ফ্লাইং কিক, চড়-থাপ্পড়ের এক ফুটবল ম্যাচ

কাল ফেডারেশন কাপের ফাইনাল দুই দলের খেলোয়াড়দের মারামারির এক পর্যায়। ছবি: প্রথম আলো
কাল ফেডারেশন কাপের ফাইনাল দুই দলের খেলোয়াড়দের মারামারির এক পর্যায়। ছবি: প্রথম আলো
>ফেডারেশন কাপের ফাইনাল হয়ে গেল মারামারির মধ্য দিয়ে। দেশের ফুটবলে মারামারি বিরল কিছু না থাকলেও শুক্রবার সন্ধ্যায় সেটি বেশ কয়েক জায়গায় রীতিমতো মাত্রা ছাড়িয়েছে।

ফেডারেশন কাপের ফাইনালে গতকাল মুখোমুখি হয়েছিল আবাহনী লিমিটেড ও বসুন্ধরা কিংস। এই মুহূর্তে দেশের সেরা এই দুই দলের লড়াইয়ে সুন্দর ফুটবলের প্রতিশ্রুতি থাকলেও ম্যাচটা শেষ হলো মারামারির মধ্য দিয়ে। ফ্লাইং কিক, চড়-থাপ্পড়—কী না ছিল এই ম্যাচে। দুই দলের চারজন খেলোয়াড়কে লালকার্ড দেখিয়ে মাঠ থেকে বের করে দিতে বাধ্য হয়েছেন রেফারি। ৩-১ গোলে জিতে মৌসুমের প্রথম ট্রফিটা আবাহনীর হলেও এই জয়ের গৌরব অনেকটাই মিইয়ে যাচ্ছে মারামারির ঘটনায়!

মামুন মিয়ার দিকে তেড়ে যাচ্ছেন বসুন্ধরার সবুজ। ছবি: প্রথম আলো

দারুণ একটা সমাপ্তির দিকেই এগিয়ে যাচ্ছিল ম্যাচটি। ৮৮ মিনিটে আবাহনীর সানডেকে থামাতে গিয়ে ফাউল করেন বসুন্ধরার ডিফেন্ডার নাসিরউদ্দিন চৌধুরী। এখান থেকেই শুরু হয় উত্তেজনা। পরক্ষণেই বল দখলের লড়াইয়ে ছিলেন আবাহনীর স্ট্রাইকার নাবীব নেওয়াজ জীবন ও বসুন্ধরার ডিফেন্ডার সুশান্ত ত্রিপুরা। একপর্যায়ে সুশান্তকে ঘুষি মারেন জীবন। পাল্টা জীবনকে লাথি মারেন সুশান্ত। পাল্টা জবাব দিতে অনেক দূর থেকে দৌড়ে এসে সুশান্তকে ফ্লাইং কিক মারেন আবাহনীর ডিফেন্ডার মামুন মিয়া।
পরে মামুন মিয়ার ওপর চড়াও হন বসুন্ধরার তৌহিদুল আলম সবুজ। এই মারামারি দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে দুই দলের কর্মকর্তা ও সহকারীদের মধ্যে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ডাগআউট থেকেও কোচিং স্টাফদের নেমে পড়তে হয় মাঠে, যার রাশ টানতে হাস্যকরভাবে আবাহনীর ম্যানেজার সত্যজিৎ দাস রুপু নিজের দলের ডিফেন্ডার মামুন মিয়াকে চড় মেরে বসেন। ম্যাচ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সীমানাপ্রাচীর টপকে মাঠে ঢুকে পড়েন দর্শক। সবকিছু মিলিয়ে মনে হচ্ছিল পাড়ার কোনো খেলা শেষ হলো। ফুটবল খেলায় খেলোয়াড়-কর্মকর্তারা সারা দুনিয়াতেই মাঝেমধ্যে মাথা গরম করেন, কিন্তু কাল যা হয়েছে, সেটি রীতিমতো ন্যক্কারজনক।

বসুন্ধরার কোচ ও কর্মকর্তারা মাঠে নেমে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করছেন। ছবি: প্রথম আলো

মাঠে নেমে কেন নিজ দলের খেলোয়াড়কে চড় দিলেন? এমন প্রশ্নের জবাব খোঁজা হয়েছিল আবাহনীর ম্যানেজার সত্যজিৎ দাস রুপুর কাছে। তিনি বিষয়টার ব্যাখ্যা দিয়েছেন, ‘আমার নিজের দলের খেলোয়াড় মামুন মিয়ার মাঠের আচরণটা আমার ভালো লাগেনি। আর ওকে কেউ থামাতে পারছিল না। ফলে চতুর্থ রেফারির অনুমতি নিয়ে আমি মাঠে নেমে ওকে শাসন করি।’
এই ঘটনায় জড়িতদের কী শাস্তি হবে? জানতে চাইলে বাফুফে সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ প্রথম আলোকে বলেন, ‘রেফারি ও ম্যাচ কমিশনারের রিপোর্টের ভিত্তিতে দুই ক্লাবের কাছে জবাব চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আগামীকালের মধ্যে এই চিঠির জবাব দিতে হবে। জবাব পেলে ডিসিপ্লিনারি কমিটি এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবে। স্বাধীনতা কাপের আগেই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তবে ম্যাচের চতুর্থ রেফারি সুজিত ব্যানার্জি জানালেন নিয়মে না থাকলেও কিছু ক্ষেত্রে পরিস্থিতি বিবেচনা করে মাঠে ঢুকতেই পারেন কর্মকর্তারা, ‘এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটবে, কে জানত। ওই পরিস্থিতিতে আবাহনীর ম্যানেজার আমার কাছে অনুমতি চেয়েছিল, আমি চুপই ছিলাম। কিন্তু মাঠের পরিস্থিতি তো অন্য রকম হয়ে যাচ্ছিল। নিয়মানুযায়ী সে মাঠে নামতে পারে না। তবে পরিস্থিতির বিচারে ঘরোয়া ফুটবলে সুবিধার জন্য মাঠে কেউ কেউ যেতে পারেন।’