এ যেন সাইক্লোন! চারপাশে তাণ্ডব চলছে, আর ঝড়ের কেন্দ্রে সব ঠান্ডা, সুনসান। আগস্টের শেষ দিকে দলবদলের বাজারে তোলপাড় ফেলে দিয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ ও পিএসজি। কিলিয়ান এমবাপ্পকে কিনতে চেয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল রিয়াল। ওদিকে তাঁকে ছাড়তে কোনোভাবেই রাজি হয়নি পিএসজি। আর যাকে নিয়ে এত আলোচনা সেই এমবাপ্পে একটা টু শব্দও করেননি।
অবশেষে সে সাইক্লোন তার রূপ দেখাল। আর তাতে যা হচ্ছে, তাতে তছনছ হয়ে যাচ্ছে সব। ফ্রান্সের দুটি সংবাদমাধ্যমের কাছে আলাদা দুটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন এমবাপ্পে। গতকাল আরএমসি স্পোর্তকে দেওয়া সাক্ষাৎকারটির কিছুটা প্রকাশিত হয়েছিল। তাতেই আলোচনা জমে উঠেছিল। আর আজ লে’কিপে প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে সেই দলবদল নিয়ে কথা তো বলেছেনই। এমনকি ফ্রান্স দলেও তাঁর ভূমিকা নিয়ে কথা বলেছেন। ফ্রান্স দল থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্তও নাকি নিয়ে ফেলেছিলেন এমবাপ্পে।
ইউরোতে খুবই হতাশ করেছেন এমবাপ্পে। বহুদিন পর জাতীয় দলে ফেরা করিম বেনজেমা আলো ছড়িয়েছেন, কিন্তু সে আলোতে ম্লান হয়ে ছিলেন এমবাপ্পে। তবু একটা সুযোগ এসেছিল তাঁর সামনে। শেষ ষোলোর টাইব্রেকারে দলের শেষ পেনাল্টি নেওয়ার দায়িত্ব পেয়েছিলেন এমবাপ্পে। দলকে টিকিয়ে রাখতে হলে লক্ষ্যভেদ করতে হবে, এমন চাপের মুখে ভেঙে পড়েছিলেন এমবাপ্পে। তাঁর নেওয়া দুর্বল শট ঠেকিয়ে দিয়েছেন সুইস গোলকিপার ইয়ান সোমের।
এ ঘটনার পর সংবাদমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম-সবখানেই সমালোচনা হয়েছে এমবাপ্পের। সে ঘটনার পর ফ্রান্স দল থেকে সরে যাওয়ার চিন্তাও এসেছে এমবাপ্পের মাথায়। লে’কিপে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘ফ্রান্স জাতীয় দলে খেলার জন্য আমি কখনো একটা ইউরোও নিইনি এবং জাতীয় দলে সব সময় অর্থ ছাড়াই খেলি। আর আমি কখনো দলের সমস্যার কারণ হতে চাইনি। কিন্তু যখনই মনে হলো আমি দলের জন্য সমস্যা হয়ে উঠছি এবং মানুষের কাছে মনে হচ্ছিল আমি সমস্যা হয়ে উঠেছি...আমার কানে এসেছে, আমার অহংকারই দলের হারের কারণ, আমি নাকি দলে বেশি মনোযোগ কেড়ে নিচ্ছি এবং আমি না থাকলে নাকি দল জিতত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ফ্রান্স জাতীয় দল এবং আমাকে ছাড়া ফ্রান্স দল যদি সুখী থাকে, তাহলে তাই হোক (আমি চলে যাব)।’
শুধু যে চিন্তাই করেছেন তা নিয়ে, এমন নয়। ব্যাপারটা যে কত গুরুত্ব নিয়ে দেখেছেন সেটাও জানা গেল পরের কথায়, ‘আমি ফেডারেশন সভাপতির (নোয়েল লে গ্রাত) সঙ্গে দেখা করে কথা বলেছি। তাঁর কাছে যে আমার অভিযোগ ছিল পেনাল্টি থেকে গোল করতে না পারায় আমাকে যে অপমান করা হলো এবং “বানর” (বর্ণবিদ্বেষী গালিতে ব্যবহৃত হয়) বলে ডাকা হলো, তা নিয়ে। এটা কখনোই মিলিয়ে ফেলা যাবে না। আমি কখনোই পেনাল্টি নিয়ে অভিযোগ করিনি। কারণ, পেনাল্টিটা আমিই মিস করেছি।’
পেনাল্টি থেকে গোল করতে না পারার দায় মেনে নিয়েছেন এমবাপ্পে। ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে মুহূর্ত ছিল এটা। সে সময়টা নিয়ে তাঁর একটাই আক্ষেপ, ওই মুহূর্তে আরেকটু সহমর্মিতা দরকার ছিল। কিন্তু সেটা পাননি, ‘আমি হয়তো আরেকটু পেতে পারতাম (মাঠে সতীর্থদের সমর্থন)। কিন্তু আমি কখনো সেটা চাইতে যাব না, কারণ দুটো এক জিনিস না। হ্যাঁ, পেলে ভালো লাগত। কিন্তু নিজের ভুলের পর অন্যের কাছে সমর্থন চাইতে যাব না। তবে এ নিয়ে খুব বেশি ভাবার কিছু নেই। ওই মুহূর্তে সবাই বাদ পড়ে হতাশ ছিল। পরে ড্রেসিংরুমে, সবাই আমাকে দেখতে এসেছিল।’
পেনাল্টিতে গোল করতে না পারার চেয়েও যেভাবে তাঁকে অপদস্থ করার চেষ্টা হয়েছে, সেটায় মন বেশি খারাপ হয়েছিল এমবাপ্পের। তবে সে সময়টা পেরিয়ে এসেছেন।। দলের হয়ে বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব খেলছেন আবার। এই সপ্তাহেই দেখা যাবে ফ্রান্স দলে, ‘আমাকে সবচেয়ে বেশি ধাক্কা দিয়েছিল যা, পেনাল্টির জন্য আমাকে “বানর” বলে ডাকা। এ ব্যাপারেই আমি সমর্থন চেয়েছিলাম। আমি বাঁ দিকে শট নিয়েছি আর সোমের সেটা ঠেকিয়ে দিয়েছেন—সে ঘটনায় নয়। এখন ওসব পেরিয়ে এসেছি আমি। জাতীয় দলের জন্য আমার অনেক ভালোবাসা।’