টিবিদদের নিয়ে ইন্টারে অনেক কাজ করেছি। ইন্টার সমর্থকদের কাছে ক্ষমা চাইছি। কারণ, যেভাবে বিদায় নিয়েছি, সেটা অন্যভাবে হওয়া উচিত ছিল। আমি মন থেকেই আবার ইন্টারে ফিরতে চাই। ক্যারিয়ারের শেষ দিকে নয়, বরং সেরা ফর্মে থেকে, যেন আরও অনেক কিছু জিততে পারি।’ যদিও ইন্টার মিলান সমর্থকেরা সেই ভালোবাসা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছেন এক ব্যানার টাঙিয়ে। বিপদের সময় ক্লাব থেকে চলে গিয়ে এখন মায়াকান্না কাঁদতে মানা করে দিয়েছেন তাঁরা।
তিন সপ্তাহ আগে কথা বললেও লুকাকুর সাক্ষাৎকার এমন একসময় ছাপা হয়েছে, যেখানে ক্লাবের বাজে সময় যাচ্ছে। টুখেল প্রথমে বলেছিলেন, এই সাক্ষাৎকারকে পাত্তা দিচ্ছেন না, ‘আমরা এটা পছন্দ করিনি। এর ফলে হট্টগোল হবে, যার কোনো দরকার ছিল না। এটা আমাদের কোনো কাজে আসবে না। আবার এটাও ঠিক, এটা নিয়ে আমরা বাড়াবাড়ি প্রতিক্রিয়াও দেখাব না। আপনারা ভালোভাবেই জানেন এটা কী। কথার একটি অংশ বেছে নিয়ে ভুল বার্তা দেওয়া খুব সহজ। লাইন ছোট করে, শিরোনাম দেওয়া খুব সোজা। পরে দেখা যায়, সে আসলে ওটা বোঝাতে চায়নি।’
লুকাকুকে যদি আজ সত্যি স্কোয়াডে না দেখা যায়, তাহলে বোঝা যাবে, দেরিতে হলেও টুখেল প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন।